এক অনন্যসাধারণ প্রতিভা!
এস রহমান : একেই বলে পিতার প্রতি সন্তানের অসীম ভালোবাসা এবং সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসা। ছেলের অজান্তে বাবা চিঠি লিখে সন্তানকে স্মরণ করে দিয়েছেন তাঁর জন্মদিনের কথা। পিতা বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে এমনি বরকতময় এক দিনে আমাদের কোল-বুকে এসেছিলে তুমি, সেই থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছো, নিজেকে বিকশিত করেছো নিত্যনতুন উৎকর্ষে। অভাবিত উচ্চতার শিখরে ধাবমান থেকে পরিবার পরিজনসহ সকলকে গৌরব সিক্ত করে চলেছো প্রতিনিয়ত।’
বাবার চিঠি পেয়ে আবেগে আপ্লুত প্রিয় সন্তান। তিনি লিখলেন, ‘ আমি আজ কাঁদতে কাঁদতে বলতে চাই, আব্বা, আপনার গায়ের গন্ধ আমি অনেক ভালোবাসি, আপনার শরীরের উষ্ণতা আমি এখনও অনুভব করি। আম্মা, আপনার চুলের ঘ্রাণ আমাকে এখনও বিমোহিত করে। আমি আপনাদের একদম কাছে, একদম গা ঘেঁষে বসে থাকতে চাই ‘।
আজ ছিল যোগ্য পিতার এক যোগ্য সন্তানের জন্মদিন যিনি অমূল্য পরশপাথরস্বরূপ। যার পরিচয় গুণে তিনি মহিমান্বিত। যার ছোঁয়ায় উন্নতির চরম শিখরে দাড়িয়ে সৌরভ ও সুনাম ছড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মেধা মনন প্রজ্ঞা ও কর্মদক্ষতায় প্রতিষ্ঠানগুলো রূপ পেয়েছে হিমাদ্রীর মতো অঢেল ও অজেয়।
তিনি লিখলেন-প্রিয় আব্বু-আম্মু,
আশা করি, আপনারা এখন কানাডায় সহি-সালামতে পৌঁছেছেন এবং দুজনেই একসাথে খুব ভালো সময় পার করছেন। একটি খোলা চিঠির মাধ্যমেই কিছু মনের কথা শেয়ার করছি। বাবা-মার হাতের লেখার প্রতিটা অক্ষর খুবই প্রিয় হয় সন্তানদের, বিশেষ করে আমার বাবা-মা দুজনের হাতের লেখা প্রায় কাছাকাছি।
বাবার প্রথম পেশা শিক্ষকতা, তারপর বই প্রকাশনায় এসেছেন, আর মা কুমিল্লা উইমেনস্ কলেজের সকলের প্রিয় মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। আর এ কারণেই তাদের কাছে আমার আদর্শলিপি আর হস্তাক্ষরের হাতেখড়ি। সাধারণত বাবা-মায়ের লেখা বর্ণগুলো সন্তানদের কাছে খুব চেনা আর খুব ভালবাসারই হয়ে থাকে।
এই মুহূর্তে আমি পৃথিবীর সব থেকে দামি এক টুকরো কাগজ হাতে নিয়ে অবাক হয়ে, আপনাদের কোলজুড়ে পৃথিবীতে আগমনের আনন্দে কাঁদছি। মনে হয়, ঠিক এভাবেই কেঁদেছিলাম প্রথম চোখ মেলে পৃথিবীর আলো দেখে।
আমার বাবা, যাকে বছরে দু’বার ভালো করে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হয় দুই ঈদে, আর খুব প্রয়োজন বা ব্যবসায়িক ভালো-মন্দ ছাড়া কোনো ব্যক্তিগত কথা সরাসরি হয় না বললেই চলে। তাঁর মুখ থেকে নিজের জন্মদিনে হাততালি দিয়ে বা সামনা-সামনি থেকে “শুভ জন্মদিন” অথবা “হ্যাপি বার্থডে”র উইশ করা বা শোনার কথা চিন্তা করাটাও আমাদের উভয়ের জন্যেই একটু অস্বস্তিকর বলে মনে হয়।
