• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

ঈদ আনন্দে জঙ্গি নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশে অঘোষিত রেড এ্যালার্ট


প্রকাশিত: ১:৪৪ এএম, ২৬ জুন ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৪ বার

এস রহমান  :  ঈদ আনন্দে জঙ্গি নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশে অঘোষিত রেড এ্যালার্ট চলছে। ইতিপূর্বে শোলাকিয়া ঈদ jjজামাতের ঘটনা এবং হলি আর্টিসান ট্রাজেডি মাথায় রেখে গোয়েন্দা নজরদারিসহ কঠোর নিরাপত্তা নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ঠ একটি সূত্র জাতিরকন্ঠকে বলেছে, জঙ্গি নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের মোকাবেলা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ছক তৈরী করেছে সরকার।

কারণ, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে রক্তাক্ত হয়েছিল রাজধানীর সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান। সেখানকার হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় বর্বরোচিত জঙ্গি হামলা চালায় নব্য জেএমবি।

ওই শোক কাটিয়ে না উঠতেই ছয় দিনের মাথায় ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে আবারও জঙ্গি হামলা চালানোর চেষ্টা করে উগ্রপন্থিরা। গত বছরের দুই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক বাস্তবতা মাথায় রেখে এবার ঈদ জামাত ও সরকারি ছুটিতে দেশজুড়ে বাড়তি সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ঈদের পর থেকে সাত দিন রাজধানীতে থাকবে সর্বোচ্চ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বারিধারা ও বনানীতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সহকারী পুলিশ পরিদর্শক থেকে তার ওপরের সব পুলিশ কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

jjjঈদের ছুটিতে ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন নিয়ে সর্বশেষ ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। দেশজুড়ে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যে কোনো উৎসবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব পুলিশের। রোজার শুরু থেকে পাঁচ ধাপে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়। রোজার মাসকে তিন ধাপে ভাগ করে তিন ধরনের নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ঈদের দিনের জন্য থাকছে আলাদা আয়োজন। আর ঈদ-পরবর্তী সাত দিনের জন্য থাকবে পৃথক নিরাপত্তা ছক।

হলি আর্টিসানের অভিজ্ঞতার বিষয়টি মাথা রেখে শেষ ধাপের নিরাপত্তা আয়োজন করা হয়েছে। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এরই মধ্যে প্রথম তিন ধাপে নিরাপত্তা আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শেষ দুই ধাপও একইভাবে নির্বিঘ্নে শেষ হবে বলে আশা করি। গতকালও বৈঠক করে নিরাপত্তার সার্বিক ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমান বলেন, জঙ্গি হুমকি মাথায় রেখেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেশব্যাপী পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যে কোনো ধরনের অপরাধ ঠেকাতে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ঈদের ছুটিতে সারাদেশে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়ন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বড় বড় ঈদ জামাতে থাকবে অতিরিক্ত ফোর্স। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় থাকবে বাড়তি নজরদারি। কাউন্টার টেররিজমের ডিসি মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, যে কোনো সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতা মোকাবেলায় পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, কয়েক বছর ধরে জঙ্গিরা বেশ কিছু এলাকায় নাশকতা চালিয়েছে। তবে পুলিশের তৎপরতায় গত বছর কোনো ধরনের ঘটনা তারা ঘটাতে পারেনি। উগ্রপন্থিরা যাতে আবারও তৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ বৈঠকে ডিএমপির সব অপরাধ বিভাগের ডিসি, গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি ও ট্রাফিকের ডিসিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আলোচিত সব ধরনের নির্দেশনা রাজধানীর ৪৯ থানার ওসিদের অবহিত করা হয়েছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের কোনো ঈদ জামায়াতে যাতে মুসলি্লরা জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু না নিয়ে যান, এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা।

ডিএমপিতে কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ পরিদর্শক পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ৮০ ভাগের ছুটি বাতিল করা হয়। খুবই জরুরি কারণ ছাড়া সহকারী পুলিশ পরিদর্শক থেকে ওপরের পুলিশ কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া ছুটির সময় রাজধানীতে বাসা বদলের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করছে পুলিশ। তারা মনে করছে অনেক সময় ঈদে ফাঁকা রাজধানীতে চোর-ডাকাত চক্রের সদস্যরা বাসায় চুরি-ডাকাতি করে ভ্যানে স্বাভাবিকভাবে মালপত্র নিয়ে পালায়।

অপরাধী হিসেবে তাদের চিহ্নিত করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া রাজধানীর বাসা-বাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করছে পুলিশ। ডিএমপি সব থানায় সব সময় সহকারী পুলিশ সুপার ও পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা অবস্থান করবেন। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারাও তাদের নিজ এলাকার বাইরে অবস্থান করতে পারবেন না।

পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ জানান, ঈদের ছুটিতে কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কূটনৈতিক এলাকায় ৫০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বেশি রয়েছে। ছুটিতে গুলশান-বনানী, নিকেতন ও বারিধারার বেশ কিছু সড়ক একমুখী করা হবে। গুলশান-বারিধারা-বনানী সোসাইটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের যাতে একসঙ্গে ছুটি দেওয়া না হয়, সে ব্যাপারে তাদের বলা হয়। গুলশান এলাকায় যে এক হাজার রিকশা রয়েছে এর বাইরে যাতে অন্য কোনো রিকশা নিয়ে আসতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। বারিধারা থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক গেট ছিল। নিরাপত্তার কারণে তিনটি গেট খোলা রাখা হচ্ছে। হলি আর্টিসানের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিদিন ‘পিক আওয়ার’ বলে বিবেচিত বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পুলিশের টহল জোরদার থাকবে।

গুলশান বিভাগের এডিসি আবদুল আহাদ বলেন, ঈদের ছুটিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো লোক কূটনৈতিক এলাকায় প্রবেশ করছে কি-না তার ওপর বাড়তি নজরদারি থাকবে। ব্যাগসহ সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে তল্লাশি করা হবে। এ এলাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ ভিভিআইপিদের জন্যও থাকবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় সন্দেহভাজন হিসেবে যেসব তরুণ ঘর ছেড়েছে, তাদের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি-না, সে ব্যাপারেও পুলিশের সতর্ক নজর থাকবে। অনলাইনে সন্দেহভাজনদের কার্যক্রম মনিটর করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বড় বড় হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এরই মধ্যে আর্চওয়ে ও লাগেজ স্ক্যানারের ব্যবস্থা করেছে।