• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠী শিক্ষক শফিউল ইসলামকে হত্যা করেছে’


প্রকাশিত: ৯:৪৫ পিএম, ১৬ নভেম্বর ১৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৯ বার

 

Teacher-www.jatirkhantha.com.bdটিপু সুলতান.ঢাকা:  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউল ইসলামকে হত্যার জন্য প্রগতিশীল চেতনাবিরোধী উগ্রবাদী প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে তাঁর ছেলে সৌমিন শাহরিদ (২০)। বাবাকে হত্যার আগে ওই গোষ্ঠী বাসায় কাফনের কাপড় পাঠিয়েছিল বলে জানান তিনি।

আজ রোববার দুপুরে জোহরের নামাজের পরে শফিউল ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিয়াতপুর সরকার বাড়ির উঠানে তাঁকে দাফন করা হয়।

সকাল সাতটায় সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মরদেহের কফিন ঘিরে কাঁদছেন স্বজনেরা। বাবার লাশের পাশে বসে একমাত্র ছেলে সৌমিন শাহরিদ কাঁদছেন। বৃদ্ধা মা সখিনা বেগম (৮০) বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। মায়ের পাশে বসে কাঁদছিলেন শফিউল ইসলামের চার বোন আইরিন সুলতানা, ওয়াসিম রুমানা, রোখসানা সুলতানা ও সাবিহা সুলতানা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমিন শাহরিদ বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে প্রগতিশীল চেতনার আদর্শ বুকে লালন করতেন বাবা। তিনি সব সময় জঙ্গিবাদের বিপক্ষে ছিলেন, মানুষকে ভালোবাসতেন, সত্য কথা বলতেন, সত্য পথে চলতেন। এতে প্রতিক্রিয়াশীল একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী তাঁর প্রতি রুষ্ট ছিল। বাবাকে হত্যার আগে ওই গোষ্ঠী বাসায় কাফনের কাপড় পাঠিয়েছে। হত্যাকারী কারা তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জানা।’

Ansar-al-Islam-Bangladesh-2কেন সেই জঙ্গিদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হয় না-

সৌমিন আরও বলেন, রাষ্ট্রের কাছে বাবার হত্যার কোনো বিচার চাই না, কারণ রাষ্ট্রের কাছে আমরা কোনো বিচার পাব না। রাষ্ট্র ভালো করেই জানে কারা প্রতিক্রিয়াশীল, কারা জঙ্গি। কেন সেই জঙ্গিদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হয় না, কেন তারা এখনো মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে? বাবার মতো এমন একটা ভালো মানুষকে নির্মমভাবে হত্যার বিচারের ভার জাতির কাছেই ছেড়ে দিলাম।’

ছেলের কফিন ধরে মা সখিনা বেগম বলেন, ‘শুক্রবার রাতেও ছেলেটা মুঠোফোনে আমার শরীরের খোঁজ নিয়েছে, ওষুধ আছে কি না জানতে চেয়েছে। গত কোরবানির ঈদে এসে বলেছে, মা হয়তো আর কখনো দেখা হবে না, কিন্তু ছেলের সেই কথা যে সত্যি হবে তা কখনো ভাবিনি।’

ছোট বোন বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রোখসানা সুলতানা বলেন, বাবা আতারুজ্জামান সরকার ছিলেন মহিমাগঞ্জ চিনিকলের কর্মকর্তা। বাবা মারা যাওয়ার পর ভাই শফিউল ইসলাম চার বোনকে বড় করে তোলেন।

১৯৮১ সালে সোনাতলা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৩ সালে সোনাতলা সরকারি নাজির আখতার কলেজ থেকে এইচএসসি পাস -RAJSHA16করার পর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। সেখানে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর করার পরে ১৯৯০ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও মা-বোনদের খোঁজ নিতে ভুলতেন না তিনি।

ছোট বোন সোনাতলা বেগম ফজিলাতুন্ননেছা মুজিব মহিলা কলেজের প্রভাষক ওয়াসিম রুমানা  বলেন, ‘ভাইয়ার খুব ইচ্ছে ছিল চাকরি শেষে বাড়িতে এসে একটা বৃদ্ধাশ্রম গড়বেন। তাঁর শেষ ইচ্ছেটুকু অপূর্ণই থেকে গেল।’