• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ঈদ যানজটে নাকাল ঘরে ফেরা মানুষ


প্রকাশিত: ২:৫৬ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৪৮ বার

1জাতিরকন্ঠ রিপোর্ট  :    ঈদ যানজটে নাকা2ল ঘরে ফেরা মানুষরা। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল যেতে যানজটে পড়তে হচ্ছে টাঙ্গাইল মহাসড়কে।গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের পাকুল্যা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ২৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।ওদিকে যানজট দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল যেতেও। সকাল থেকে দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট।

সরেজমিনে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট চলছে সকাল থেকে। নারায়ণগঞ্জের সানারপার এলাকায়ং যানজট আজ বৃহস্পতিবার ভোরবেলা থেকে। যেখানে ঢাকার গুলিস্তানের মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতু স্বাভাবিক সময়ে পার হতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ঈদের আগে আজ বৃহস্পতিবার সময় নিচ্ছে তিন ঘণ্টার বেশী।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার থেকে শনির আখড়ায় নামার পর নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রচণ্ড যানজটের দেখা মিলল। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তায় গাড়ি প্রায় থেমে আছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথ প্রায় ফাঁকা।

রাজধানী থেকে কুমিল্লা যাচ্ছেন আব্দুল করিম।  সকাল সাতটার দিকে তিনি শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে উঠেছেন। সাড়ে ১০টার সময়ও রয়েছেন মদনপুরে। ক্ষুব্ধ আব্দুল কাদের বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বেশ চওড়া হয়েছে। এখানে এই অবস্থা হলে অন্য এলাকায় না জানি কী অবস্থা!

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ডা. তানিয়া আফরোজ বলেন, ঢাকা থেকে কাঁচপুর আসতেই তাঁর প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে।চট্টগ্রামের দিকে যাবেন মাহমুদ। জানান, ঢাকা থেকে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রওনা হয়েছেন। কাঁচপুর সেতু এলাকা পার হতেই দুর্ভোগে পড়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ পৌঁছাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের মধ্যেই দেখা গেল শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। চালক সাইদুল বললেন, গাড়ির হর্নে সমস্যা হচ্ছে। তিনি সেটিই সারানোর কাজ করছেন।হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সোলেমান মিয়া জানান, মেঘনা সেতুর দুই পাশে প্রচণ্ড যানজট।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে’ও দীর্ঘ যানজট-

দীর্ঘ যানজটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। উত্তরাঞ্চল থেকে যাঁরা ঢাকায় আসছেন, তাঁরা যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন, ঢাকা থেকে ওই দিকে যাওয়া মানুষও একই ভোগান্তিতে রয়েছেন।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের কারণে নাকাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, গরু ও মালবাহী ট্রাক বিকল হয়ে পড়ায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে।
গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের পাকুল্যা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ২৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

কোনাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আজ সকাল থেকে পুলিশের প্রায় এক হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশের ১ হাজার ২০০ সদস্য ভোর থেকে কাজ করছেন।

দুপুর সাড়ে ২টার দিকে চন্দ্রা মোড়ে গিয়ে ঢাকা বিভাগীয় পুলিশের উপমহাপরিদর্শক নুরুজ্জামান বলেন, যানজট নিরসনে পুলিশকে রাস্তায় থাকতে বলা হয়েছে। এই দুই মহাসড়কে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পুলিশ সদস্য ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

যানবাহনের ভুক্তভোগী চালক, যাত্রী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন বিকল ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে গতকাল বুধবার দিনভর মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট লাগে। বিকেলের দিকে যানবাহনের চাপ কমতে শুরু করলে যানজটও কমতে শুরু করে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে পশুবোঝাই ট্রাকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

ফলে মহাসড়কের গোড়াই, ধেরুয়া, দেওহাটা, মির্জাপুর, শুভুল্যা, কদিমধল্যা এলাকায় থেমে থেমে যানজট লাগে। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাঐখোলা এলাকার হাইপ্রেসার সিএনজির কাছে ঢাকাগামী একটি লরির সঙ্গে বিপরীতমুখী বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে রাস্তার ওপর দুটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়েছিল। এতে যানজট লাগে।

মহাসড়কে যানজট বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে রাতে যানজট মির্জাপুরের গোড়াইয়ের ক্যাডেট কলেজ এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দুটি সরিয়ে নেয়। এরপর আবার যান চলাচল শুরু হয়।

আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট কিছুটা কমতে শুরু করে। তবে মহাসড়কের শুভুল্যা এলাকায় দুটি ও মির্জাপুরে একটি ট্রাক বিকল হওয়াতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া সকাল আটটার দিকে মহাসড়কের করাতিপাড়া মাদারজানী সেতুর কাছে পেছন থেকে একটি ট্রাক আরেকটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তার ওপর সামনের ট্রাকটি আড়াআড়ি হয়ে পড়ে যায়। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে নাটিয়াপাড়া থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।

টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের রেকারচালক আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, সকাল সোয়া নয়টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দুটি রাস্তার ওপর থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর যানবাহন চলতে শুরু করে।

যানজটে দুর্ভোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে কুষ্টিয়া থেকে চট্টগ্রামগামী গরুবোঝাই ট্রাকচালকের সহকারী সুকান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, গতকাল রাত ১১টার দিকে তাঁরা বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে যানজটে পড়েন। সেখান থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত মাত্র দেড় ঘণ্টার রাস্তা নয় ঘণ্টায় পার হন।

বর্তমানে মহাসড়কের কদিমধল্যা থেকে গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং নাটিয়াপাড়া থেকে ভাতকুড়া পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজট রয়েছে।

মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, আসলে চালকদের মানসিকতার ওপর যানজটের বিষয়টি নির্ভর করে। তাঁরা যদি নিয়ম মেনে যানবাহন চালান, তাহলে যানজট লাগার কথা নয়। এ ছাড়া মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে বিকল হওয়া যানবাহনগুলো সরিয়ে নিতে কিছুটা দেরি হয়। এ সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে যানজট লাগে। তবে পুলিশ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।