উপ মহাদেশে ভয়াবহ ভূকম্পনে কাঁপল দেশ-ঢাবি শিক্ষার্থী-অন্তঃসত্ত্বাসহ আহত ৭০
বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভূকম্পন অনুভূত হয়। সাভারে বিভিন্ন ভবন থেকে নামতে গিয়ে ৪০ জন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে কয়েকটি ভবন হেলে পড়েছে বলে জানা গেছে। আতঙ্কে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।
জানা গেছে, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়িতে ঢাবি শিক্ষার্থী, অন্তঃসত্ত্বাসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। আহতরা হলেন- বৃষ্টি আক্তার (১৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারিকুল ইসলাম ওরফে তারেক (২৫), অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ নাসরিন আক্তার (৩৮) ও মো. সাঈদ। এদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, নাসরিন আক্তার ও মো. সাঈদের অবস্থা আশঙ্কাজক। এদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া আমাদের প্রতিনিধিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ২৬ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতির তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রামে দু’একটা ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আমাদের লোকজন যাচ্ছে। তারা সেখান থেকে রিপোর্ট পাঠালে পরে জানানো হবে।
অপরদিকে, একই সময়ে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানেও ভূমিকম্পন অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ভূকম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমার। সেখানে ৬ দশমিক ৯ মাত্রায় ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, নাটোর, নেত্রকোনা, রাজশাহী, ফেনী, সিলেট, ঝিনাইদহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, নীলফামারী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, মুন্সগঞ্জ, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে।
ঢাকায় প্রথমে হালকা কম্পন হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় ধরনের ভূকম্পন হয়। এ সময় ছোট-বড় প্রায় সব ভবনগুলোই দোলতে থাকে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে নগরবাসী। অফিস ও বাসাবাড়িতে থাকা হাজার হাজার মানুষ দ্রুত রাস্তায় নেমে আসেন। সকলের মধ্যেই আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শহরের সিকদার ভবন হেলে পড়েছে। বাসিন্দাদের ওই ভবন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। এতে দুইজন আহত হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
সিলেট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রচণ্ড ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে উঠেন নগরবাসী। এসময় বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কিত হয়ে বহুতল ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছয়টি ভবন সামান্য হেলে পড়েছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ সময় আতংকে নগরীর বহুতল ভবনের বাসিন্দারা নিচে খোলা জায়গায় নেমে আসেন।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার রৌমারি উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের পট্টিমারি গ্রামে আতঙ্কে মাহি ও সুরাইয়া নামে দুই জন জ্ঞান হারিয়েছেন। পরে তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৮টায় নওগাঁ অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ১ মিনিটের মধ্যে পরপর দু’বার ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠে। তবে জেলার কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মনপুরায় প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়। বুধবার রাত ৮টায় এ কম্পন অনুভূত হয়। প্রায় ২-৩ সেকেন্ড এ কম্পন অনুভূত হয়। হাজিরহাট বাজারের অনেক পাকা ভবনের ফাটল দেখা গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শিবগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শিবগঞ্জে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে আতংকে শিবগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৮টায় কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু’বার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। দু’দফায় ১৫ সেকেন্ড ভূকম্পন স্থায়ী ছিল। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা আহত-নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলার প্রতিটি এলাকায় ভূকম্পন অনুভূত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থার কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ জানিয়েছেন, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২। এর উৎসস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৪২০ কিলোমিটার পূর্বে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এই ভূকম্পের মাত্রা ৭ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হানিফ জানান, “এটা ছিল শক্তিশালী ভূমিকম্প। কাছাকাছি সময়ে নেপাল ছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে এর চেয়ে বড় ভূকম্প হয়নি।