আ’লীগ বিদায় হলে নিখোঁজ নেতা- কর্মীদের খোঁজ মিলবে-খালেদা
স্টাফ রিপোর্টার : মঙ্গলবার রাজধানীর ‘লেকশোর হোটেলে’ বিএনপির ‘খুন ও গুম হওয়া নেতাকর্মীর’ স্বজনদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সরকার ভেবেছে যে বিএনপিকে শেষ করতে গেলে দলের ভালো ছেলেদেরকে শেষ করতে হবে। তাহলে বিএনপি দুর্বল হবে। তারা আজীবন ধরে ক্ষমতায় থেকে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন।’
আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নিয়ে ক্ষমতাসীনরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ‘গুম’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে শেষ করে দেয়ার জন্যই এই গুম ও খুন। ক্ষমতায় আসার আগেও এই আওয়ামী লীগ এসব কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এবার ক্ষমতায় এসে যা করেছে তা অবর্ণনীয় ও অকল্পনীয়।’
আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় হলে নিখোঁজ নেতাকর্মীদের খোঁজ মিলবে—এমন আশার কথাও শোনান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও আশা করি যে নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাওয়া দলের নেতাকর্মীরা একদিন ফিরে আসবে। প্রয়াত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলেকেও ধরে নিয়ে গেছিল, কয়েক মাস পর তাকে তার বাড়ির কাছে ফেলে দিয়ে গেছে। এরকম আরেকজন হলো ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন।’
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের ‘লেকশোর হোটেলে’ বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ‘খুন ও গুম হওয়া নেতাকর্মীর’ স্বজনদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে এই ইফতারের আয়োজন করেন।
নিখোঁজ নেতাকর্মীদের পরিবারের বেদনার সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘যারা হারিয়ে গেছে। তারা শুধু আপনাদের ছেলে নয়, আমাদেরও ছেলে। তাদের স্নেহ করতাম, ওরা দলের জন্য অনেক কষ্ট করেছে। সরকার যাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে, তারা জানতো যে, এরা ভালো ছেলে, এরা কাজ করে দলের জন্য। ওরা ভেবেছে যে এসব কর্মীদেরকে শেষ করে ফেলতে পারলে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জালেম অত্যাচারীর বিদায় হলে দেশে তখন গুম হওয়া নেতাকর্মীদের খোঁজ পাব, তখন তারা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে—সেই আশায়ই সবাই আছে। ইফতারের পর ‘গুম ও খুন হওয়া নেতাকর্মীদের’ স্বজনদের হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ইফতার মাহফিলের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছাত্রদলের সদ্য নিহত নুরুল আলম নুরুর শিশুকন্যা উম্মে হাবিবা মীম, সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা পারভীন মুন্নী, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আঁখি, নুরুজ্জামান জনির স্ত্রী মুনিয়া পারভীন, ৩ মাস ১৭ দিন নিখোঁজ থাকার পর সন্ধান পাওয়া ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন।
‘নিখোঁজ ও গুম হওয়া’ বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা ‘এই সরকারের দ্রুত পতন দাবি’ করেন। তারা বলেন, এই সরকারের পতন হলে তাদের স্বজনরা ফিরে আসবে। সরকারের লোকজনরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে। নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাওয়াদের এখনও খুঁজে বেরান তারা।
ইফতার মাহফিলে অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে দলের খালেদা জিয়া বিএনপি মহাসচিবসহ নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন, এসএম আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী, মাহবুব হাসান সুজনের মা রাশিদা বেগম, মো. জহিরের মা হোসনে আরা, নাজমুল ইসলামে স্ত্রী সাবিরা নাজমুল, সদ্য নিহত চট্টগ্রামের ছাত্র নেতা নুর আলম নুরুর স্ত্রী সুমী আখতারসহ নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার করেন।
‘নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার’ বিএনপি নেতাকর্মীর পরিবারের মধ্যে চৌধুরী আলম, জাহিদুর করিম তানভীর, আলম হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মো. মাসুম, মো. শামীম, মাসুদ হোসেন, মারুফ শেখ, যুবদলের নুরে আলম, আফজাল হোসেন, মনিরুল ইসলাম মনির, সেলিম শাহিন, মেহেদি আলম মাহাবি, স্বেচ্ছাসেবক দলের এম আদনান চৌধুরী, মো. কাউসার, শ্রমিক দলের ওয়াদুদ ব্যাপারী, ছাত্রদলের আসাদুজ্জামান রানা, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মো. আলমীন, মাহবুব হোসেন সুজন, সেলিম রেজা পিন্টু, সম্রাট মোল্লা, কাজী ফরহাদ হোসেন, খালেদ হোসেন সোহেল, মো. সোহেল, মো. জহির, মো. পারভেজ হোসেন, মো. চঞ্চল, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, নিজামউদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম তারা, মফিজুল ইসলাম রাশেদ, আবদুল কাদের ভূঁইয়া মাসুম, নুরুজ্জামান জনি, মাহবুবুর রহমান বাপ্পী, আমিনুল ইসলাম জাকির, মাসুদ রানা, মো. জিহাদুর রহমান, মো. রাহাত, মো. জসিম উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন, মেহেদি হাসান রাজু, এহসানুল হক খোকন, মিজানুর রহমান টিটু, আরিফুল ইসলাম মুকুল, সাইফুর রহমান সজীব, মো. হাসান, ইফতেখার আহমেদ দিনারের পরিবারের সদস্যগণ ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা শরীফুল আলম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাইফুল আলম নিবর, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, কাজী আবুল বাশার, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।