• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

উপজেলায় ‘মাই ম্যান’রা বোল্ড হচ্ছে


প্রকাশিত: ১১:৩৮ পিএম, ২০ এপ্রিল ২৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮২ বার

মন্ত্রী-এমপির পুত্র ভাই ভাতিজা শ্যালকদের মাথায় হাত-

 

শফিক রহমান : অবশেষে পার পাচ্ছেন না উপজেলা ভোটে মন্ত্রী-এমপির পছন্দের লোকজন। আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে ‘মাই ম্যান’দের উত্থান ঠেকাতে আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। দলীয় পরিচয়ে এবার উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না।

কিন্তু তারপরেও মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তার নিজের পছন্দের লোকজনকে উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করছেন। নিজের পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা করেই কেউ কেউ ক্ষান্ত হচ্ছেন না। অনেকে তার স্ত্রী, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, শ্যালকদেরকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন।

আর এর বিরুদ্ধে এবার সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, উপজেলা নির্বাচনে আর স্বজনপ্রীতি বরদাস্ত করা হবে না। নিজেদের স্বজনদেরকে যারা প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন, তাদের প্রার্থী থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা করে তুলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষ থেকে এটিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যদি শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বার্তাটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকরা এখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের যারা এমপি, মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আছেন তারা কতজন নিজের আত্মীয়স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন তার তালিকা তৈরি করছেন।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের ভিতর ক্ষোভ, বিক্ষোভ এবং কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় উত্তাপ-উত্তেজনা এবং বিভাজন।

এই বিভাজন কমিয়ে আনার জন্য সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ও আহ্বান করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যা হবার হয়ে গেছে, ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের ভিতর বিভক্তি এবং কোন্দল কমেনি। বিভক্তি ও কোন্দলের সূত্র ধরে দলের ভিতরে হানাহানি মারামারির প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না এবং উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও দেবে না। যার যেখানে ইচ্ছা তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই দেখা যায় ভিন্ন অবস্থা। আওয়ামী লীগের যারা এমপি হয়েছেন বা হননি তারা চর দখলের মতো উপজেলা দখলের লড়াইয়ের

ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং এটি করতে গিয়ে তারা একদিকে যেমন তারা মাইম্যানদেরকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত হন, অন্যদিকে তারা শুরু করেন আত্মীয়স্বজন খোঁজা। যে যেভাবে পেরেছেন তাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে প্রত্যেকটি স্থানীয় পর্যায়ে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়। তৃণমূলে পরিবারতন্ত্র কায়েমের পথ প্রশস্ত হয়ে যায়।

বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতির নজরে আসে এবং আসার সাথে সাথেই তিনি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, যারা উপজেলা নির্বাচনে নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করেছে তাদেরকে অবিলম্বে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে এবং যদি তারা না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বা আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? অতীতে দেখা গেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেনে, তাদের বিরুদ্ধে খুব একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ব্যবস্থা নিলেও সেটি কার্যকর করা হয়নি।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের কথাই ধরা যাক। জাহাঙ্গীর আলম দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল বটে, তবে সেই ব্যবস্থা বেশিদিন টিকেনি। জাহাঙ্গীর এখন আওয়ামী লীগই করছেন।

এছাড়াও, বিভিন্ন স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে নানা অপরাধে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যকরী হয়নি বরং ব্যবস্থা গ্রহণের পর পরই তাদেরকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে এবং তৃনমূলে এর প্রভাব কতটুকু পরবে সেটাই দেখার বিষয়।