উন্নত অর্থনীতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-অষ্ট্রিয়ার ঐক্যমত্য
বিশেষ প্রতিনিধি : ঢাকা-ভিয়েনা পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অষ্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান কার্ন ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।তাঁরা বলেন, ‘আমরা পারষ্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার এবং এই পৃথিবীর স্থায়িত্বের বিষয়ে একমত হয়েছি।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেয়া এক বিৃবতিতে একথা বলেন।কার্ন আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অষ্ট্রিয়ায় প্রথম সরকারি সফর ঢাকা এবং ভিয়েনার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর বলেন, বাংলাদেশ ’৭০-এর দশকের গোড়ার দিকেই একটি গর্বিত স্বাধীন জাতি হিসেবে জন্মলাভ করলেও এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কাছাকাছি ছিল না। কিন্তুু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরের মধ্যদিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তাঁর এই অস্ট্রিয়া সফর ঢাকা এবং ভিয়েনার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে গতিশীলতা সঞ্চার করবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমার এই অষ্ট্র্রিয়া সফর দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে আরো গতিশীলতা আনবে।’
‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে। ২০১৪ সালে আমরা ভিয়েনায় আবাসিক মিশন চালু করেছি, যেটা আমাদের পারষ্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির এবং আরো কাছাকাছি আসার আন্তরিকতারই পরিচায়ক।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এবং অষ্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর যৌথভাবে খুঁজে বের করেছেন তাদের দু’দেশের মধ্যকার সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- কৃষি, পশু পালন, যোগাযোগ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ।তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে বৈশ্বিক সন্ত্রাস এবং উগ্রচরমপন্থা নিয়েও মত বিনিময় করেছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং অস্ট্রিয়ার ঘনিষ্ঠতার সূচনা হয় ’৭০ দশকের গোড়ার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে।
তিনি বলেন, অষ্ট্রিায়ার তৎকালীন সরকার প্রধান ব্রুনো ক্রিসকির নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।প্রধানমন্ত্রী চ্যান্সেলর ক্রিসকিকে অভিনন্দন জানান। তিনি ২০১২ সালে বাংলাদেশের মরনোত্তর ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর অনেক পথ অতিক্রম করেছে। দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, স্বাস্থ্য এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়রনের মাধ্যমে নারীদের মূল ¯্রােতে নিয়ে আসা, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কর্মসূচিকে আরো পরিব্যপ্ত করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নম্বর বোর্ডই সেই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে- বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল বলে স্বীকৃত। আমরা এবছর ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী এসময় তাঁকে এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের ভিয়েনায় উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শন করায় অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলরকে ধন্যবাদ জানান।এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে একযোগে কাজ করারও আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশে আজ (৩০ মে)ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত হানার সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের সাইক্লোন ষড়ঋতুতে সাজানো এই দেশটায় বিশেষ কোন ঘটনা নয়।
তিনি বলেন, বিশেষ করে এ ধরনের সাইক্লোন বাংলাদেশে আঘাত হানার আর একটি কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাইক্লোনের বিষয়ে সরকার তড়িৎ এবং সার্বিক পদক্ষেপ নেয়ায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে আমাদের সক্ষমতার বিকাশ প্রশংসনীয়।
বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মিলিটারি কায়দায় কখনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, যতটা না সম্ভব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইনা কোন সংঘাতের কারণে কোন দেশের নাগরিক অন্য দেশে শরণার্থী হোক।’
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে জঙ্গিদের অস্ত্র এবং অর্থ সরবরাহ বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনরোল্লেখ করেন।তিনি বলেন, বৈঠকে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান কার্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণও এ সময় তিনি সাদরে গ্রহণ করেন-বলেন প্রেস সচিব।বৈঠকের পরে, ফরেন অফিস কনসালটেশন বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।