‘আমি চাই বদরুলের বিচার দ্রুত শেষ করে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক’
সিলেট প্রতিনিধি : প্রায় পাঁচ মাস পর বাড়িতে ফিরলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস । ১ ফেব্রুয়ারি এক সপ্তাহের জন্য বাড়ি আসলেও চিকিৎসার জন্য আবার ঢাকার সাভারে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিমানে করে সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নার্গিস। তিনি বলেন, ‘আমি চাই বদরুলের (হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা) বিচার দ্রুত শেষ করে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনও কলেজ ছাত্রী হামলার শিকার না হয়।’
সাভারে পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আড়াই মাসের চিকিৎসা শেষে সিলেট সদর উপজেলার আউশা গ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরলেন নার্গিস। গতবছর ৩ অক্টোবর বদরুলের চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত হন তিনি। এরপর তাকে রাজধানী স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ২৮ নভেম্বর তাকে থেকে সিআরপিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সাভার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নার্গিসের সঙ্গে ছিলেন তার বাবা মাসুক মিয়া ও ভাই শারনান হক শাহীনসহ স্বজনরা। মাসুক মিয়া জানান, ‘নার্গিস বাড়িতে ফিরে স্বাভাবিক রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনসহ সবার সঙ্গে অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলছে। এখন মেয়েটার দিকে তাকালে সব কষ্ট ভুলে যাই।
তিনি আরও জানান, ‘নার্গিস অনেকটা সুস্থ হওয়ার কারণেই চিকিৎসকরা তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন। তবুও বাড়িতে প্রাথমিক কোনও সমস্যা হলে সিআরপি চিকিৎসকরা বলেছেন তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরামর্শ নিতে।’
আদালত সূত্র জানায়, খাদিজার ওপর হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলাটি সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি বদরুল। আগামী রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ রয়েছে। ওই দিন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নার্গিসের উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে। বদরুলকে একমাত্র আসামি করে এই মামলাটি দায়ের তার চাচা আবদুল কুদ্দুস।
গত বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল। এরপর ওই বছরের ৮ নভেম্বর নার্গিস হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার এসআই (সাবেক) হারুনুর রশীদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেন। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। পরে ৫ ডিসেম্বর, ১১ ডিসেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন ৩৩ জন।
আদালতের সহকারী কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান জানান, ‘নার্গিসের সাক্ষ্যগ্রহণের পর আলোচিত এ মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করা হবে। আমরা আশাবাদী এ মাসের দিকে যদি রায় ঘোষণা না হয় তাহলে মার্চ মাসের প্রথম সাপ্তাহে রায় ঘোষণা করা হবে।’
জানা যায়, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী নার্গিস ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর বিকেলে এমসি কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে বিএ (পাস) পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার সময় কলেজের পুকুর পাড়ে হামলার শিকার হন। তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। ঘটনার পর জনতা ধাওয়া করে বদরুলকে ধরে পুলিশে দেয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।