ইউটিউবারের কেরামতি-কম দামে মাংস বিক্রি করে একে-৪৭ ঝামেলায় খলিল-আলমগীর
লাবণ্য চৌধুরী : কম দামে মাংস বিক্রি করতে গিয়ে হুমকি’র মুখে পড়ে হুমকিদাতাদের ভয় দেখাতে ‘আমার কাছে যে একে-৪৭ আছে, তা এমপি-মন্ত্রীর কাছেও নাই’ বলেছিল রাজধানীর শাহজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিল। দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর অনুসন্ধানে এর নেপথ্যে বেরিয়ে এসেছে আসল তথ্য।
শাহজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিল দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, এই বক্তব্যে সে ৩ মাস আগে আরেক মাংস ব্যবসায়ী রায়েরবাগের আলমগীরকে বলেছিল টেলিফোনে। খলিল জানান, রমজানে সরকারের পক্ষে কম লাভে মাংস বিক্রির কারণে তিনি হুমকির মুখে পড়েন।
অনেকে তাকে মুনাফালোভীদের পক্ষ নিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এজন্য সে আলমগীরের সঙ্গে কম দামে মাংস বিক্রি নিয়ে কথা বলছিল মোবাইল ফোনে। কারণ, আলমগীরও ইতিমধ্যে কম দামে তার এলাকায় মাংস বিক্রি করছিল। কিন্তু আলমগীর লাভ করতে না পেরে দাম বাড়িয়ে দেয়।
ওদিকে আলমগীরও দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে তাদের ফোনালাপের কথা স্বীকার করেছে। এমনকি তার কাছ থেকে ইউটিউবার ভয়েস রেকর্ডটি নিয়ে তা ছেড়ে দেয় বলেও স্বীকার করেছে। আলমগীরও ৬০০ টাকা দরে মাংস বিক্রি করেছিল রায়েরবাগ মেরাজনগরে।
যাহোক, মোবাইলে অটো রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় সেটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ” এক ইউটিউবার”। ওই ইউটিউবার হয়ত জানেই না যে সাংবাদিকতায় যে কোন তথ্য’র সত্যতা যাচাইয়ে ”ক্রসচেক” করার বিধান রয়েছে। একপক্ষ শুনে রিপোর্ট করলে যে একপেশে হবে এবং সেটা অন্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে সেটা ইউটিউবার কেয়ার করেনি।ফলে কম দামে ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করা খলিল বিপাকে পড়েছেন হুমকিদাতাদের ভয় দেখাতে তার কাছে যে একে-৪৭ আছে সেটা এমপি মন্ত্রীর কাছেও নেই বলে ফেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি মন্ত্রীদের কাছে একে ৪৭ থাকেনা। এটি বেআইনি অস্ত্র। এমপি মন্ত্রীদের সঙ্গে সরকারের দেয়া গানম্যান থাকে। কিন্তু ওই গানম্যানদের কাছেও একে ৪৭ থাকেনা।আলমগীর জানান, তিনি রায়েরবাগ শনির আখড়ার ”আল্লারদান গোস্তের দোকান ” এর মাংস ব্যবসায়ী।
আলমগীর ও খলিলের কথোপকথন এর কল রেকর্ডটি ৩ মাস আগে একবারই কথা হয়েছিল।সেটিই এক ইউটিউবার হাতিয়ে নিয়ে নিজের চ্যানেলের ভিউ বাড়াতে তা ইউটিউবে চ্যানেলে ছেড়ে দেয়। ওই ইউটিউবার খলিল-আলমগীরের কথোপকথন ”ক্রসচেক” করলে রিপোর্টে সত্য বের হতো। আসলেই খলিলের কাছে একে ৪৭ আছে কিনা কিংবা এটা কেউ কাউকে আত্মরক্ষার্থে বলছে কিনা সেটা ছিল তদন্তসাপেক্ষ।
এজন্য গোয়েন্দার সংস্থার সহায়তা নিয়ে কিংবা নিজেই অনুসন্ধান করে তথ্য বের করতে হতো। কিন্তু ওই ইউটিউবার একপক্ষের তথ্য নিয়ে তা চ্যানেলে ছেড়ে দিয়ে ”ক্রসচেক” না করায় অভিযুক্ত। এখানে ”কম দামে মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মুনাফাখোরি মাংস ব্যবসায়ীদের ইন্ধন থাকতে পারে? যেটা কাজে লাগিয়েছেন ওই ইউটিউবার।
ওই ইউটিউবারের চ্যানেলে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি কল রেকর্ডে এ কথা বলতে শোনা যায় খলিলকে। ওই ফোনালাপ এখানে হুবহু তুলো ধরা হলো:-খলিল বলেন, ‘আমার যে আর্মস বা গান আছে তা বাংলাদেশের তিনটা ব্যক্তির কাছে আছে। সবচেয়ে দামি দামি গান। একে-৪৭ এমপি মন্ত্রীর কাছেও নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার যদি কিছু না থাকত তাহলে তারা অনেক ক্ষতি করত। এদিকের মাংস ব্যবসায়ীরা অনেক শক্তিশালী। অনেক টাকার মালিক। তারা অনেক দিক দিয়ে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতেছে। কত দোষ গুণ খুঁজতেছে কিন্তু পাচ্ছে না। ওরা জানে আমার সামনে এলে ওরা কেউ বেঁচে থাকতে পারবে না। আপনাদের গর্ব এই একটা মাংস ব্যবসায়ী খলিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি মাংস ব্যবসায়ীদের এতটা ভালোবাসি যে, আমার দ্বারা কারও কোনো ক্ষতি হবে না। মাংস ব্যবসায়ীদের আমি পনেরো দিন পর এনে তেহারি কাচ্ছি খাওয়াই । যা মন চায় খাওয়াই । আল্লাহ দিছে খা। আমার পোলাপানগুলো খাইলে আমার কেমন খুশি লাগে সেটা বলে বোঝাতে পারব না। ফাইব স্টার হোটেলের যে প্লেট আছে সে রকম প্লেট আমি কিনে আনছি। আমার দোকানের লোকেরা খাবে। ওদের দিয়েই আমি টাকা ইনকাম করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার গোস্তের দোকানে ৪টা লোক আছে ২৫ বছর ধরে। মাংস ব্যবসা শুরুর থেকে। তারা আমার ছেড়ে যায় না। আজ পর্যন্ত আমি আমার স্টাফদের একটা শালা বলেও গালি দেয় নাই। আমার লস হলেও ওদের কোনো দিন বলি নাই যে, আজ আমার লস হয়ছে। আমার দোকানের একটা স্টাফ আমার বন্ধু ২ কোটি টাকার মালিক।’