আর্মেনিয়ায় ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি জেলা হচ্ছে
অার্মেনিয়া থেকে সাইফুল্লাহ সাদেক : অবশেষে আর্মেনিয়ায় বাংলাদেশ নামে একটি জেলা হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ জেলাটির নাম আসলে কোথাও লেখা নেই। এই জেলার অফিসিয়াল নাম মূলত ‘মালাতিয়া সেবাস্তিয়া’। অথচ আর্মেনিয়ার কোন মানুষ অফিসিয়াল নাম বলে না। সবাই বলে ‘বাংলাদেশ’। এই বাংলাদেশ জেলাটিকেই অফিসিয়ালভাবে স্বীকৃতি দিতে মৌখিকভাবে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির সংস্কৃতিমন্ত্রী আর্মেন আমিরিয়ান।
জানা গেছে, লিওনিড ইন্টারন্যাশনাল মাইম ফেস্টিভাল-২০১৭ অংশ নিতে সেখানে যাওয়া বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলের কাছে নামকরণরণের জন্য মৌখিক প্রস্তাবে রাজি হন তিনি।গত ২২ জুলাই আর্মেনিয়ায় শুরু হয়েছে এ ফেস্টিভাল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল উৎসবমুখর এবং উপভোগ্য। এমন দুর্দান্ত এবং জাঁকজমক কোন মূকাভিনয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই প্রথম। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সহ অংশগ্রহণকারী ৮টি দেশের শিল্পীরা সংক্ষিপ্ত আকারে মূকাভিনয় প্রদর্শনী করেছেন। দর্শক ছিলো চোখে পড়ার মতো। পুরো ভেন্যু ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্মেনিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী আর্মেন আমিরিয়ান (Armen Amiryan)। প্রায় ৩ ঘণ্টার অনুষ্ঠানের পুরো সময় দর্শক সারিতে বসে মন্ত্রী বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মূকাভিনয় উপভোগ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের। উৎসব আয়োজক কমিটির পরিচালক জাহরির দাদাসিয়ান মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। আর্মেন আমিরিয়ান মাঝ বয়সী লোক। কিন্তু এখনো তরুণের মতোই দেখতে। হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। গায়ের রং প্রায় মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের মতোই।
আমরা নিজেদের পরিচয় দিই। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শোনার পর তিনি বেশ আগ্রহ সহকারী আমাদের সঙ্গে হাত মেলান এবং স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমি আগে থেকেই জানতাম যে বাংলাদেশ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করছে। আপনাদের আগমনে খুশি হয়েছি। এতোদূর পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর আর্মেনিয়ায় আসার জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। আশা করি আপনারা এই কয়েকটি দিন ভালোভাবে উপভোগ করবেন।
অল্প সময়ের আলাপে তিনি বাংলাদেশের প্রশংসাই করলেন। বললেন, আমি জানি বাংলাদেশে দারুণ একটি দেশ। তাদের আলাদা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। দেশটি দ্রুত এগিয়েও যাচ্ছে। আপনাদের মতো তরুণরা নিজেদের দেশটি এগিয়ে নিবেন। এভাবেই মন্ত্রী আমাদেরকে বেশ অনুপ্রেরণামূলক কথা বললেন।
মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলতে তুলতেই আর্মেনিয়ার বাংলাদেশ নামক জেলার কথা বললাম এবং জানালাম যে, আমরা ঐ জেলায় সফর করেছি। মন্ত্রী এতে বেশ আনন্দিত হলেন। হেসে বললেন, ধন্যবাদ সফর করার জন্য। এখানকার অন্যান্য এলাকাতেও আপনারা সফর করবেন। ভালো লাগবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আসছেন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে আমরা টার্গেট করে রেখেছিলাম যে, বাংলাদেশ জেলার কথা মন্ত্রীর সামনে উঠাবো এবং সুযোগ হলে এটিকে অফিসিয়াল নামকরণ করার মৌখিক প্রস্তাবও দিয়ে দিব।
মন্ত্রীর সঙ্গে দুয়েক মিনিটের আলাপ এবং ছবি তোলার সুযোগ কাজে লাগালাম। কথা প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে সেটির ইঙ্গিতও দিয়ে দিলাম। বললাম, ‘এই জেলার নাম আন অফিসিয়ালি ‘বাংলাদেশ’। মানুষ অফিসিয়াল নামের চেয়ে আন-অফিসিয়াল ‘বাংলাদেশ’ নামই বেশি চিনেন এবং সবার কাছে তা জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামটিই অফিসিয়াল নাম হয়ে যেতে পারে আপনারা ইচ্ছা করলে”। একথা শোনে মন্ত্রী মন খোলা হাসিতে আবার হাতও মেলালেন আমাদের সঙ্গে।
মূকাভিনয় উৎসবের উছিলায় ভবিষ্যতে এই হাত আর্মেনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যম হতে পারে। এই হাত দুই দেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে শক্ত ভিত্তি দিতে পারে। আর দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামীতে ‘আর্মেনিয়ান বাংলাদেশ জেলার নাম এখানকার অফিসিয়াল নাকরণও নিশ্চিত হবে-এটাই আমাদের বুক ভরা প্রত্যাশা।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানের নিকটবর্তী পর্যটন শহর সাখকাদজরে চলছে লিংনিড ইয়েঙিভারিয়ান আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব। ২২-২৬ জুলাই মোট ৫ দিনের উৎসবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮টি দেশের মূকাভিনয় শিল্পীরা। বাংলাদেশ থেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের প্রতিনিধিত্ব করছি আমরা।
আর্মেনিয়ায় আসার পর থেকে আমরা শুনতে পাচ্ছি এখানেও একটি বাংলাদেশ আছে। তবে সেটি একটি জেলার নাম। এরপর থেকে জেলাটি ঘুরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগে আমাদের। মাইম অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মীর লোকমান আর আমি পরদিনই সেখানে ঘুরতে যাই। এলাকাটি সত্যি অসাধারণ। অার্মেনিয়ার অন্যান্য এলাকা থেকে একটু নিচুতে, অনেকটা প্রাকৃতিক এবং অনুন্নত। কিন্তু পরিবশে দারুণ।