`আমাদের সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পাঁয়তারা-হিন্দি ছবি আমরা চালাতে দেব না’
এরা এদেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করতে গভীর ষড়যন্ত্র করছে দীর্ঘদিন ধরে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা এবার ভারতীয় ছবি এনেছে বাংলাদেশে।এদের বিরুদ্ধে শুক্রবার বিক্ষুদ্ধ জনতা লংকাকান্ড বাধিয়ে দিতে পারে বলে একাধিক চলচ্চিত্র শিল্পী অভিযোগ করেছেন।এদের সঙ্গে রয়েছেন এদেশীয় চলচিত্রের নায়ক কলা কুশলীসহ সংশ্লিষ্ঠরা।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে ২৩ জানুয়ারি সালমান খান অভিনীত বলিউডের ছবি ‘ওয়ান্টেড’ মুক্তি পাওয়ার পর এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। ভারতীয় ছবি আমদানি ও মুক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন। ‘ওয়ান্টেড’ মুক্তির কয়েকদিন আগে থেকে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন চলচ্চিত্রনির্মাতা, তারকা ও কলা-কুশলীরা।
চিত্রনায়ক শাকিব খান বলেছেন, উপমহাদেশের, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এই দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিকভাবে অনেক মিল আছে। এই কারণে আবেগের অনেক জায়গা থেকে মিল পাওয়া যায়। সাংস্কৃতিকভাবে মিল থাকার কারণে এসব দেশের ছবির গল্পে অনেকাংশে মিল পাওয়া যায়। আমি এটাও মনে করি, পুরো পৃথিবীর সিনেমার ভাষা প্রায় একই রকম। ইংরেজি ছবি থেকে ভারত কপি করছে, ওই খান থেকে আমরা কপি করছি। আমির খান, শাহরুখ খান, সালমান খানের মতো বড় মাপের তারকারা কেন তামিল ছবি নকল করেন! কারণ তামিল ছবির গল্প কিংবা কিছু দৃশ্য হয়তো ভালো এবং সেগুলোর দর্শক চাহিদা রয়েছে। এ জন্য তারা কপি করছে। এটা দোষের কিছু নয়। এ ব্যাপারগুলো একেবারেই ঠুনকো। এটার দোহাই দিয়ে হিন্দি ছবি ঢুকিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা যেকোনো মূল্যে আমরা প্রতিহত করবই। এখন কেউ যদি কপির দোহাই দিয়ে হিন্দি ছবি আমাদের দেশের সিনেমা হলে চালানোর যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করে, সেটা সত্যিই একগুঁয়েমি ছাড়া আর কিছুই না। আমরা যারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত আছি, তারা কোনোভাবেই তা হতে দেব না।
এটা বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না। হিন্দি ছবি মুক্তি পাওয়ায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলা চলচ্চিত্র। দেড় শ কোটি রুপি বাজেটের হিন্দি ছবি বাংলাদেশের টাকায় প্রায় পৌনে ২০০ কোটির মতো। সেই ছবির সঙ্গে আমার দেশের কম বাজেটের ছবি কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারবে না। অসম প্রতিযোগিতা কোনোদিন হতে পারে না। প্রতিযোগিতা হবে সমানে-সমানে। উপমহাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে কিন্তু অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক মিল থাকলেও হিন্দি ছবির বাজেট অনেক বেশি। আমরা এর ধারে-কাছেও নেই। হিন্দি ছবির প্রভাবে শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্র মার্কেট হারিয়ে গেছে। নেপালের সিনেমা ধ্বংস হয়ে গেছে। হিন্দি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হলে আমাদের ক্ষতিটা তো ওইভাবেই হবে।
আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষ চূড়ান্ত মাত্রায় খেপে গেছে। তারা কোনোভাবেই হিন্দি ছবি হলে বসে দেখতে রাজি নয়। তারা উত্তেজিত হয়ে পোস্টার ছিঁড়ছে। আমরা হলের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেছি। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কোনো হল তো ভাঙচুর করা হয়নি। এ ধরনের কোনো কিছু ঘটেছে বলে আমরা যারা আন্দোলন করছি, তাদের জানা নেই। এখন হিন্দি ছবি চালানোর জন্য যদি কেউ এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করেন, তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক হবে। যত যা-ই হোক, হিন্দি ছবি আমরা চালাতে দেব না। যেকোনো মূল্যে আমরা হিন্দি ছবির প্রদর্শন বন্ধ করবই। এ বিষয়ে কোনো আপস করতে আমরা রাজি না।
এমনিতে আমাদের দেশে ভারতের অনেক টিভি চ্যানেল চলছে। যাঁর ইচ্ছে হচ্ছে, তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে হিন্দি অনেক ছবি দেখছেন। কিন্তু হলে ছবি মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে হিন্দি ছবি দেখতে। আর এভাবে সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। আমাদের চলচ্চিত্র এখনো যতটুকু বেঁচে আছে, ভারতীয় ছবি মুক্তির জন্য তাও থাকবে না। এটাকে সরাসরি কবর দিয়ে দেওয়া হবে। আমরা যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, তা ভুল। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমটাও কম। আমাদের মধ্যে ভালো পলিসি মেকারও নেই। অথচ বাংলাদেশের বাজার কিন্তু অনেক বড়।
ভারতের ছবি-সংশ্লিষ্ট লোকজন চিন্তা করে, কীভাবে তাদের সংস্কৃতি বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবে, নতুন নতুন মার্কেট কীভাবে দখল করবে। অথচ আমরা সেই চেষ্টা না করে উল্টো গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখছি। এই স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রশিল্প ধ্বংস করার পেছনে লেগেছে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কোনো কাজ করার তাগিদ তাদের মধ্যে নেই। আমরা চাই, অন্য কোনো দেশের ভাষার ছবি এ দেশে মুক্তি পাবে না। দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে উন্নত করার জন্য এটা খুব জরুরি।