এক লম্পটের লাম্পট্য যেভাবে রুখল তারুণা
ই-মেইলে কেভিন এসব ছবি ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে লিখলেন, তারুণা যদি তার আরও নগ্ন ভিডিও পাঠায়, তবেই কেবল তিনি নিবৃত্ত হবেন।তারুণা আসওয়ানি ভারতীয় নাগরিক। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। সেখানে ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করেন। এই ই-মেইল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এফবিআই’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ দায়ের করলেন।
কিন্তু এফবিআই কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগেই আবার কেভিন জনের কাছ থেকে হুমকি এল। এবারের ই-মেইলে বলা হল, কথামতো আরও নগ্ন ভিডিও তুলে না পাঠালে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে থাকা সবার কাছে তারুণার নগ্ন ভিডিও পাঠিয়ে দেয়া হবে। তারুণা আসওয়ানি তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তিনি কি করবেন।
তিনি জানান, কেউ আমার জন্য কিছু একটা করবে, এটা ভেবে বসে থাকতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম, আমার নিজেকেই কিছু একটা করতে হবে। শিগগিরই। এই লোকটার কথা শুনে মনে হচ্ছে, সে সিরিয়াস। আমার ছবি ফাঁস করে দেবে। আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আমি শলাপরামর্শ করলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, এর বিরুদ্ধে আমি প্রকাশ্যেই লড়াই করব।
ফেসবুকে একটা পোস্টে তারুণা পুরো কাহিনী বর্ণনা করে লিখলেন, তিনি কেভিন জনের ব্লাকমেলিংয়ের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।
শুধু তাই না, তিনি কেভিন জনের পাঠানো ই-মেইল, ই-মেইল ঠিকানা, সব প্রকাশ করে দিলেন। তারুণার ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার হল চার হাজারবার। তিনি বলেন, ‘আমার নগ্ন ভিডিওটি হয়তো খুবই বিব্রতকর ছিল আমার জন্য। কিন্তু তারপরও আমি এই লোকের ব্লাকমেলিংয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।’
তারুণা তার ফেসবুকে লিখলেন, ‘আমি এই কাজ করছি যাতে আমার মতো পরিস্থিতির শিকার আরও যেসব মেয়ে, তারাও যেন এভাবে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পায়।এই ফেসবুক পোস্টের পর অভূতপূর্ব সাড়া পেলেন তারুণা। বহু মানুষ তার সাহসের প্রশংসা করে তাকে বার্তা পাঠালেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বহু মেয়ের কাছ থেকে আমি অনেক মেসেজ পেয়ে বুঝতে পারলাম আমার মত অবস্থায় আছে আরও অনেকে। তখন আমার মনে হল, আমি শুধু নিজের জন্য এই লড়াই করছি না, এই লড়াই আমার মতো আরও অনেক মেয়ের জন্য। ফেসবুকে বেশিরভাগ মেসেজই ছিল ইতিবাচক। তবে কিছু মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করতেও ছাড়েনি।তারুণা বলেন, ‘কেউ কেউ আমাকে ‘খারাপ মেয়ে’ বলে গালি দিয়েছিল। কেউ কেউ বলেছিল আমি খ্যাতির লোভে এই কাজ করেছি। অনেকে প্রশ্ন করেছে, আমি কেন এ রকম ছবি ক্লাউড অ্যাকাউন্টে রেখেছি?’
তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার জীবন সঙ্গী যদি বহুদূরে থাকেন, তখন তার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য এ রকম ছবি রাখার মধ্যে আমি খারাপ কিছু দেখি না।তারুণা আসওয়ানি তার বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পূণ সমর্থন পেয়েছেন এই কাজে। মুম্বাইতে নিজের বাবা-মা পরিবারও তাকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গেলেন। তারা অসহায় বোধ করছিলেন। তারা যখন আমার কাছ থেকে বহুদূরে এবং এই সংকটে আমার পাশে থাকতে পারছেন না, তখন এ রকম বোধ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এ্ই ব্লাকমেলিংয়ের বিরুদ্ধে যে অবস্থান আমি নিয়েছি, তার প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছিলেন তারা। তারুণা মনে করেন, ভারতের মেয়েদের এখন সময় এসেছে লোকলজ্জার ভয় কাটিয়ে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন, আপনি সঠিক, তাহলে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলুন।
এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং ভারতের মুম্বাই পুলিশ কেভিন জনকে খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করেছে।
তবে তারুণা ফেসবুকে বিষয়টি প্রকাশ করার পর কেভিন জনের কোনো পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। তারুণার সঙ্গেও সে আর কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেনি।