ইসলামী ব্যাংকে লুটপাট-এমডি ৪১২ কোটি লুটেও বহাল কেন!
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআরের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট এক হাজার ১৮০ কোটি ৯১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৪১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যাংকটির এমডি মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন ও মিফতাহ উদ্দিনের অপতৎপরতায় উপযুক্ত ও নির্ধারিত খাতে ব্যয় না করে লুটপাট করা হয়েছে।
শফিক রহমান : ইসলামী ব্যাংকে এস আলম সাইফুলের লুটপাটে জড়িত এমডি ৪১২ কোটি লুটেও এখনও কেন বহাল তা নিয়ে কোনো সদুত্তর দিচ্ছে না ব্যাংকটির আরেক সুবিধাবাদী বর্তমান চেয়ারম্যান। যিনি একসময় ফেসিস্টদের সহযোগী ছিলেন। ফলে বর্তমান চেয়ারম্যান ফেসিস্ট সাইফুলের লুটের সহযোগী হওয়া সত্বেও এমডি মনিরুল মওলাকে আগলে রাখছেন।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের কুলাঙ্গার এস আলমের লুটপাটের অন্যতম প্রধান সহযোগী ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনিরুল মওলা। যিনি এখনও চেয়ারে বসে নানা ফন্দিফিকির করে ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা লুটপাট থেকে বাঁচতে সহায়তা করছে এস আলম গ্রুপ কে। অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির ওপর মহলকে খুশী রেখে সব সামাল দিচ্ছেন মনিরুল মওলা। এই এমডির সহযোগীতায় এস আলম ওরফে সাইফুল লাখ কোটি টাকা লুটে পালিয়েছে। দুদক বলেছে, শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কৌশলে বের করে নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ২৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এদিকে, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআরের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট এক হাজার ১৮০ কোটি ৯১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৪১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যাংকটির এমডি মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন ও মিফতাহ উদ্দিনের অপতৎপরতায় উপযুক্ত ও নির্ধারিত খাতে ব্যয় না করে লুটপাট করা হয়েছে।
সরেজমিনে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধান, ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা করে এমন তথ্য জানা গেছে। ইসলামী ব্যাংক মনিরুল মওলা সাইফুলের পরিবারের ২৪ জনকে ঋণ পাইয়ে দিয়ে নিজেও লাভবান হয়েছে মনিরুল। আর সাইফুল গংরা ওই টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এই লুটেরারা হচ্ছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, ভাই ওসমান গনি ও গনির স্ত্রী ফারজানা বেগম, ভাই আবদুস সামাদ ও তার স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস, ভাই সহিদুল আলম ও তার স্ত্রী শারমিন ফাতেমা, সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আতিকুর নেছা, ভাই মোরশেদুল আলম ও তার স্ত্রী লুৎফুন নাহার, মোরশেদুলের পুত্র ফসিহুল আলম ও মাহমুদুল আলম, অজ্ঞাত মিসকাত আহমেদ, সাইফুল আলমের পুত্র আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম, বোন বদরুননেসা আলম, জামাতা বেলাল আহমেদ, কন্যা মায়মুনা খানম, বোন সাজেদা বেগম, বোনের ছেলে মোস্তান বিল্লাহ আদিল ও তার মা আলহাজ চেমন আরা বেগম।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে এস আলম ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি ১২ লাখ টাকা প্রত্যক্ষ ঋণ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংক থেকে পরোক্ষ সুবিধা নেওয়ায় ব্যাংকটির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হাজার ৮০৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
এসব বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনুসন্ধান কিংবা তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে দুদকের আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নথিপত্রে মিলেছে, ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে এস আলম ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ফান্ডেড ২৮ হাজার ৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও নন-ফান্ডেড ছয় হাজার ১৭৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকাসহ মোট ৩৪ হাজার ২৫৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার ঋণ প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ঋণ হিসেবে ১৯ হাজার ৭৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ইন্টার ব্যাংক ডেবিট অ্যাডভাইস (আইবিডিএ) হিসেবে আট হাজার ৬৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং শাখা থেকে বিভিন্ন বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ২১ হাজার ৭৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি ১২ লাখ টাকা প্রত্যক্ষ ঋণ গেছে এস আলম গ্রুপের নামে।
