• বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর ২০২৪

‘আমার ১০ বছর ফিরিয়ে দিন প্রধানমন্ত্রী’


প্রকাশিত: ৭:০৪ পিএম, ১৬ জুলাই ১৯ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৯২ বার

 

আজমত আলী : প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজমত আলীর ফরিয়াদ- ফিরিয়ে দিন আমার ১০টি বছর..! রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার পরেও বিনা দোষে আইনি জটিলতায় ১০ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পেলেন শিক্ষক আজমত আলী। হাইকোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের নির্দেশের কপি হাতে পেয়ে জেল সুপার মকলেছুর রহমান মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আজ সকাল ১১টায় তাকে মুক্তি দিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত আজমত আলীকে পেয়ে বাবা-মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আজমত আলী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফরিয়াদ করে বলেছেন, যাদের কারণে আমার ১০টি বছর অতিরিক্ত জেলে কাটাতে হলো তাদের যেনো বিচার হয়।

জানা গেছে, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের ইজ্জতউল্লাহ সর্দারের ছেলে আজমত আলী টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের ভেঙ্গুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে একটি হত্যা মামলায় ১৯৮৯ সালে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

এই আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল এর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির কাছে সাধারণ ক্ষমার প্রার্থনা করে আজমত আলীর পরিবার। সেই আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান আজমত আলী। পরে ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আসামি আজমত আলীকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। হাজির না হলে ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমত আলীকে প্রেপ্তার করে নিম্ন আদালতে সোর্পদ করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছে।

২০১৮ সালের অক্টোবরে আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন তার বাবার মুক্তি চেয়ে আইনি সহায়তা পেতে সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইডে আবেদন করেন। পরে সে আবেদন পর্যালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের নির্দেশে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেন।

আজমত আলীর কন্যা বলেন, রাষ্ট্রপতির নির্দেশের পর আইনি জটিলতায় বিনা দোষে তার বাবা ১০ বছর কারাভোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এখন আমার বাবা জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া দশ বছর কি আমরা ফিরে পাবো? এই বলে বাবাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সদ্য মুক্তি পাওয়া আজমত আলী বলেন, আইনি জটিলতায় বিনা দোষে আমি বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে ১০ বছর মানবেতর জীবন অতিবাহিত করেছি। কারো জীবনে যেন এমন ঘটনা না ঘটে।
জামালপুর কারাগারের জেল সুপার মকলেছুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশের কপি পাওয়ার মাত্রই তাকে মুক্তি দেয়া হলো। তার মুক্তিতে কারা কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট।