• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

উনসত্তরে আ’লীগ-হাইব্রিড’ দের ভীড়ে রাষ্ট্রনায়ক হাসিনা!


প্রকাশিত: ৬:০১ পিএম, ২৩ জুন ১৭ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৬৯ বার

শফিক রহমান   :  উনসত্তরে পা দিল আওয়ামী লীগ। সামনে নির্বাচন! কি আছে দলটির কপালে? তা নিয়ে hasina-www.jatirkhantha.com.bd.5চারদিকে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। অভিযোগ আছে হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে? দলের অভ্যন্তরে এতো ভীড়ে রাষ্ট্রনায়ক হাসিনা কি পারবেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে? সমালোচকরা বলছেন নানা কথা।

নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৬৯ বছরে পা দিল। কেমন আছে দলটি? কিংবা কি চায় এই দলের কাছে মানুষ? দলে বর্তমানে এই দলে অসংখ্য অতিথি পাখি তথা হাইব্রিড নেতা পাতিনেতারা কিলবিল করছে। এরা প্রতিটি মুহূর্তে নানা ধান্দা আর ফন্দি ফিকিরে করছে।
উদ্দেশ্য কি করে দলটির সর্বনাশ করে নিজের অাঁখের গোছানো যায় সেই চেষ্ঠাই চলছে দীর্ঘদনি ধরে। এদের কারণে কিছুদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে কেনা যায়? আওয়ামী লীগ নেতাদের এই কেনাবেচা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তানাহলে ফলাফল কিন্তু-?

সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু মাত্র একজন শেখ হাসিনার কারণেই বাংলাদেশে এখনো বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং যারা এই দেশে সুস্থ রাজনীতি আর অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিন্তা করেন তাদের জন্য আওয়ামী লীগই শেষ ভরসাস্থল।

hasina-www.jatirkhantha.com.bdসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি) বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত ‘দি ডেইলি ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকার সঙ্গে এক যৌথ জরিপ চালিয়ে এই উপসংহারে উপনীত হয়েছে যে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ২.৬ ভাগ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন আর বিএনপি’র ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ২৫.৪ ভাগ।

এই সব আপাত ভাল খবর নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ২০১৮ সালে অক্টোবর মাস নাগাদ দলটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন দলের জন্য একটি বড় অগ্নিপরীক্ষা।

ভরসার কথা হচ্ছে, আরডিসি’র জরিপ মতে দলের প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে ভাল মত প্রকাশ করেছেন ৭২.৩ ভাগ উত্তরদাতা। তবে সবচেয়ে ভাল খবর হচ্ছে তরুণদের ৭১ ভাগের কাছে শেখ হাসিনা জনপ্রিয়। তবে এই সব জনমত জরিপের ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ যদি তার ৬৯ বছরের পথচলা শুরু করে তা হলে ভুল হবে। pm-www.jatirkhantha.com.bd

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী মুসলিম লীগ বর্তমানে আওয়ামী লীগ। আওয়াম শব্দটি উর্দু যার অর্থ জনগণ আর লীগের অর্থ জনগোষ্ঠী। সুতরাং আওয়ামী লীগের অর্থ জনগণের গোষ্ঠী, মানে জনগণের দল। একটু ব্যাখ্যা করে বললে হবে, জনগণের জন্য, জনগণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, জনগণের দল। দলটি এমন এক সময় প্রতিষ্ঠিত যখন অবিভক্ত পাকিস্তানে রাজনৈতিক দল মানে জিন্নাহ’র মুসলিম লীগ।

মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। গঠনের সময় এটির তেমন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়নি। প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য আর ঢাকার গুটি কয়েক মুসলিম এলিট। ‘হিন্দু ভারতে’ তাদের স্বার্থ কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতেন।

পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ তখন কংগ্রেসের একজন মধ্যমসারির নেতা। ইংরেজরা ভারত ছাড়লে হিন্দু মুসলমান কীভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে পারে তিনি সেই চেষ্টা করেছেন। একসময় যখন তাঁর ধারণা হলো তা সম্ভব নয় তখন তিনি মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে তাকে তার প্রতিষ্ঠাতাদের কাছ হতে ছিনতাই করলেন। নেতৃত্বে নিয়ে আনলেন উত্তর ভারতের কিছু বিত্তশালী মুসলমান ভূস্বামী আর জোতদার যাদের জনগণের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না।
Hasina-www.jatirkhantha.com.bd
যারা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের প্রায় সকলেই পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সম্ভবত ব্যতিক্রম ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যিনি শরৎ বসু, আবুল হাসিম, কিরণ শংকর রায়ের সঙ্গে অবিভক্ত বাংলার দাবিকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন। সাধারণ মুসলমানরা বুঝতে পারেনি যে জিন্নাহ্ মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যে পাকিস্তানের কথা বলছেন সেটি বাস্তবায়ন হলে তা তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে না, করবে মূলত উত্তর ভারত আর পাঞ্জাবের বিত্তবান মুসলমানদের ছোট এক জনগোষ্ঠীর।

এটি প্রথমে বুঝতে পেরেছিল পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা। তারা এটি উপলব্ধি করেছিল যে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে ঠিক তবে তা তাদের স্বার্থ রক্ষা না করে করছে পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠীর। পাঞ্জাবিরা ছাড়া পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের মানুষ অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হলো।

পূর্ব বাংলা ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের মানুষ তেমন একটা রাজনীতি সচেতন ছিল না। তাদের নেতৃত্বেরও অভাব ছিল। পূর্ব বাংলার বাঙালিদের সৌভাগ্য যে এখানে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাসিম, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ, আবুল মনসুর আহম্মদ, কফিলউদ্দিন চৌধুরীর (ডা. বদরুদ্দোজার পিতা) মতো রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরা ছিলেন।

23_06_2014-ALs_anniversary_enশেখ মুজিব (পরবর্তীকালে তিনি বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা) তখন তরুণ ছাত্রনেতা। দেশ ভাগের পরপরই তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জোরদার করার জন্য গঠন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পাকিস্তানের প্রথম মুসলিম লীগ বিরোধী সংগঠন। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে বাঙালিদের দ্বারা গঠিত যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলো।

বাঙালিদের এই অসামান্য বিজয়ের পিছনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। আর নির্বাচনে একজন মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শেখ মুজিব, শামসুল হক সহ অন্যান্য ছাত্রনেতারা।

১৯৪৯ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ হতে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নেতৃত্ব দলকে একটি অসাম্প্রদায়িক দলে রূপান্তর করেন। তখন এটি ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগের ৬৮ বছরের ইতিহাস দুর্গম পথচলার ইতিহাস, চড়াই উৎরাই পার হওয়ার ইতিহাস। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচনা হওয়ার পর এটি নির্ধারিত ছিল যে, ১৯৫৭ অথবা ১৯৫৮ সালে নূতন সংবিধানের অধীনে পাকিস্তানে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে টাঙ্গাইলের সন্তোষে অনুষ্ঠিত কাগমারি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ভাগ হয়ে যায়। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ধারণা হলো, নির্বাচন হলে পাকিস্তানে পাঞ্জাবি সামরিক বেসামরিক আমলাদের আধিপত্য খর্ব হয়ে যাবে।
pm
নির্বাচন বানচাল করার জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আইয়ুব খান সংবিধান স্থগিত করেন আর সামরিক আইন জারি করে সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান বাতিল করে দেন। আওয়ামী লীগের সকল নেতাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন। ১৯৫৮ সাল হতে ১৯৬৯ পর্যন্ত আইয়ুব খান পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেশ শাসন করলেন।

১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ দলের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা ঘোষণা করলে তাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগে দ্বিতীয়বারের মতো বিভক্তি দেখা যায়। দলের সভাপতি আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। একই কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবকে সভাপতি আর তাজউদ্দিন আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে দল পুনর্গঠন করা হয়।

আওয়ামী লীগ ঘোষিত ছয় দফা সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারে ছয় দফার ভিতরই লুকিয়ে আছে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ। আইয়ুব খান শেখ মুজিবসহ তাঁর প্রায় সকল রাজনৈতিক সহকর্মীদের গ্রেফতার করেন আর তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে সামরিক আদালতে বিচারের নামে বঙ্গবন্ধু আর সহকর্মীদের মৃত্যুর মুখোমুখি ঠেলে দেন।pm hasina-www.jatirkhantha.com.bd

কিন্তু আইয়ুব খানের সকল ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায় ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের তোড়ে যার নেতৃত্বে ছিল এদেশের ছাত্রসমাজ। গণআন্দোলনে শুধু যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাই ভেসে যায়নি, আইয়ুব খান নিজেও ক্ষমতাচ্যুত হন। নূতন সামরিক শাসক হয়ে আসেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। এসেই তিনি ঘোষণা করেন ১৯৭০ এর শেষ নাগাদ দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনের পর নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তিনি নিজ পেশায় ফিরে যাবেন।

১৯৭০ এর নির্বাচন শুধু বাঙালির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল না, আওয়ামী লীগের জন্যও একটি ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ ছিল যা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি আর আওয়ামী লীগ অর্জন করেছিল। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল (১৬৭/৩১৩)। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ম্যানিফেস্টো ছিল ছয় দফা।

সেই নির্বাচনে পূর্ব বাংলার মোট ভোটারের ৯৪.৪ ভাগ ভোটার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন আর এই ভোটারদের ৭৫.১০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগ তথা ছয়দফাকে সমর্থন যুগিয়েছিলেন। সাধারণ নিয়মে বঙ্গবন্ধুই নির্বাচিত হওয়ার কথা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র কখনো এটা মেনে নিতে পারেনি যে তাদের শাসন ক্ষমতা বাঙালিদের হাতে চলে যাবে। শুরু হলো ১৯৭১ এর মার্চ মাসে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ।

bangobandu-tajuddin-www.jatirkhantha.com.bdমুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের কারাগার হতে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে সরকার গঠন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দুরূহ কাজটি হাতে তুলে নেন এবং সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশকে নিজের পায়ের ওপর দাঁড় করিয়ে দেন।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কাল রাতে বঙ্গবন্ধুকে দেশের শত্রুরা সপরিবারে হত্যা করলে আওয়ামী লীগ পুনরায় অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যদিও বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত ঘোষণা করে বাকশাল গঠিত হয়েছিল। কিন্তু বাকশালের মূল নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ। দলটিকে সম্পূর্ণভাবে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে কারাগারে বন্দি জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকার কারণে ঘটনা চক্রে বেঁচে যান। জেল হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়া। যেহেতু আওয়ামী লীগের গঠন তার বেড়ে ওঠা একটি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল সেহেতু এই দল বার বার সংকটে পড়লেও রূপকথার সেই ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্বার জেগে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দলের ক্রান্তিকালে দলের হাল ধরেছিলেন বেগম জোহরা তাজউদ্দিন, আবদুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এরা সকলেই বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছিলেন। তবে এরা বুঝতে পেরেছিলেন এই দলকে আবার পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যেতে বঙ্গবন্ধুর একজন উত্তরাধিকারের নেতৃত্ব অপরিহার্য।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের এক বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রবাসে নির্বাসিত জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেই বছর ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশের এক ক্রান্তিকালে দেশে ফেরেন যখন জেনারেল জিয়া সকল প্রতিপক্ষকে দমন করে একজন একনায়কের মতো দেশ শাসন করছেন।

এরপর ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে জিয়া বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৯১ সালে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্রের যাঁতাকলে পড়ে সংসদে বিরোধী দলে বসতে বাধ্য হয়। এটি ছিল শেখ হাসিনার প্রথমবারের মতো পিতার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সংসদে প্রবেশ।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একুশ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ম্যান্ডেট পায়। খুব কম দেশেই একটি দল একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে ক্ষমতায় ফিরতে সক্ষম হয়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্রুততার কারণে।

বর্তমানে তিনি এখন শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, বিশ্বেও একজন স্বীকৃত রাষ্ট্রনায়ক যার কাছ হতে বিশ্বের অন্যান্য নেতৃত্ববৃন্দ শিখতে চায় অনেক কিছু । আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু অতীত চর্চা যথেষ্ট নয়। অতীত চর্চাটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে বর্তমানে কথায় কথায় যারা বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামী লীগকে নিজের স্বার্থে পথেঘাটে ব্যবহার করে, তাদের মনে করিয়ে দেওয়া যে, আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে সেই আওয়ামী লীগের পিছনে যে ইতিহাস, তা অনেক কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে।

নূতন প্রজন্ম এই ইতিহাস না জানলে তাদের হাতে আওয়ামী লীগ কখনো নিরাপদ নয় আর যেখানে আওয়ামী লীগে গত কুড়ি বছরে এত পরগাছার জন্ম হয়েছে সেগুলি সমূলে উৎপাটন না করলে বিপদ আসন্ন। দেশে সংখ্যালঘুদের জমি দখল হতে শুরু করে টাকা পাচারের মতো এত সব ভয়াবহ অপরাধের সাথে দলের যারাই জড়িত তাদের নিয়ে আগামী নির্বাচনে সহজে পার পাওয়া কঠিন হবে।

আওয়ামী লীগের ৬৮ তম জন্মবার্ষিকীতে এই হোক অঙ্গীকার, দল হতে সকল জঞ্জাল হঠিয়ে এই ঐতিহাসিক দলটি পুনরায় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের দিকে যাত্রা শুরু করুক। এটি একমাত্র তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাই করতে পারেন।