• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

একটি চিরকুটে ধরা পড়ল ৪ খুনী


প্রকাশিত: ১:১৩ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৯২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : লাশের অদূরে পানিতে ভাসা একটি মোবাইল নম্বরের চিরকুটের সূত্র ধরে ধরা পড়ল চার খুনী। রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে গত সোমবার ভোরে ভাসছিল অজ্ঞাত এক যুবকের গলিত লাশ। লাশের অদূরে লেকের কিনারে ভাসছিল মোবাইল নম্বরের চিরকুট। ওই নম্বরের সূত্র ধরে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় এবং তাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার খুনীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তিনটি পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য দেওয়া দুই লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় আজিজুল ইসলাম (২৪) কে। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। আমেরিকা প্রবাসী বাবার একমাত্র ছেলে তিনি।পুলিশ জানায়, লাশটি পচে-গলে গিয়েছিল। এটি কার লাশ তা চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। আঙুলের ছাপও নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ওই মোবাইল ফোন নম্বরটির সূত্র ধরে পুরো খুনের বিষয়টি উদঘাটন করা হয়।নিহত ওই যুবকের নাম আজিজুল ইসলাম মাকে নিয়ে থাকতেন চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ এলাকায়। পড়ালেখা শেষে তার কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। পরিচিতজনদের পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং এ সহায়তা করতেন তিনি।

তাঁকে হত্যার অভিযোগ গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, গুলশানের দ্যা গ্রোভ রেস্টুরেন্টের এক্সিকিউটিভ শেফ মো. আহসান উল্লাহ (৩০), ওই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী মো. তামিম ইসলাম (২৭), পাসপোর্ট অফিসের দালাল মো. আলাউদ্দিন (৪৬) এবং যে গাড়িতে করে আজিজুলের লাশ হাতিরঝিলে এনে ফেলা হয় সেই গাড়ির চালক আবদুর রহিম। আজিজুলের লাশ উদ্ধার করা হয় সোমবার সকালে। আর মঙ্গলবার রাতে এই চারজনকে খিলক্ষেতের উত্তরপাড়া ও হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আহসান গতকাল বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের তিনটি পাসপোর্টের নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য গত ১২ আগস্ট আজিজুল ঢাকায় আহসানের কাছে আসেন। আলাউদ্দিন বিষয়টি জানতে পেরে আহসান ও আজিজুলকে মহানগর আবাসিক এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যান। দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশোধন করে দেওয়ার জন্য আলাউদ্দিনকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং আহসানকে এক লাখ টাকা দেন আজিজুল। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল ফারুক জাতিরকন্ঠ কে বলেন, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের একজন উচ্চমান সহকারী পদমর্যাদার ব্যক্তিকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজ করাতেন আলাউদ্দিন। আজিজুলের দেওয়া তিনটি পাসপোর্ট সেই ব্যক্তিকে দিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা করে দিতে পারেননি তিনি। আজিজুল পাসপোর্ট তিনটি সংশোধনের জন্য চাপ দিলে এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নেন আহসান ও আলাউদ্দিন। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেও তারা কাজটি করতে পারেননি। আজিজুল তখন আহসান ও আলাউদ্দিনের কর্মস্থলে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ দেওয়ার হুমকি দেন। চাকরি হারানোর ভয়ে তখন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আলাউদ্দিন ও আহসান।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আহসান বলেছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১০ অক্টোবর তারা আজিজুলকে ঢাকায় আসতে বলেন। ওই দিন রাত ১১ টার দিকে আজিজুল ঢাকায় পৌঁছালে আহসান তাকে খিলক্ষেত উত্তরপাড়ায় তার বাসায় নিয়ে যান। খাবারের সঙ্গে তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান আহসান। রাত দেড়টার দিকে ঘুমন্ত আজিজুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। এরপর তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে বেডশিট, মশারি ও পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ফেলেন। মুঠোফোনে বিষয়টি তিনি আলাউদ্দিনকে জানান। নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে আলাউদ্দিন ওই সময় সিলেটে অবস্থান করছিলেন। সব কাজ করাচ্ছিলেন আহসানকে দিয়ে।

পুলিশ জানায়, আজিজুলকে হত্যার পর আহসানের পাশের রুমে থাকা তার রেস্টুরেন্টের সহকর্মী তামিম আকস্মিকভাবে সেখানে চলে আসেন। আহসান তাকে বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য অনুরোধ করলে তামিম রাজি হন এবং আজিজুলের লাশ সুবিধাজনক স্থানে ফেলে দিতে আহসানকে সাহায্য করতে সম্মত হন। ১১ অক্টোবর লাশ বিছানার নিচে রেখে আহসান ও তামিম রেস্টুরেন্টে কাজ করতে চলে যান। সেখান থেকে একসঙ্গে ফিরে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আলাউদ্দিনের নির্দেশে তার নোয়া গাড়িতে করে লাশটি ফেলে দেওয়ার জন্য রওনা হন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আবদুর রহিম। আজিজুলের লাশ তারা হাতিরঝিলে ফেলে যান।ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ জাতিরকন্ঠ কে বলেন, ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে যাতে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা না যায় সে জন্য আজিজুলের হাতের আঙুল বিকৃত করার পাশাপাশি মুখমণ্ডলও বিকৃত করা হয়।