• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি হাওয়া-


প্রকাশিত: ১২:০৬ এএম, ১০ অক্টোবর ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩২ বার

 

শফিক রহমান : এবার ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী হাওয়া হয়ে গেছেন। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বুধবার ৯ অক্টোবর তিনি ব্যাংকে যাননি। তাঁর বাসায় গিয়েও নানা কারণে আলোচনায় থাকা শীর্ষ এই ব্যাংক নির্বাহীর দেখা পাননি ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। তাহলে কি ব্যাংকের এমডি নিখোঁজ? নাকি কোথাও আত্মগোপন করেছেন নাকি পলাতক হয়েছেন!! তা কোনভাবে জানতে না পেরে বেসরকারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. ফরিদউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছেন এমডি হাওয়া হয়ে গেছেন-কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না-এমডি নিঁখোজ।

বিশেষ একটি সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন, ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি সমুদ্রপথে ভারত হয়ে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছেন। এলক্ষ্যে মোকাম্মেল হক চৌধুরীর হয়ে কাজ করছে এস আলমের চট্টগ্রাম অফিসের লোকজন। মোকাম্মেল হকের কাছে এস আলমের অনেক সম্পত্তির কাগজপত্র রয়েছে। সেগুলো নিরাপদে এস আলমের কাছে পাঠাতে কিংবা ঘনিষ্ট লোকজনের কাছে হস্তান্তর করতে চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন মোকাম্মেল হক চৌধুরী। এক্ষেত্রে তিনি যাতে বিদেশে পালাতে না পারেন সেদিকে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি জরুরি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন, মোকাম্মেল হক চৌধুরীর বিষয়টি আলোচনায় আসে আজ বুধবার ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের এক সভায়। জানানো হয়, আজকের পূর্বনির্ধারিত সভায় যোগ দেওয়ার জন্য এমডিকে পাওয়া যায়নি।
ওই সভার সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমডি নিখোঁজের ঘটনায় ইউনিয়ন ব্যাংককে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কাউকে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থে ব্যাংকটির পরিচালকদের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সভায় পরিচালকেরা জানান, তাঁরা দায়িত্ব নিলেও ব্যাংকটির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে এখনো জানতে পারেননি।

আরও কয়েকটি ব্যাংকের মতো ইউনিয়ন ব্যাংকের মালিকানা ছিল বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকটির ঋণের ১৮ হাজার কোটি টাকা বা ৬৪ শতাংশই নিয়েছে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় পরিচালকেরা জানান, এমডি বুধবার অফিসে যাননি। তাঁর বাসায় লোক পাঠিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাসাটি তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।

এর আগে বুধবার সকালেই এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী নাজনীন আকতারের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে হিসাব স্থগিতের নির্দেশনা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহকরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, তারা হিসাব থেকে টাকা তুলতে না পারলেও এমডি মোকাম্মেল হক তাঁর বেতনের পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন। আমাদের হাতে তথ্য রয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি ২ ও ৩ অক্টোবর ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি ২ লাখ টাকা ও ৫ সেপ্টেম্বর ৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। একই দিন বেতনের ১০ লাখ ৮ হাজার ২৪২ টাকা জমা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর ওই হিসাবে জমা হয় আরও ৪২ লাখ টাকা। এরপর তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার টাকা, ২ অক্টোবর ৫০ লাখ টাকা এবং ৩ অক্টোবর ৫০ লাখ ও ৫৩ লাখ টাকা তোলেন।

এর আগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদও ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।