আড়ংয়ের সেই লম্পটের অপকর্ম শিকার-
বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে আড়ংয়ের সেই লম্পট সজিব আদালতে অপকর্মের শিকার করে জবানবন্দী দিয়েছে। নারী কর্মীদের পোশাক পরিবর্তনের ছবি তুলে প্রতারণার দায় স্বীকার করেছেন গ্রেফতার হওয়া সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজীব বলেছেন, সে গোপনে ১১ নারী কর্মীর ৩৬টি ভিডিও ধারণ করেছিলেন।
এক দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার সজীবকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।আদালতের সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে তিনি সজিব বলেন, আড়ংয়ে কাজ করার সময় নারীদের পোশাক পরিবর্তনের ছবি তোলেন। এরপর সেই ছবি ফেসবুক, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান।
ডিএমপির সাইবার অপরাধ দমন বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম জাতিরকন্ঠ কে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজিব আড়ংয়ের ‘কর্মচারী ড্রেসিং রুম’থেকে ভিডিও ধারণের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। তিনি জানিয়েছেন, আড়ংয়ে চাকরিকালীন তিনি চতুর্থ তলার কর্মচারী পোশাক পরিবর্তন রুমের বাইরের সানসেটে দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে গোপনে এসব ভিডিও ধারণ করেছিলেন। এক বিক্রয় কর্মীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্ব শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এস আই ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সাইবার অপরাধ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সজীব আড়ংয়ের বনানী শাখায় বিক্রয় কর্মী ছিলেন। ওই সময়ই তিনি নারীদের পোশাক পরিবর্তন কক্ষ থেকে গোপনে ১১ নারী কর্মীর ৩৬টি ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন। যা দিয়ে পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কখনও তিনি ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি করেছেন আবার কখনও ভিডিও কলে শরীর প্রদর্শনসহ নানা বিকৃত দাবি করেছেন তাদের কাছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ঘটনা যানাজানি হয় গত ১৬ জানুয়ারি। ওই দিন বনানী শাখায় আড়ংয়ের কর্মরত এক নারী একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর ৯৫৫। ওই জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে সিরাজুল ইসলাম সজীব সীমান্ত সৈকত নামে আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলে। তার কথামত ওই নারী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের জন্য পোশাক পরিবর্তন রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় তার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে। এ সময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলে এবং তার কথামতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেয়। এরপর বিষয়টি উল্লেখ করে ভুক্তভোগী ওই নারী ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিমের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে শনিবার দুপুরে কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে সিরাজুল ইসলাম সজীবকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপির সাইবার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতারক সিরাজুল ইসলাম প্রথমত তার নারী সহকর্মীদের বিনা অনুমতিতে ভিডিও ধারণ করে অপরাধ করেছে। দ্বিতীয়ত তিনি ওই ভিডিও ফেসবুকে পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে ব্লাকমেইলিং করেছেন। এর আগেও তিনি তার এক বান্ধবীর কিছু ভিডিও ধারণ করেছিলেন। মেয়েটার সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর ওই ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইলিং শুরু করেছিলেন। পরে মেয়েটি এ বিষয়ে ব্র্যাকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। পরে ব্র্যাক তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সজিবকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলো। পরে তিনি তার নারী সহকর্মীর ধারণ করা ভিডিও তাদের কাছে পাঠান। প্রথম দিকে ওই নারী সহকর্মী তার ব্ল্যাকমেইলিংএ সাড়া দিলেও পরবর্তীতে আড়ংয়ের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বিষয়টি সাইবার ক্রাইমকে অবহিত করেন।
এদিকে এ ঘটনায় আড়ংয়ের সকল অফিসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। নারী বান্ধব আড়ংয়ের মত প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরণের অভিযোগ অনেকের কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আড়ং কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত সজীবকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে তাকে চাকরিচ্যূত করে বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করেছে।আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম জাতিরকন্ঠ কে জানান, গত ডিসেম্বর মাসে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তার কাছে আগের করা সব ভিডিও সংরক্ষিত ছিল। সিরাজুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আড়ং যেকোন যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সর্বদা কঠোর অবস্থানে থাকে।