• বৃহস্পতিবার , ২৮ নভেম্বর ২০২৪

এক বছরের নিষেধাজ্ঞা বর্ধিত হারে ভূমি কর আদায়ে


প্রকাশিত: ৭:০৩ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৩ বার

হাইকোর্ট রিপোর্টার :  বর্ধিত হারে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ওপর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে lllহাই কোর্ট। বরিশালের বর্ধিত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) প্রত্যাহার আন্দোলনের আহ্বায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদের এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।

২০১৫ সালের ৩০ জুন ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ-১৯৭৬ এর ৩ ধারার (১) (এ) অনুসারে ভূমি উন্নয়ন কর বৃদ্ধি করে গেজেট জারি করেন তৎকালীন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এলাকা ও ধরন ভেদে কর ও ফি বাড়ানো হয় দুই থেকে নয়গুণ পর্যন্ত।

কর হ্রাস-বৃদ্ধিতে সরকারের এ ক্ষমতা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।” সংসদে না গিয়ে সরকারকে কর বাড়ানো-কমানোর যে ওই আইনে দেওয়া হয়েছে, তা চ‌্যালেঞ্জ করে গতবছর একপি রিট আবেদন করেন দেওয়ান আব্দুর রশিদ।

ওই আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি জেএন দেব চৌধুরীর বেঞ্চ ২০১৬ সালের ২২ অগাস্ট একটি রুল জারি করে।১৯৭৬ সালের ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশের ৩(১এ) ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনায় বাতিল করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়  ওই রুলে। আইন সচিব, ভূমি সচিব, অর্থ সচিব ও বরিশালের জেলা প্রশাসককে এর জবাব দিতে বলা হয়।

ওই রুলের নিষ্পত্তির অপেক্ষার মধ‌্যেই মঙ্গলবার সম্পূরক আব্নে করেন রিটকারী রশিদ।আবেদনে বলা হয়, বর্ধিত হারে কর দেওয়ার জন‌্য তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার ও মালামাল জব্দেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

আবেদনকারীর যুক্তি, মামলা যেহেতু এখনও নিষ্পত্তি হয়নি, এই অবস্থায় ভূমি মন্ত্রণালয় কর আাদয় করতে পারে না। আদালতে রশিদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। শুনানি শেষে হাই কোর্ট বর্ধিত হারে কর আদায়ের ওপর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয় বলে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান।

মূল রিট আবেদনের যুক্তিতে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে পাওয়া ক্ষমতায় সংসদ যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে আদেশ, বিধি, রেগুলেশনস প্রণয়নের ক্ষমতা দিতে পারে। কিন্তু সংবিধানের ৮০, ৮১ ও ৮৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে অর্থনৈতিক বিষয়ের কর্তৃত্ব কেবল সংসদের হাতেই থাকবে। তাই ভূমি করের হার বদলে দেওয়ার কর্তৃত্ব বিবাদীদের (সরকার) নেই।

“ভূমি উন্নয়ন কর অর্ডিন্যান্স -১৯৭৬ অনুসারে সরকার দাপ্তরিক প্রজ্ঞাপন দ্বারা ভূমি কর বাড়াতে বা কমাতে পারেন। কিন্তু অর্থ বিল সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করতে সংবিধানের ৮১, ৮২ ও ৮৩ অনুচ্ছেদে বাধা রয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর ‘মানি বিলের’ অন্তর্ভুক্ত। তাই  এ অধ্যাদেশের ৩(১এ) ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”এই যুক্তি দেখিয়ে রিট আবেদনে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয় কর আরোপে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনতে ‘পারে না’।

“কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় সংসদে কোনো বিল না এনেই ওই অধ্যাদেশ অনুসারে করের হার বদলে দিয়েছে। সংসদে আইন করা ছাড়া কোনো কর সংগ্রহ করা যাবে না বলে ৮৩ অনুচ্ছেদে বলা হলেও করের হার বাড়িয়ে সেটাই করা হচ্ছে।”

জ্যোর্তিময় বড়ুয়া রুল জারির সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশের ৩ ধারার (১) (এ) তে বলা হয়েছে- সরকার অফিসিয়াল গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর পুনর্বিবেচনা, বর্ধিত কিংবা হ্রাস করতে পারবে। কিন্তু সংবিধানের ৮৩ অচ্ছেদ অনুসারে সংসদের আইন বা কর্তৃত্ব ছাড়া কোনো কর আরোপ করা যাবে না।

“অথচ ২০১৫ সালের ৩০ জুন ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ-১৯৭৬ এর ৩ ধারার (১) (এ) অনুসারে ভূমি উন্নয়ন কর বৃদ্ধি করে গেজেট জারি করেন তৎকালীন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। কর হ্রাস-বৃদ্ধিতে সরকারের এ ক্ষমতা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”