ইরানি-পাক তরুণীদের ‘হাইটেক যৌনতা’ কাজে লাগায় আইএসআই
রাত তখন পৌনে ন’টা৷ লাহোরের হোটেল রিজেণ্ট প্লাজার ৫০২ নম্বর রুম৷ ঘরের ভিতর টিভিতে চলছে খবর৷ তার মধ্যেই টুং-টাং শব্দে বেজে উঠল ঘরের বেল৷ দরজা খুলতেই হাসিমুখে ৬ ফুট লম্বা পাকিস্তানি যুবক৷ স্যর, আমার নাম আমজাদ৷ কোনও প্রবলেম হলে বলবেন৷ আমি আছি৷ রুম সার্ভিসের ছেলেরা সাধারণত বিশেষ ইউনিফর্ম পরে থাকে৷ ক্রিম রঙের আলখাল্লা পরা ছেলেটা কি তবে হোটেলের ম্যানেজার গোছের কেউ? আবার হেসে দরজা বন্ধ করে দিল ছেলেটা৷ মিনিট কয়েক পর দরজায় খুব আস্তে ঠক্ ঠক্ শব্দ৷ দরজা খুলতে আবার আমজাদ নামের সেই ছেলেটা৷
স্যর, কোনও অর্ডার দিতে হলে বলবেন৷ ‘অর্ডার’ মানে? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকাতেই এদিক-ওদিক তাকিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ল ছেলেটা৷ স্যর, এই এলাকার প্রত্যেকটি হোটেলেই আমার অবাধ যাতায়াত৷ আপনারা বিদেশি অতিথি৷ আপনাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখাটা আমাদের কর্তব্য৷
তাই বলছি … মানে স্যার, কী দরকার বলবেন৷ যে ব্র্যান্ডের মদ চান, আমি নিয়ে আসব৷ আর তা ছাড়াও যা বলবেন … মানে ইরানি চাই? না চাইনিজ? পাকিস্তানি বা আফগান, যা বলবেন আধ ঘণ্টার মধ্যে এসে হাজি হবে আপনার সামনে৷ ছেলেটা কী বলতে চায়? ইরানি, চিনা মদ না কি ..৷ ছেলেটা বলে চলেছে, স্যর., প্রত্যেকটা মেয়েই অসাধারণ সুন্দরী৷ যেরকম চান, সেরকমই পাবেন৷ তাদের কাছ থেকে যা চান, তা-ই পাবেন৷ প্রত্যেকে প্রশিক্ষিত৷ প্রত্যেকে ম্যাসাজে এক্সপার্ট৷ সুন্দরী, এক্সপার্ট এই শব্দগুলো তখন মাথায় ঘুরছে৷
ততক্ষণে আমজাদ বের করে ফেলেছে মোবাইল৷ হাসিমুখে চোখের সামনে মেলে ধরেছে স্ক্রিন৷ স্ক্রিনে ফুটে উঠছে একের পর এক ইরানি, চিনা, আফগান, পাকিস্তানি সুন্দরীর ছবি৷ চোখের সামনে ভেসে উঠল বলিউডি ছবি ‘এক থা টাইগার’-এর দৃশ্য৷ সেখানে সুন্দরী আইএসআই এজেণ্ট ক্যাটরিনা কাইফ নজরদারি চালাচেছ লন্ডনের এক বিজ্ঞানীর উপর৷ তার সন্ধানে গেলে পড়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সলমন খান৷ তাহলে সিনেমার গল্পটা একেবারে মিথ্যা নয়৷ না, আমজাদ ছেলেটাকে একটু ‘কালচার’ করার প্রয়োজন৷ তাকে বসতে বললাম৷ বন্ধুর মতোই বিছানার উপর বসল সে৷ আবার আমজাদের মুখে অনাবিল হাসি৷ কিন্ত্ত পাকিস্তানে এভাবে অবাধ যৌনতা চলে, বিদেশি অতিথিদের জন্য বিদেশি তরুণী …৷
স্যর, বহু বিদেশিকেই মেয়ে অফার করলে তাঁর একটু অবাকই হন৷ কিন্তু যে দেশে চিন আর মধ্য প্রাচ্যের টাকা উড়ে বেড়াচ্ছে, যেখানে দেশ থেকে কাজের সঙ্গে সঙ্গে মধু খাওয়ার লোভে চিন আর আরব দেশের লোকেরা আসছে, সেখানে আর মেয়েদের দোষ কী? ইরান আর আফগানিস্তানের মানুষের আর্থিক অবস্থা জানেন? পাকিস্তানের গ্রামের অবস্থা জানেন? কেন, আপনাদের দেশ ভারতের গ্রামের মেয়েদেরও যে কলগার্ল বানানো হয়৷ এখানেও তাই৷ ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের কাজের টোপ দিয়ে নিয়ে আসা হয় ইসলামাবাদ বা লাহোরে৷ সেখানে তাদের দেওয়া হয় এসকর্ট বা কলগার্ল হওয়ার ট্রেনিং৷
ইসলামাবাদ ও লাহোরের মতো বড় শহরগুলির বড় হোটেলে পাঠানো হয় এই মেয়েদের৷ আরব শেখদের বিশেষ পছন্দ ইরানি সুন্দরী৷ আবার চিনা অতিথিদের পছন্দ চিনা তরুণী৷ এমনকী পাকিস্তানের বহু কলেজের মেয়েরাও এগিয়ে এসেছে শরীরের বিনিময়ে টাকা রোজগারের জন্য৷ কিন্তু এর পরবর্তী তথ্য যে আরও সাঙঘাতিক৷ জানা গেল, এই ইরানি, পাকিস্তানি তরুণীদের একটা অংশকে একদিকে বেছে নেয় পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য৷ অন্যদিকে লাহোর থেকে একটু দূরে মুরিদকেতে লস্কর-ই-তৈবার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বেশ কিছু মেয়েকে পাঠানো হয় ফিঁদায়ে বা আত্মঘাতী বাহিনী তৈরির জন্য৷
ইরানি আর পাক তরুণীদের এই ‘হাইটেক যৌনতা’ কাজে লাগায় আইএসআই৷ নজরদারি করার জন্য, খবর তোলার জন্য এই সুন্দরীদের তারা সীমান্ত পেরিয়ে পাঠিয়ে দেয় কাশ্মীরে৷ সেখান থেকে প্রয়োজনে তাদের পাঠানো হয় অন্য শহরেও৷ আবার যে বিদেশিদের মনোরঞ্জন করালে কিছু খবর জুটতে পারে, তাদের আনন্দের জন্যও আইএসআই হোটেলে পাঠায় এই সুন্দরী যুবতীদের৷
লাহোর শহরেই রয়েছে হিরামণ্ডি৷ এখনও হিরামণ্ডির গলিতে ঘুরলে শুনতে পাওয়া যায় গজলের আর সারেঙ্গির সঙ্গে ঘুঙুরের শব্দ৷ পাকিস্তানের নামকরা বাইজি পাড়া এই হিরামণ্ডি৷ সেখানে রয়েছে বেশ বড়সড় একটি যৌনপল্লিও৷ সেখানেও রয়েছে সুন্দরী যৌনকর্মীরা৷ কিন্ত্ত মধ্য প্রাচ্য, চিন বা ইউরোপ থেকে আসা বিদেশিরা যান না হিরামণ্ডিতে৷ তাঁদের জন্য রয়েছে আমজাদরা৷ আর রয়েছে পাকিস্তানের ‘হাইটেক যৌনতা’৷