• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

আলোর নিচে অন্ধকারে স্বাস্থ্য বিভাগের দেড় হাজার ‘পোর্টার’


প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ৬ অক্টোবর ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৫ বার

 

মোছাদ্দেক বিল্লাহ্ : স্বাস্থ্য বিভাগে আলোর নিচে অন্ধকারে ‘পোর্টাররা’ । কবে তাঁদের ভাগ্যের শিখে ছিড়বে? এ আশায় বুক porter-www-jatirkhantha-com-bdবেঁধে আছেন দেড় হাজার পোর্টার । তাঁরা সরকারের কর্মচারীর মর্যাদার আশায় দিন গুনছেন গত ২৯ বছর। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ভ্যাকসিন রানার কন্টিজেন্সি ও ২০০০ সালে পোর্টার/অনিয়মিত শ্রমিক হিসেবে মজুরী পাচ্ছেন তারা।

ইতোমধ্যে তাদের কল্যান সমিতির মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মানব বন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন। তাদের একটাই দাবি ভ্যাকাসিন এসিস্টেন্ট(টিকাবীজ সহকারী) পদে তাদের নিয়োগ দিয়ে সরকারের কর্মচারির হওয়ার মর্যাদা।

চিকিৎসা ব্যবস্থার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ১৯৮৭ সাল থেকে দীর্ঘ ২৯ বছর যাবৎ দেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার টিকাদান কেন্দ্রে টিকাবীজ পৌছানোর কাজে ১১শ’৭৬ জন পোর্টার নিযোজিত থাকার কথা থাকলেও তাদেরই বেতন বরাদ্দের অর্থ দিয়েই কাজ করছেন ১৫শ’ পোর্টার। মাসে ১২শ’ টাকা দিয়ে শুরু করে এখন সাড়ে ৪ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে।

সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন স্কেল ৮ হাজার টাকাও তারা পান না। তথাপি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘন্টা পরিশ্রম করে তারা। মা ও শিশুর জীবন রক্ষাকারী পোলিও, হাম, রুবেলা, যক্ষা, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, জন্ডিস, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও হুপিংকাশি এই ১০টি মারাত্মক রোগের টিকাবীজ খাল-বিল, নদী-নালা, হাওড়-বাওড়, চর, পাহাড়-পর্বত ও রাস্তা-ঘাটে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে টিকাদান কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় এই পোর্টাররা।

এখানেই শেষ নয় কাজ শেষে পুনরায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেরতও নিয়ে আসেন তারা।টিকাবীজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা, সঠিকভাবে ভি.ভি,এম লক্ষ্য করা, স্বাস্থ্য কর্মী ও মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ই.পি.আই) কে সহযোগীতার মতো টেকনিক্যাল কাজও করে থাকেন এই পোর্টাররা। নিয়মিত ই.পি.আই ও জতীয় টিকা দিবস গুলোতে তারাই পালন করে থাকে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা। তাদেরই পরিশ্রমের ফল টিকাদান কর্মসূচি উন্নতির চরম শিখরে পৌছা, স্বাস্থ্য সেবায় বিশ্বের স্বীকৃতি পাওয়া, রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়ানো, যক্ষা প্রতিরোধে জাতিসংঘের মহাসচিব বানকি মুন ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ভুয়সী প্রশংসা পাওয়া, মা ও শিশুর মৃত্যু হার কমিয়ে এম.ডি.জি পুরস্কার অর্জন, টিকাদান কর্মসূচিতে গ্যাভী আ্যওয়ার্ড অর্জন সব কিছুতেই রয়েছে যাদের অসামান্য অবদান তারাই ২৯ বছরেও পায়নি সরকারের কর্মচারির মর্যাদা।

তাদেরকে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। তেমনই একজন বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পোর্টার মোঃ আবদুল কুদ্দুস খান জাতিরকন্ঠকে জানান, ২৯টি বছর এ পোর্টারের কাজ করছি। সরকারের কর্মচারির মর্যাদা পাইনি। গত জুন মাস থেকে ৪ মাস পর্যন্ত রয়েছে বেতন বন্ধ। ধর্মীয় উৎসবেও পাইনা উৎসব ভাতা। পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তানকে দিতে পারিনা ভাল খাবার কিংবা পোশাক।

পোর্টার মোঃ আশ্রাব আলী জাতিরকন্ঠকে বলেন,সংসারের কেউ কিছু চাইলে শুধু অশ্রু ভরা নয়নে তাদের মিথ্যা সান্তনা দিয়ে থাকি। পোর্টার মোঃ সিরাজ উদ্দিন জাতিরকন্ঠকে বলেন, বিভিন্ন সময় আমাদের পদবি পরিবর্তন করা হলেও বেতনও বাড়েনি আর সরকারের কর্মচারির মর্যাদাও পাইনি।১৯৯৭ সালে ভ্যাকসিন রানার কন্টিজেন্সি ও ২০০০ সালে পোর্টার/অনিয়মিত শ্রমিক হিসেবে মজুরী পাচ্ছেন তারা।

ইতোমধ্যে তাদের কল্যান সমিতির মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মানব বন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন। তাদের একটাই দাবি ভ্যাকাসিন এসিস্টেন্ট(টিকাবীজ সহকারী) পদে তাদের নিয়োগ দিয়ে সরকারের কর্মচারির হওয়ার মর্যাদা। সচেতন মহলেরও দাবি মানবিক দৃষ্টি কোন হতে তাদের অতিবাহিত বয়স, অসহনীয় কষ্ট, বর্বর জীবন-যাপন, অসহায়, নিঃস্ব ও দারিদ্রতার দিক বিবেচনায় নিবে সরকার।