• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

আসল ঘটনা আড়াল করতেই রিমান্ডে থাকা ফাহিমকে ক্রসফায়ার: বিএনপি


প্রকাশিত: ৩:৫০ পিএম, ১৮ জুন ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮০ বার

 

স্টাফ রিপোর্টার : জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের আসল ঘটনা আড়াল করতেই মাদারীপুরের কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী fahim-www.jatirkhantha.com.bdহত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে থাকা গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আটক রিমান্ডে নেয়া গোলাম সাইফুল্লাহ ফাহিম পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, তাকে ‘রিমাণ্ডে নিয়েছিলেন, ওখানে উচিৎ ছিল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরো কারা জড়িত সেটা উদঘাটন করা। তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া যেত। যাচাই-বাছাই করা জানা যেতে এরা প্রকৃত জঙ্গি কী না, জানা যেতো আর কারা কারা জড়িত। এটা জনসন্মুখে উদ্ভাসিত হতো তাদের নামগুলো জানা যেত।’

তিনি বলেন, ‘সরকার তাকে (ফাহিম) ক্রসফায়ারে হত্যা করল, হত্যা করা মানে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা। এটাকে সামনে আসতে দিল না। আমরা আগেই বলেছি প্রতিটি সন্ত্রাসের সঙ্গে রাষ্ট্রের একটা সম্পর্ক আছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসন বলেছেন উগ্রবাদী চক্রের সঙ্গে সরকার জড়িত। এই যে আজকে ঘটনাটিতে যে ঘনকুয়াশা তৈরি করেছে সরকার। এর সঙ্গে সরকার জড়িত।’

সম্প্রতি সাঁড়াশি অভিযান সম্পর্কে রিজভী বলেন, ‘জঙ্গি দমনের নামে প্রহসনের এক চরম নাটক অনুষ্ঠিত করছে সরকারি দায়িত্বশীল লোকেরা। মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, কিন্তু কুপিয়ে হত্যাকারী প্রকৃত অপরাধীরা অধরাই থেকে যাচ্ছে। হত্যা রহস্যের কোন কুল-কিনারাই বের হচ্ছে না। অথচ সরকারি বাহিনী ক্ষুধার্থ নেকড়ের মতো গ্রাম, শহর, নগর, বন্দরে হামলা করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা-যারা গ্রেফতার হয়নি তারা দিশেহারা হয়ে প্রাণ ভয়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছে।’

‘সরকার জঙ্গি তৎপরতা দমন করতে যে নিষ্ঠুর পদ্ধতি গ্রহণ করেছে সেটিতে প্রকৃতপক্ষে জঙ্গিদের উৎপাত বন্ধ নয়, বরং সরকার যে একটা বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করেছে, সেটি এখন সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে। তাদের সেই এজেন্ডাটা হচ্ছে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদেরকে জঙ্গি হিসেবে চিত্রিত করা,’ বলেন তিনি।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে শুরু করে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে সকল যন্ত্র সরকারের হাতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদেশী কুটনীতিক, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, দেশের বিভিন্ন অধিকার গ্রুপ সরকারের গণগ্রেফতারের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এমনকি আটককৃত সন্দেহভাজন জঙ্গিরাও প্রকৃত জঙ্গি কী না এবং বছরব্যাপী চাঞ্চল্যকর খুনগুলোর সাথে তারা জড়িত কী না এটা নিয়ে জনমনে সংশয় আছে। কারণ কোন খুনেরই তদন্তে এখন পর্যন্তু অগ্রগতি নেই। ’

বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাক ডাউন এবং অপপ্রচার চালিয়ে দলটির সমুলে বিনাশ সাধন করার চক্রান্ত করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কারণ এর আগেও নানা দেশী বিদেশী চক্রান্তে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তাই চলমান দমন-পীড়ন বিএনপিকে ধ্বংস করার সরকারের শেষ প্রচেষ্টা। মুলতঃ ভোটার বিহীন সরকারের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেই কারণেই চলমান দেশব্যাপী পুলিশী নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতাকর্মীরা।’

কুষ্টিয়ার কুমারখালী ইটভাটার মালিক মেরাজুল হক মেরাজকে এক বছর আগে গড়াই নদীর বালির নিচে তার লাশ পুঁতে রাখা হয় উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দুই দিন আগে তার কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা জড়িত। শেখ হাসিনার সরকার দেশে জঙ্গি দমনের নামে দেশবাসীকে কঙ্কালে পরিণত করতে চাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র অগ্রাহ্য করে জনসমর্থনহীন ক্ষমতা জবরদখলকারি সরকাররই শুধুমাত্র একমূখী দৃষ্টিকোন, উগ্র মনোভাব ও বেপরোয়া প্রকাশ ভঙ্গি দিয়েই দেশ শাসন করে। বর্তমান আওয়ামী শাসন সেই শাসনেরই প্রতিচ্ছবি। তাই জঙ্গীবাদ ও আওয়ামীবাদ যমজ দুই ভাই। কারণ এই দুই গোষ্ঠীই বন্য ধূর্ত, হিংস্র পশুর মতো নিষ্ঠুর, স্বভাবগতভাবে ক্রুর এবং বেপরোয়া ও উদ্ধত। শেখ হাসিনা খুনোখুনী, রক্তারক্তি পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে চায় এজন্য যে, তাঁর সিংহাসন পর্যন্ত কেউ যেন পৌঁছতে না পারে।’গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে অবিলম্বে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনেরও দাবি জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।