আসন ভাগাভাগি সমঝোতা হচ্ছে-জোটের ভোটে নয়া মেরুকরণ
বিশেষ প্রতিনিধি : ভোটের নয়া মেরুকরণ হচ্ছে। ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন ভাগাভাগি ঘটবে ১৬ ডিসেম্বরে। কারণ, ১৭ ডিসেম্বর জোটগত অবস্থান জনানাতে হবে নির্বাচন কমিশনে। এর আগে দর কষাকষি চলবে জোটের মধ্যে। অন্যদিকে ভোটে আসা নয়া দলগুলির ব্যাপারেও সমঝোতা হতে পারে আসন ভাগাভাগি নিয়ে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোন দলকে কয়টি আসন ছেড়ে দেবে, তা শেষবেলায় চূড়ান্ত হবে। যে দলগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে বা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে লড়তে চায়, তারা এখন দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেবে। পরে তফসিল অনুসারে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে জোটগত অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, অনেক দলের সঙ্গেই আমাদের আলোচনা চলছে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও যোগাযোগ করছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আগামী ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর বোঝা যাবে কোন দলের কয়টি আসনে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন। সেটা বুঝে আসন সমঝোতার আলোচনা শুরু করবে আওয়ামী লীগ।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আসন সমঝোতার পর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অনেক নেতাকেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা যেসব আসনে প্রার্থী হবেন, সেখানে তারাই নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফলে ওই সব আসনে এখন যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা সরে দাঁড়াবেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে শরিক দলের নেতাদের জন্য প্রতীক বরাদ্দের আলাদা চিঠি দেবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ জোটগত নির্বাচন করবে কি না, তা নিয়ে গত কয়েক দিনে নানা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। এ নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের পক্ষ থেকেও ক্ষোভ জানানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জোট বেঁধে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত দেন।
১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের সঙ্গে অ্যালায়েন্স আছে, নির্বাচন জোটবদ্ধ হবে। তাদের কারা কারা প্রার্থী, সেটা আমরা দেখি। আমাদের হাতে কিছু সময় আছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এর মধ্যে আমরা অবজার্ভ করব, মনিটর করব, অ্যাডজাস্টমেন্ট করব, অ্যাকোমোডেট করব। সেখানে যেটা প্রয়োজন, সেটা আমরা করব। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টাও ওই রকম। ডামি ক্যান্ডিডেটের বিষয়েও ব্যাপারটা এই রকম। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সবকিছু ফাইনাল হয়ে যাবে।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কোনো কৌশল রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আনার কৌশল আমাদের নেই। তারা এলে আমাদের আপত্তি নেই, তারা এলে স্বাগত। শোনা যায় কেউ কেউ আসতে পারে, কেউ কেউ প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নির্বাচনের। সেটা তো মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সবকিছু দেখে আমরা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করব।
১৪ দলের একাধিক সূত্র জানায়, জোট শরিকরা নৌকা নিয়ে ভোট করতে চান, এটা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাস দুয়েক আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জোটবদ্ধ ভোটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। ফলে তারা এখন শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন। শিগগিরই ১৪ দলকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বৈঠকে বসবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে ঠিক কবে বসবেন, সে দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
১৪ দলের শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ৪ ডিসেম্বরের পরে আমাদের সঙ্গে বসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ওনার সঙ্গে বসলেই আমাদের আসনগুলোর বিষয়টি ফয়সালা হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ১৪ দলের বাইরে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ ছোট দলগুলোর সঙ্গেও আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা হলেও তারা নিজেদের প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে ছোট দলগুলো তাদের আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে ছোট দলের নেতারা সেখানে জয় পাবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে আসনভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে কোনো সাধারণ কৌশল নেই। প্রতিটি আসনের বাস্তবতা বুঝে কৌশল নির্ধারণ হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রসঙ্গে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা দেখি কারা কারা চাইছেন। সেটার ওপর আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে। কাজেই এর মধ্যে আমরা এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন-সংশোধন অ্যাকোমোডেশন সবকিছু আমরা করতে পারি।’
আসনভিত্তিক কৌশল ভিন্ন হবে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা দলের কৌশল তো থাকবেই। আমরা ইলেকশন করছি। আমরা একটা রাজনৈতিক দল, আমাদের কৌশলগত দিক তো থাকবেই।’