• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

একাত্তরের খলনায়ক মীর কাসেমের ফাঁসি


প্রকাশিত: ১১:২৬ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  একাত্তরের খলনায়ক যুদ্ধপরাধী একাত্তরের নৃশংস হত্যাকারী বাহিনী আলবদর নেতা ও জামায়াতের 111mir-kasem.--www.jatirkhantha.com.bdঅর্থ জোগানদাতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে কাশিমপুর কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে বলে আইজি প্রিজনস বি. জে. সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ষষ্ঠ অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হলো।

এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে গেল দেশ। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এটি ফাঁসি কার্যকরের ষষ্ঠ ঘটনা।

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া একাত্তরের ভয়ংকর খুনে বাহিনী আলবদর নেতা মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেমড সেলে ছিলেন মীর কাসেম। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাশিমপুর কারাগারে এই প্রথম কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের নির্বাহী আদেশ কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর পরই ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

সকাল থেকে কাশিমপুর কারাগারের চারপাশে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পোশাকে ও সাদাপোশাকে কাজ করছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা ও গাজীপুরে ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে সন্ধ্যায় মীর কাসেমের সঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষ দেখা করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এসময় মীর কাশেমের  স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন জাতিরকন্ঠকে বলেন, তিনি (মীর কাসেম) আমাকে বলেছেন, তাঁকে ফাঁসির কথা জানানো হয়েছে। মানিকগঞ্জে তাঁকে দাফন করা হবে। মীর কাসেম শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে আয়েশা খাতুন বলেন, শেষ মুহূর্তেও ছেলের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় আক্ষেপ করেছেন তিনি।

মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন গত মঙ্গলবার খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সকালে এই রায় ঘোষণার পর বিকেলেই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এর মধ্য দিয়ে আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপের ইতি ঘটে। রিভিউ খারিজের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর এই কেন্দ্রীয় নেতার দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়।

কে এই খলনায়ক মীর কাশেম

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা মীর কাসেম একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি। ট্রাইব্যুনালের রায় অনুসারে, একই সঙ্গে তিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান ছিলেন। তাঁর নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকার ডালিম হোটেলে স্থাপিত হয় আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতনকেন্দ্র।

একাত্তরে চট্টগ্রামে এই ডালিম হোটেলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন আলবদর নেতা মীর কাসেম আলী। মুক্তিযুদ্ধের সময় ডালিম হোটেল মানুষের কাছে পরিচিতি পায় হত্যাপুরী হিসেবে, আর নৃশংসতার জন্য মীর কাসেমের পরিচয় হয় ‘বাঙালি খান’।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম বদল করে ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। মীর কাসেম ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ওই সময় থেকে তিনি জামায়াতের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে দলটির অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে শুরু করেন।

১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এ-দেশীয় পরিচালক হন। এ ছাড়া তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য। ধীরে ধীরে তিনি জামায়াতের অর্থের অন্যতম জোগানদাতায় পরিণত হন।

যেভাবে পাকরাও হন ওই খলনায়ক

জামায়াতের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুটি অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির আদেশ ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। চলতি বছরের ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার (১১ নম্বর অভিযোগ) দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। অন্য ছয়টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড বহাল থাকে। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় ৬ জুন প্রকাশিত হয়। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম। এই রিভিউ আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়।

যে কারণে ফাঁসি হলো-
আপিল বিভাগের রায়ে ১১ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এই অভিযোগের বর্ণনা অনুসারে, ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যেকোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলেও আরও পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশসহ তাঁর মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।