‘আসল বাংলাদেশের’ সামনে পড়তে হচ্ছে না স্মিথদের!
টেলিগ্রাফ অবলম্বনে নীপা খন্দকার.ঢাকা: জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পরই প্রশ্ন উঠেছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেন ওয়ানডে সিরিজ নেই? বিসিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রসিকতার সুরেই তখন জানিয়েছিলেন, ‘ওরা অনেক আগেই হয়তো অনুমান করেছে, ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দুর্দান্ত হয়ে উঠবে।
এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলতে রাজি হয়নি!’ অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ অবশ্য রসিকতা নয়, গুরুত্বের সঙ্গে জানাচ্ছে, ‘আসল বাংলাদেশের’ সামনে পড়তে হচ্ছে না স্মিথদের!
‘বাংলাদেশের আসল শক্তির সামনে পড়তে হচ্ছে না স্মিথদের’ শিরোনামে আজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টেলিগ্রাফ। ‘আসল শক্তি’ বলতে ওয়ানডেতে মাশরাফিদের দুর্দান্ত হয়ে ওঠার চিত্রই তুলে ধরেছে টেলিগ্রাফ। আইসিসির বর্তমান ওয়ানডে র্যাঙ্কিং বলছে, বাংলাদেশের অবস্থান সাতে। কিন্তু গত ২১ নভেম্বর থেকে ১৫ জুলাইয়ের পরিসংখ্যানে চোখ বোলালে বাংলাদেশকে রাখতে হবে দুইয়ে। ২১ নভেম্বর ধরা হচ্ছে এই কারণে, বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা শুরু এ তারিখ থেকেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু। এরপর ২০টি ওয়ানডের ১৫টি জিতেছে বাংলাদেশ। উল্লিখিত সময়ে অন্য দলের জয়-পরাজয়ের হিসাব করলে বাংলাদেশের ওপরে একমাত্র নিউজিল্যান্ড। ২৮ ম্যাচে কিউইরা জিতেছে ১৯টিতে। এ পরিসংখ্যানে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানও বাংলাদেশের পরে। ১৫ ম্যাচে জিতেছে ১৩টি।
টেলিগ্রাফ জানাচ্ছে, ঘরের মাঠে লাল-সবুজের দল আরও দুরন্ত। ১৪ ওয়ানডের জিতেছে ১২টিতেই। গত একটা বছর ঘরের মাঠে কোনো সিরিজই হারেনি বাংলাদেশ। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা যাওবা সান্ত্বনাসূচক একটা জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ের ভাগ্যে তাও জোটেনি। মাশরাফিদের কাছে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা নিয়ে ফিরতে হয়েছে দুই দলকেই। এপ্রিলে পাকিস্তান সিরিজের আগেও বাংলাদেশ ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ছিল নয়ে। ক’মাসের ব্যবধানে সেই দল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ঠেলে উঠে এসেছে সাতে। নিশ্চিত করেছে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলাও। র্যাঙ্কিংয়ে সামনে থাকা ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কাকেও চোখ রাঙাচ্ছে ওপরে ওঠার।
ওয়ানডেতে গৌরবের অনেক কিছু থাকলেও টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ ম্লান। টেলিগ্রাফ তুলে ধরেছে ক্রিকেটের বড় সংস্করণে বাংলাদেশের বিবর্ণ পরিসংখ্যানও। ২০০০ সালে ক্রিকেটের কুলীন সমাজের সদস্য হওয়ার পর ৯৩ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র সাতবার। জয়ের হার মাত্র ৭.৫ শতাংশ। জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাদে জিততে পারেনি আর কারও বিপক্ষে। জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের গড় ছিল ৪০-এর নিচে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজে চার মূল বোলারের সম্মিলিত টেস্ট অভিজ্ঞতা মাত্র ২২। সব মিলিয়ে টেস্টে মাইকেল ক্লার্ক, ক্রিস রজার্স, ব্র্যাড হাডিন, শেন ওয়াটসন ও ডেভিড ওয়ার্নার না থাকলেও আসন্ন সিরিজে এগিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়াই।
তবে টেলিগ্রাফ এও মনে করিয়ে দিল, ক্রিকেটের বড় দৈর্ঘ্যে যতই অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকুক না কেন, বাংলাদেশের সামনে প্রেরণাদায়ক যথেষ্ট দৃষ্টান্ত আছে। ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টে রিকি পন্টিংয়ের দলকে কীভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ, নিশ্চয় জানা। তা ছাড়া বর্তমান এ দলটিতে রয়েছে অমিত সম্ভাবনাময়ী কিছু প্রতিভা। আর বছর দু-এক আগে পুরো শক্তির দল নিউজিল্যান্ডকে কীভাবে দাপটের সঙ্গে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ, মনে আছে সেটিও।