ইমামের কৃতজ্ঞতা-প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভ্যান যাচ্ছে যাদুঘরে
টুঙ্গিপাড়া প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী টুঙ্গিপাড়ার ভ্যান চালক ইমাম শেখ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনার প্রতি। আর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী সেই ভ্যান চলে যাচ্ছে যাদুঘরে ।
আজ রবিবার বিমান বাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির স্কোয়ার্ডন লিডার হারুন-উর-রশিদ ও স্কোয়ার্ডন এ্যাসিট্যান্ট লিডার দেলোয়ার হোসাইনসহ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা টুঙ্গিপাড়ার সরদারপাড়া গ্রামে ইমাম শেখের বাড়িতে গিয়ে ইমাম শেখের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী টুঙ্গিপাড়ার ভ্যান চালক ইমাম শেখের মনের বাসনা পূরণ হয়েছে। তার অব্যক্ত মনের আশা পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য, সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন ইমাম শেখ।
প্রধানমন্ত্রী রিকশা ভ্যানে চেপে শুক্রবার সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় নিজ এলাকা ঘুরে দেখেন। হাস্যোজ্জ্বল শেখ হাসিনা কোলে নাতিকে নিয়ে বসেন ভ্যানের সামনের দিকে; অন্য পাশে ভাগ্নে ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। পেছন দিকে বসেন রাদওয়ানের মেয়ে ও স্ত্রী পেপি সিদ্দিক।
প্রধানমন্ত্রী যে ভ্যানে চেপে পৈত্রিক এলাকা ঘুরে দেখেন তার চালক ইমাম শেখ। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া উপজেলার পাটগাতী সরদার পাড়া গ্রামে। ১৭ বছর বয়সী ইমাম ভ্যান চালান দুই বছর ধরে। পঞ্চম শ্রেণিতে আটকে যায় ইমামের পড়াশোনা। এখন জীবনযুদ্ধ চলে ভ্যান চালিয়ে; যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। তার বাবা আব্দুল লতিফ শেখ মানসিক রোগী, মা গৃহিণী। ইমাম শেখরা দুই ভাই, তিন বোন।
ইমামের বড় ভাই সাদ্দাম শেখ ঢাকায় সম্প্রতি চাকরি পেয়েছেন; এখনও বেতন পাননি। বোন রেক্সনা ও সোহাগী আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোন নাদিরা বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
শনিবার ইমাম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বারবার একটি চাকরি দেয়ার কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমার ভ্যানে চড়ে ঘুরবেন- এমনটা কোনোদিনও কল্পনা করতে পারিনি। এ আনন্দে শেষ পর্যন্ত আর মনের কথা বলতে পারিনি।’
অবশেষে ইমাম শেখের মনের আশা পূরণ হলো। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে তার চাকরি হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ইমামের ভ্যান চলে যাচ্ছে যাদুঘরে। ইমামের বাবা মানসিক রোগী আব্দুল লতিফ শেখের চিকিৎসা ও ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল ১১টার দিকে বিমান বাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির স্কোয়ার্ডন লিডার হারুন-উর-রশিদ টুঙ্গিপাড়ার সরদারপাড়া গ্রামে ইমাম শেখের বাড়িতে গিয়ে ইমাম শেখের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। এরপর তিনি ইমাম শেখের অসুস্থ পিতার চিকিৎসা ও ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন ইমামের মা শাহানূর বেগমের হাতে। এ সময় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির স্কোয়ার্ডন এ্যাসিট্যান্ট লিডার দেলোয়ার হোসাইনসহ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা, টুঙ্গিপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি বিএম গোলাম কাদের স্বাক্ষী হিসেবে ইমাম শেখের নিয়োগ পত্রে স্বাক্ষর করেন। দুপুর ১২টার দিকে ইমাম শেখ ব্যাগ ব্যাগেজ ও ভ্যান নিয়ে বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে যশোরের উদ্দেশে রওনা দেন।
বিমান বাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির স্কোয়ার্ডন লিডার হারুন-উর-রশিদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইমামকে বিমান বাহিনীতে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার নিয়োগপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভ্যান আমরা যশোর নিয়ে যাচ্ছি। পরে এ ভ্যান যাদুঘরে পাঠানো হবে।