ইউপি নির্বাচনে সর্বশেষ-৭ খুন
বিশেষ প্রতিনিধি : চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ দফার নির্বাচনে কুমিল্লা, নরসিংদী, রাজশাহীর বাঘমারা ও ঠাকুরগাঁওয়ে ভোট কেন্দ্রে সহিংসতায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
আজ শনিবার দেশের ৪৭ জেলার ৮৮ উপজেলার ৭০৩ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ চলাকালে এসব সহিংসতা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে সকাল ৮টার পরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাধবপুর ইউনিয়নের চানলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সামনে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাপসচন্দ্র দাস নামের এক যুবককে হত্যা করে। এ সময় আহত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ আরো ১০ জন।
জানা গেছে, আজ শনিবার বিকাল তিনটার দিকে নরসিংদী সদরের পাড়াতলী ইউনিয়নে মধ্যনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
ভোট কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনায় হোসেন মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। আর আহত হন আরো কয়েকজন। নিহত হোসেন মিয়া মধ্যনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে।
আর ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গিতে নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত হয়েছেন। আর এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। আজ শনিবার ভোটগ্রহণ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের মাছফুরিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে দুপুরে ভোট চলাকালীন দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে মাহবুবুর রহমান পল্টু (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হন। পল্টু মাছফুরিয়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর দেয়া তথ্যমতে, দেশের নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধ, নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে ছয় সহস্রাধিক।এছাড়া, রাজশাহীর বাঘমারায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক। কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বাঘমারা থানার ওসি ও এক এএসআইকে। নিহতরা হলেন- উপজেলার সরঞ্জি ভাসুপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান (২৮), ছহির উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম বুলু (৩৮) এবং মনতাজ আলী (৩৫)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
এই সংঘর্ষের ঘটনায় বাঘমারা থানার ওসি মতিয়ার রহমান ও এএসআই আমিনুল ইসলামসহ কমপক্ষে ছয় পুলিশ আহত হয়েছেন। আজ শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বাঘমারা উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়ায় সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আউশপাড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সরদার জান মোহাম্মদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন আউশপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুজ্জামান শহীদ।
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন স্থানীয় এমপি এনামুল হককে শোকজ করে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। এরপর থেকে উপজেলার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের তুমুল বিরোধের সৃষ্টি হয়। প্রায় প্রতিদিনই ছোট খাট সংঘর্ষ চলতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকেলে হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুজ্জামানের সমর্থকরা নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় আনন্দ করতে থাকে। ওই সময় তাতে হামলা করে দলীয় প্রার্থী জান মোহাম্মদের সমর্থকরা। এতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। লাঠি-সোটা, হাসুয়া, রামদা নিয়ে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এ সময় দুপক্ষের মাঝে গুলি বিনিময় ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে জান মোহাম্মদের সমর্থকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা বাগমারা থানার ওসি মতিয়ার রহমান ও এএসআই আমিনুল ইসলামকে ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এতে ওসি মতিয়ার রহমান গুরুতর জখম হন।
এএসআই আমিনুলের একটি আঙ্গুল কেটে মাটিতে পড়ে যায়। হামলায় আরও চার পুলিশ আহত হন। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালালে গুলিতে নিহত হন চারজন। গুরুতর আহত আরো কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশিদ আলম জানান, আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ গুলি ছোড়লে দু’জন নিহত হন। অপর একজন সংঘর্ষে মারা গেছেন বলে তিনি জেনেছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।