ইউরোপে বাংলাদেশি জাল ভিসা পাসপোর্টচক্রের অভিবাসন জালিয়াতি
গ্রীস থেকে জেড এইচ খান : ইউরোপে যাওয়ার ভুয়া কাগজ তৈরির দু’টি চক্রের ১৯ জনকে গ্রিস ও চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেপ্তার করেছে ইউরোপোল৷ একটি চক্র বাংলাদেশিদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় বলে জানা গেছে৷ তবে আটকদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি তা জানা যায়নি৷
গত ২৫ মে এই দু’টি জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ ইউরোপোল অভিযান পরিচালনা করে৷ ইউরোপোলের দাবি, গ্রিসের এথেন্সভিত্তিক দুটি চক্র এই জাল ট্রাভেল ডকুমেন্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত, যার একটি বাংলাদেশিরা চালায়৷
ইইউ’র জাল পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে প্রতিটি তিন হাজার ৬০০ ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি করে তারা৷ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব জাল কাগজপত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়৷
ইউরোপোল বলছে, বাংলাদেশিদের চক্রটি গত বছর এসব কাগজপত্রের অন্তত ১২৬টি চালান কুরিয়ারে মাধ্যমে পাঠিয়েছে৷ জালিয়াতিতে জড়িত অন্য চক্রটি সুদানিদের এবং গত বছর তারা কুরিয়ারে পাঠিয়েছে ৪৩১টি চালান৷
এই অপরাধীরা বিভিন্ন সীমান্তে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে গ্রিসের পুলিশ জানায়৷ এথেন্স থেকে এই চক্রের ১৬ জন এবং চেক রিপাবলিক থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ইউরোপোল জানিয়েছে৷ তবে জাল কাগজ ব্যবহার করায় আরো সাতজনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে৷ গ্রিস ও অন্যান্য দেশে এসব কাজে জড়িত আরও প্রায় ১০০ জনকে এখনো খোঁজা হচ্ছে ৷
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এথেন্সভিত্তিক এই দুটি জালিয়াত চক্র পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, শেঙেন ভিসা (ইউরোপের ২৬টি দেশে অবাধে চলাচলের অনুমতিপত্র), ড্রাইভিং লাইসেন্স, শরণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রেসিডেন্স পারমিট জাল করে ৷
এ দুটি চক্রের পাশাপাশি চেক প্রজাতন্ত্রে আরেকটি চক্র সক্রিয় থাকার কথা জানিয়ে ইউরোপোল বলেছে, ওই চক্রটি চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া পরিচয়পত্র ও ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র কেনে৷ তারপর এথেন্সের ওই চক্রগুলোর কাছে সেগুলো পাঠালে তারা তাতে ঘষামাজা করে মক্কেলদের ব্যবহারের উপযোগী করে ফেরত পাঠায়৷ এরপর চেক প্রজাতন্ত্র থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তা পাঠানো হয়৷ এই চক্রটি ভুয়া শেঙেন ভিসা তৈরিতেও জড়িত বলে ইউরোপোল জানিয়েছে৷
বাংলাদেশের অভিবাসন বিষয়ক গবেষক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সাবেক কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা জানান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন অনেক কঠিন হওয়ায় সেখানে এইসব জালিয়াত চক্র গড়ে উঠেছে৷ গ্রিসের মতো অনেক দেশে এখনো অনেক অবৈধ বাংলাদেশি আছে৷ চাহিদা থাকায় এবং অর্থের লোভে সেখানে বাংলাদেশিরা জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ছে৷
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এরকম চক্র আগে থেকেই আছে ৷ এখন ইউরোপেও এ ধরণের চক্র গড়ে উঠেছে৷ তবে এর সঙ্গে শুধু বাংলাদেশিরাই নয় অন্য আরো অনেক দেশের নাগরিকই জড়িত৷ মেরিনা সুলতানা মনে করেন, এই অপরাধী চক্রে বাংলাদেশিদের জড়িত থাকার বিষয়টি বাংলাদেশের ইমেজের জন্য ক্ষতিকর৷