এ ছাড়াও ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০ হাজার ৩৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকার পরোক্ষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপকে। যার মধ্যে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের প্রদত্ত বিনিয়োগ ও অগ্রিম হিসেবে মোট নয় হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ফান্ডেড আট হাজার নয় কোটি নয় লাখ টাকা ও নন-ফান্ডেড এক হাজার ৭২৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্লেসমেন্ট হিসেবে বিনিয়োগ সাত হাজার ২০৫ কোটি টাকা, মুদারাবা সাব-অর্ডিনেট বন্ড ও পারপিচুয়াল বন্ডে বিনিয়োগ হিসেবে ৭০৪ কোটি টাকা, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বিনিয়োগে ব্যাংকের ক্ষতি ৫০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, কম মুনাফা ধার্য করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৫৬৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, সামাজিক দায়বদ্ধতা খাত অর্থাৎ সিএসআর ফান্ডের ৪১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা, কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্যারান্টি ফান্ডের ৩৫০ কোটি ৫৭ লাখ এবং আর্থিক সুবিধা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সুদ মওকুফ ১৭১ কোটি চার লাখ টাকা; সবমিলিয়ে এস আলম গ্রুপকে পরোক্ষ সুবিধা দেওয়ায় ব্যাংকটির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হাজার ৮০৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
ইসলামী ব্যাংক ও দুদকের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মোট ১৭ জন পরিচালকের মধ্যে নমিনেটেড পরিচালকের সংখ্যা ছিল ১৩ জন। যার মধ্যে এস আলম গ্রুপের বেনামি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নমিনেটেড পরিচালকের সংখ্যা ছিল ১২ জন। এ ছাড়া একজন বিদেশি শেয়ারহোল্ডারের নমিনেটেড পরিচালক এবং অবশিষ্ট চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক। অর্থাৎ ব্যাংকটির ওপর এস আলমের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব ছিল। ফলে এস আলম ব্যাংকটির ওপর তথা ব্যাংকিং খাতের ওপর সীমাহীন প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়েছিল। এসব কারণে সুযোগ পেয়ে গ্রুপটি ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করেছে। একই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য ব্যাংকে লুটপাট চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকে তাদের সিন্ডিকেট কাজ করেছে।
৫৭ হাজার কোটি লুট যেভাবে-
ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ২৮ হাজার ৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার ফান্ডেড এবং ছয় হাজার ১৭৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার নন-ফান্ডেডসহ মোট ৩৪ হাজার ২৫৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বেনামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২১ হাজার ৭৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকার ফান্ডেড এবং এক হাজার ২৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার নন-ফান্ডেডসহ মোট ২২ হাজার ৭৭০ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণ সুবিধার প্রচলিত ব্যাংকিং নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। যার বিপরীতে পরিশোধও যৎসামান্য। ওই ঋণের যথাযথ ব্যবহার হয়নি এবং অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে যার প্রাথমিক প্রমাণও মিলেছে এবং চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের ১৯ হাজার ৭০১ কোটি ১১ লাখ টাকার ফান্ডেড এবং ১৫ হাজার ৮০১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার নন-ফান্ডেডসহ মোট ৩৫ হাজার ৫০২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। যার মধ্যে এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট ফান্ডেড বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৬৯২ কোটি দুই লাখ টাকা এবং ১৪ হাজার ৭৭ কোটি দুই লাখ টাকা ছিল নন-ফান্ডেড। অন্যান্য পরিচালকদের নামে আট হাজার নয় কোটি নয় লাখ টাকা ফান্ডেড ঋণ এবং নন-ফান্ডেড ঋণ রয়েছে এক হাজার ৭২৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংক থেকে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের দেওয়া ঋণের প্রায় সমপরিমাণ আর্থিক সুবিধা এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওই সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেছে। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২৬ (গ) (২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বা তাদের স্বার্থের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ-সুবিধার মোট পরিমাণ ব্যাংক-কোম্পানির টিয়ার-১ মূলধনের শতকরা ১০ ভাগের অধিক হবে না।বিধি-নিষেধ এড়ানোর কৌশল হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্যায়ে সমঝোতার ভিত্তিতে অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।
অফশোর ব্যাংকিং লুটপাট-