হয়তোবা একটু ধর্মীয় বা কনজারভেটিভ মাইন্ডেড বলেই, আমি দেখেছি, পশ্চিমারীতি বলে মনে করে একটু এড়িয়ে চলেন অথবা লজ্জা পান। কিন্তু বাবা-মাদের যত বয়স হয় তারা ততই সন্তানদের আরও বেশি করে ভালবাসতে শুরু করেন। এর প্রমাণ হলো, উনারা দু’জনেই লজ্জা কাটিয়ে মুখে “তোকে আমরা অনেক অনেক ভালবাসি রে” এটা না বলে ঠিক তাদের মতো করে, তাদের ভাষাতেই বোধহয় কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন।
ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললেন “তুই আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন”। আর এই লাজুকতার ব্যাপারে আমিও কম নই তাদের থেকে। আমার মনে পড়ে না আমি আমার বাবাকে কখনও তার দেয়া সব কিছুর জন্য সবসময় “ধন্যবাদ” ব্যক্ত করেছি।
আমি আজ যতদূর সাফল্যর পথ পাড়ি দিয়েছি তাঁর পুরোটাই তাদের দেয়া ‘স্বাধীনতা’র অবদান। আমি “বড়ছেলে” কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে আমার অজান্তেই নিজের পায়ের নিচে শক্ত ভিত তৈরি করতে শক্তি জুগিয়েছেন, খারাপ সময়েও তারা আমাকে হার মানতে দেয়নি, বিশ্বাস করেছেন আমাকে, ভরসা রেখেছেন আমার উপর। তাদের দোয়া আর শাসন আমাকে আজ এতদূর নিয়ে এসেছে।
আমি আজ কাঁদতে কাঁদতে বলতে চাই, আব্বা, আপনার গায়ের গন্ধ আমি অনেক ভালাবাসি, আপনার শরীরের উষ্ণতা আমি এখনও অনুভব করি। আম্মা, আপনার চুলের ঘ্রাণ আমাকে এখনও বিমোহিত করে। আমি আপনাদের একদম কাছে, একদম গা ঘেঁষে বসে থাকতে চাই; ঠিক ছোটবেলায় যেভাবে থাকতাম। আপনাদের থেকে মন ভরে আদর নিতে এখনও ইচ্ছে করে। কিন্তু এই পৃথিবীটার অদ্ভুত কিছু নিয়মে হয়তোবা এমন কিছুই হবে না। তাই আপনাদের আমি “অনেক অনেক ভালোবাসি” এটাও আমার ফেসবুকে লিখে বলতে হচ্ছে- আমাকে ক্ষমা করবেন।
পুনশ্চ; আব্বু, আপনার হাত কাঁপলেও, আপনার হাতের লেখার মতো আজও লিখতে পারি না। আর আম্মু, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো এই চিরকুটটি যতদিন বেঁচে থাকব, আমার পরশপাথর হয়ে থাকবে। ইতি,
আপনাদের লাজুক সন্তান!
উল্লেখ্য আজ শনিবার ছিল বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠান অমিকন গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জি.মেহেদী হাসানের শুভ জন্মদিন। আজকের এই দিনে তিনি তাঁর পিতামাতার ঘর অালোকিত করে পৃথিবীতে এসেছিলেন। দিনটি ঘটা করে পালন করেছে গ্রুপের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। জাতিরকন্ঠের পাঠকদের জন্যে একজন যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তানের জন্মদিনের এই না-বলা কথাগুলো আমরা তুলে ধরলাম। বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান লেকচার পাবলিকেশন্স লি. কোম্পানির সম্মানিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. শহিদুল ইসলামের সুযোগ্য উত্তরসূরি তিনি।