‘আমরা শান্তি-বন্ধুত্ব রাখতে চাই’
কুতুপালং থেকে বিশেষ প্রতিনিধি : প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদারবাহিনী আমাদের ঘর পুড়িয়েছে, সেসময় আমরা সব হারিয়েছি। এরপরও ভেঙ্গে পড়িনি। আপনারও ভেঙ্গে পড়বেন না, নিজের দেশে অবশ্যই ফিরতে পারবেন। আমরা শান্তি ও বন্ধুত্ব রাখতে চাই।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে গিয়ে তিনি মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজের দেশের নাগরিক অন্যের দেশে থাকা সম্মানজনক নয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শান্তি চাই, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখতে চাই। তবে কোনো দেশের অন্যায় আমরা মেনে নেব না। মানবিক দিক বিবেচনা করেই আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি।”
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর্তমানবতার প্রয়োজনে যতক্ষণ আপনাদের পাশে থাকা দরকার আমরা পাশে থাকব। এজন্য জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বর্ডারগার্ড সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোনো বেসকারি সংস্থা বা অন্য কোনও সংগঠন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বা সাহায্য সহযোগিতা করতে চাইলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনও ধরনের বাণিজ্য করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।
গত ২৫ সেপ্টেবর মিয়ানমারের কয়েকটি সেনা ও পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের হামলার অভিযোগে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় গত দু’সপ্তাহে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের দেয়া তথ্যানুযায়ী আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।