ইয়াবা ষড়যন্ত্র:এমপি বদি গরিবের বন্ধু!
টেকনাফ থেকে বিশেষ প্রতিনিধি : জমজমাট ইয়াবা ষড়যন্ত্র চলছে টেকনাফে। দলীয় লোকজন একে অপরকে ফাঁসাতে ইয়াবা ষড়যন্ত্র ফাঁদ পাতছেন। এ ফাঁদে ফেলা হয়েছে এমপি বদিকে। কিন্তু দলের একটি বুহৎ অংশ বদির পক্ষে। তারা জাতিরকন্ঠকে বলেছেন, এমপি বদি গরিবের বন্ধু; এজন্যই ইয়াবা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। দলীয় নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে ইয়াবা সংশ্নিষ্টতার অভিযোগ আনছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভায়ও এ নিয়ে বাক-বিতণ্ডা হয়েছে। দলের সাংসদ আবদুর রহমান বদি ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বাদানুবাদে জড়িয়েছেন।
মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, বদি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার পৃষ্ঠপোষকতায় সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা পাচার বেড়েছে। এমপি ও তার ভাইসহ পরিবারের অনেকে ইয়াবা পাচারে জড়িত। তিনি অভিযোগ করেন, ইয়াবা ব্যবসা করে যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে, তারা বহাল তবিয়তে রয়েছে। অন্যদিকে নিরীহ লোকজনকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হচ্ছে। এমপির কারণে তার দুই ছেলের নাম ইয়াবা কারবারির তালিকায় উঠেছে বলে অভিযোগ করেন মোহাম্মদ আলী।
এই সময় সাংসদ আবদুর রহমান বদি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মোহাম্মদ আলী ও তার ছেলেরা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, তারা পারলে আগামী নির্বাচনে যেন তার মনোনয়ন পাওয়া ঠেকায়। স্থানীয় একটি হোটেলে সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই সভায় দলীয় নেতারা টেকনাফে ইয়াবাবিরোধী অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সভায় অনেকে অভিযোগ করেন, দলের একজন ত্যাগী নেতাকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া দলের অভ্যন্তরে থাকা ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ইয়াবাবিরোধী অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যারা ইয়াবা কারবারে জড়িত নেই তাদের নামও তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিষয়টি সরকার ও দলীয় হাইকমান্ডকে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, এমপি বদিকে কেন্দ্র করে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন থেকে কোন্দল রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বদি নিজেই দলের মধ্যে একটি গ্রুপ তৈরি করে নিয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাফর আহমেদ তার পক্ষে। অন্যদিকে সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের নেতৃত্বে অপর অংশ পৃথকভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
স্থানীয় নেতারা বলেন, ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর থেকেই দলে বিভক্তি শুরু হয়। টেকনাফ বাস স্টেশনে সাংসদ বদি নিজ খরচে একটি তিন তলা ভবন করেন। এর পর সেখানে ঝুলিয়ে দেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সাইনবোর্ড। দলের একটি অংশ এই কার্যালয়ে গেলেও অপর বড় একটি অংশ যায়নি।
তাদের অভিযোগ, এমপি বদি যে ভবনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে, ওই জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে জমিটি নিজের করে নিয়েছেন এমপি বদি। বর্তমানে এই কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
নুরুল বশর বলেন, আবদুর রহমান বদি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আসলে আওয়ামী লীগের কেউ নন; বিএনপি থেকে এসেছেন। তার অনুসারী উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদও বিএনপি থেকে এসেছেন। তাদের আত্মীয়স্বজন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। ফলে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।
তবে ভিন্ন সুর শোনা যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহির হোসেনের কণ্ঠে। তিনি দাবি করেন, সাংসদ বদি গরিবের বন্ধু। বদির বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চাচ্ছে। তারাই আওয়ামী লীগের ভেতর লুকিয়ে থাকা জামায়াত-বিএনপির এজেন্ট।টেকনাফ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কোন্দলে জড়িয়ে পড়ায় উপজেলায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও স্থবিরতা নেমে এসেছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, দলের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায় সংশ্নিষ্ট কেউ রয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রকৃত ইয়াবা কারবারিদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।