ইসলামী ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিভিন্ন বৈদেশিক আমদানি বিলবাবদ ৮৫ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার বা ১০ হাজার ২৮৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বৈদেশিক বিল পরিশোধের বিপরীতে খাতুনগঞ্জ শাখাকে নয় হাজার ৪৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ইন্টার ব্যাংক ডেবিট অ্যাডভাইস (আইবিডিএ) প্রেরণ করা হয়েছে। যা খাতুনগঞ্জ শাখা কর্তৃক সমন্বয় করা হয়নি। ফলে এ শাখা থেকে এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় মোট ১৯ হাজার ৭৪৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু ওই অর্থের যথাযথ ব্যবহার হয়েছে কি না, তার বিস্তারিত তথ্য উদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি।
এলসির নামে লুট সাড়ে ৮ হাজার কোটি-
এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিভিন্ন ইমপোর্ট এলসির বিল পরিশোধের বিপরীতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে খাতুনগঞ্জ শাখাকে আট হাজার ৬৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অসমন্বিত ইন্টার-ব্যাংক ডেবিট অ্যাডভাইস (আইবিডিএ) প্রেরণ করা হয়। যা এ শাখা থেকে সমন্বয় করা হয়নি। অর্থাৎ আমদানি দায় খাতুনগঞ্জ শাখার পক্ষে প্রধান কার্যালয় থেকে পরিশোধ করা হলেও শাখার গ্রাহক ওই অর্থ পরিশোধ করেনি। যা ছিল অন্যান্য ফান্ডেড বিনিয়োগ সুবিধার অতিরিক্ত।
ওদিকে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্লেসমেন্ট হিসেবে মোট সাত হাজার ৩১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। যার মধ্যে এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাত হাজার ২০৫ কোটি টাকা বিদ্যমান।
ব্যাংক কর্মকর্তা ও নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্লেসমেন্ট হিসেবে রক্ষিত সাত হাজার ২০৫ কোটি টাকা। যা মূলত পরোক্ষভাবে এস আলম গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিনিয়োগ ও প্রদান করা হয়েছে। যা বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে।
মুদারাবা সেভিংসের ১১০০ কোটি হাওয়া-
ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা সাব-অরডিনেটেড বন্ড হিসেবে ৩৭৪ কোটি এবং মুদারাবা পারপেচুয়াল বন্ড হিসেবে ৩৩০ কোটিসহ মোট ৭০৪ কোটি টাকা এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি ব্যাংকে মুদারাবা সেভিংস হিসেবে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু বিনিয়োগকৃত সেই অর্থ পরোক্ষভাবে এস আলম ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিনিয়োগ ও প্রদান করা হয়েছে। যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও সংশয় রয়েছে।এ ছাড়া ব্যাংকটির মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড থেকে এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি ব্যাংকে ৩৯৬ কোটি টাকা এমটিডিআর (মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রসিদ) হিসেবে রাখা হয়েছে। ওই বিনিয়োগ বিধিসম্মত কি না, তা যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে।
গ্রাচুয়িটি-প্রভিডেন্ট ফান্ডে লুটপাট-৩৫১ কোটি
ইসলামী ব্যাংকের কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ১৬২ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং গ্র্যাচুইটি ফান্ডের ১৮৮ কোটি ৪১ লাখ টাকাসহ মোট ৩৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি ব্যাংকে মুদারাবা সেভিংস বন্ড হিসেবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড ও জেনেসিস টেক্সটাইলস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড কর্তৃক এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেডের মূলধন বৃদ্ধির নিশ্চয়তাস্বরূপ সিন্ডিকেশন ঋণের ফ্যাসিলিটি এজেন্ট হিসেবে সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অব চায়নার অনুকূলে পৃথক পৃথকভাবে যথাক্রমে তিন কোটি মার্কিন ডলার, চার কোটি ও ১৯ কোটি মার্কিন ডলারসহ মোট ২৬ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমানের এসবিএলসি বা কাউন্টার গ্যারান্টি কাতারের দোহা ব্যাংকের অনুকূলে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইস্যু করা হয়। যার মাধ্যমে ০.৯০ শতাংশ থেকে ৩.২০ শতাংশ হারে ব্যাংক ১৮০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা মুনাফা বা সুদ পেয়েছে।
অথচ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে ৬ থেকে ৯ শতাংশ সুদ হার বিদ্যমান ছিল। ওই হারে মুনাফা বা সুদ ধরলে ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হতো ৬৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলারের মূল্য ১০০ টাকা ধরে)। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া এস আলম গ্রুপ ও এস আলমের বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত ঋণের বিপরীতে কম মুনাফা হিসেবে ৫৯৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং জাবেদা টেক্সটাইল, ইখলুস স্পিনিং মিলস ও আজহারুল স্পিনিং মিলস লিমিটেডকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৭১ কোটি চার লাখ টাকার ঋণ মওকুফ করার নামে ব্যাংকটির ক্ষতি সাধন করেছে। যা মূলত গ্রুপটির পকেটে গেছে বলে দুদক প্রমাণ পেয়েছে।