ইয়াবা ডন ক্রসফায়ারের আড়ালে-
কক্সবাজার প্রতিনিধি : ২নম্বর ইয়াবা ডন ক্রসফায়ার হলো ১০৭ নম্বরে! গত বছর ৪ মে থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে র্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ ও এলাকায় মাদকের প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় ১০৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে নারীসহ ২১ রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন। টেকনাফে ৬৫ ও উখিয়ায় ২ জন নিহত হন।সর্বশেষ ক্রসফায়ার হলো তালিকাভুক্ত ২ নম্বর ইয়াবা ডন টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম হোতা সাইফুল করিম (৪৫)। পুলিশ বলেছে, কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে সাইফুল। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানাপ্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজার পুলিশ জাতিরকন্ঠ কে জানায়, সাইফুল করিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গোয়েন্দা সংস্থার মাদক–সংক্রান্ত একাধিক তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান আনা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে।পুলিশ জানায়, বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ ইয়াবা বড়ি, ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি), শর্টগানের ৪২টি তাজা কার্তুজ ও ৩৩টি কার্তুজের খোসা জব্দ করা হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের একজন এসআই ও দুজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জাতিরকন্ঠ কে জানান, সাইফুল করিমের বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার শীলবুনিয়া পাড়ায়। দীর্ঘ ৯ মাস আত্মগোপনের পর কয়েক দিন আগে সাইফুল করিম বিদেশ থেকে টেকনাফ আসেন। এ সময় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানান, কয়েক দিন আগে মিয়ানমার থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইয়াবার বড় একটি চালান এনেছেন।
সেই চালান টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানাপ্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে মজুত করেছেন। সাইফুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইয়াবা উদ্ধারের জন্য তাঁকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অস্ত্রধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। এ সময় অস্ত্রধারীদের গুলিতে টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল আহমেদ, কনস্টেবল ইমাম হোসেন ও মো. সোলাইমান আহত হন।
এরপর আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। গোলাগুলিতে সাইফুল করিম গুলিবিদ্ধ হন। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করতে করতে পাশের জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ সাইফুল করিমকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র বলেন, গুলিবিদ্ধ সাইফুল করিমকে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাঁর শরীরে চারটি গুলির দাগ ছিল। একটি বুকে, তিনটি পেটে।পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য সাইফুলের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।এর আগে গত ৩ মে টেকনাফ থানার পুলিশ ১০ হাজার ইয়াবা বড়ি, ৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ নিজ বাড়ি থেকে সাইফুল করিমের দুই ছোট ভাই মাহবুবুল করিম ও রাশেদুল করিমকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দী।
২০০৩ সালের দিকে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন। একাধিকবার তিনি সেরা করদাতার (সিআইপি) খেতাব অর্জন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১০২ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করলেও সাইফুল তখন বিদেশে আত্মগোপন করেন। তাঁর পরিবারের দাবি, টেকনাফের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আত্মসমর্পণের সুযোগের কথা দিয়ে কয়েক দিন আগে সাইফুল করিমকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফে নিয়ে আসেন।