• শনিবার , ১০ মে ২০২৫

আ’ লীগ হঠাতে বিএনপি ছাড়া সব দলের শাহবাগ অবরোধ


প্রকাশিত: ৯:৪৯ পিএম, ৯ মে ২৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭ বার

 

বিশেষ প্রতিনিধি : এবার আওয়ামী লীগ হঠাতে শাহবাগ অবরোধ হয়েছে। বিএনপি ছাড়া সব দল অংশ নিয়েছে এ কর্মসূচিতে। বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। আজ শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টায় তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে ফোয়ারার সামনে একই দাবিতে গণজমায়েত শুরু হয়।

এতে হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই মঞ্চ, জুলাই ঐক্য, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা সবাইকে একত্র করতে এই জমায়েতের ব্যবস্থা করেছি। এখান থেকে গিয়ে আমরা এখন আমরা শাহবাগ অবরোধ করব।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতিহাসের প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত লেগে রয়েছে। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে তারা হত্যা-খুন করেছে। ভারতীয়দের সহায়তায় আমাদের দেশপ্রেমিক বিডিআরদের পিলখানায় হত্যা করা হয়েছে। শাপলায় গণহত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের ফিরিস্তি অনেক দেওয়া হয়েছে, আর নয়। আওয়ামী লীগ নামের ভাইরাস নিয়ে এ বাংলাদেশে থাকতে চাই না।এ সময় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলেও ঘোষণা দেন এনসিপির এই নেতা।

আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে পুরো বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।অবরোধ কর্মসূচি থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নাহিদ বলেন, ‘ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে আসলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারো ঢাকা শহরে মার্চ করবে।তিনি আরও বলেন, ‘দাবি আদায়ে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

সেইসঙ্গে দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে জুলাইয়ের সব শক্তি এক থাকবে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন নাহিদ।এদিকে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধসহ তিনটি দাবি জানিয়েছেন এনসিপির এই নেতা।পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।’

ফ্যাসিবাদের পতন হতেই হবে : হাসনাত

যে শাহবাগে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছিল, সেই শাহবাগেই ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পতন হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ।অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে হাসনাত বলেন, ‘যে শাহবাগে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছিল, সেই শাহবাগেই ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পতন ঘটবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমাদের জুলাইয়ের সব শক্তির ঐক্যবদ্ধ লড়াই চলবে।’

বিএনপিকে কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান সারজিসের: অবরোধের পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়।আজ বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

পোস্টে সারজিস আলম লিখেছেন, বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ব্যতীত সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে।তিনি আরও লিখেছেন, বিএনপি আসলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়। আজকের এই শাহবাগ ইতিহাসের অংশ এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির মানদণ্ড।এদিকে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাগুলো থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা গেছে। ফলে শাহবাগে বেড়েই চলেছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের সেক্রেটারি মো. শামীম কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘আমি গাজীপুর থেকে আন্দোলনে এসেছি। আমরা চাই এই দেশ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ করা হোক। এই দেশে তাদের আর কোনো স্থান নাই। তারা নিরীহ মানুষ মেরেছে। নিরীহ মানুষকে শান্তিতে ঘরে থাকতে দেয় নাই। এই দেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

টাঙ্গাইল থেকে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন সুজন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই যোদ্ধা। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তারা আমাদের ২ হাজারেরও বেশি ভাই-বোনকে হত্যা করেছে। অগণিত মানুষকে আহত করেছে। তাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।তিনি আরও বলেন, ‘নয় মাস পর হলো, অথচ এখনো এই খুনি দলকে নিষিদ্ধ করা হয় নাই। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ইউনূস স্যার কেন এটা নিয়ে কালক্ষেপণ করছে সেটা বুঝছি না। যাই হোক না কেন, আমরা মাঠে যেহেতু নেমে গেছি, আমরা মাঠ থেকে আর উঠব না, যতদিন না এই দলকে নিষিদ্ধ করা হয়।’

এদিন দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার পূর্ব পাশে ফোয়ারার সামনে তৈরি এই মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে তারা মঞ্চের সামনেই জুমার নামাজ আদায় করেন।এদিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রাস্তার দিক থেকে কাকরাইল মসজিদের দিকের রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত এই জমায়েতে সব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী শক্তি ও ছাত্র-জনতাকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।হাসনাতের ঘোষণার পরপরই শুরু হয় মঞ্চ তৈরির কাজ।আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে জমায়েতের ঘোষণা দেন হাসনাত।

যমুনার পূর্ব পাশে সার্ক ফোয়ারার সামনে এ গণজমায়েত হবে জানিয়ে এতে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।হাসনাত বলেন, ‘সার্ক ফোয়ারার সামনে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বাদ জুমা জনসমুদ্র হবে। আজকে তারা বুঝতে পারবেন কারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়।’ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাত থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও এ বিক্ষোভ চলছে।

আজ সকাল আটটার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে কয়েকশো নেতাকর্মী অংশ নেন এ বিক্ষোভে। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতেই যমুনার সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সহকারী মহাসচিব মুফতি সৈয়দ এসহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাহবুব নাহিয়ানসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন। আজ ৯ মে বাদ জুমা যমুনার সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশেও যোগ দেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন ।ওই পোস্টে তিনি লেখেন: ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত দশটা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

রাত ২টার দিকে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। আমরা সরকারের বাইরে এবং ভেতরে সেই দাবি বলেছি। কিন্তু আজকে নয় মাস পরেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য আমাদের আবার রাজপথে নামতে হয়েছে।’অবস্থান কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ব্যান আওয়ামী লীগ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এর আগে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানান যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তিনি লেখেন, ‘নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।’আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী বলে আখ্যায়িত করে তিনি আরও লেখেন, ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।’