• বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪

‘আমরা দারিদ্র্য ক্ষুধা অবিচার বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব দেখতে চাই’


প্রকাশিত: ৩:০৮ এএম, ৩০ নভেম্বর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৭ বার

 
বিশেষ প্রতিনিধি : বাণিজ‌্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তারের মাধ‌্যমে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘সম্ভাবনার পূর্ণমাত্রায়’ নিয়ে bbbযাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেছেন, “আমরা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অবিচার ও বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব দেখতে চাইআমরা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অবিচার ও বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব দেখতে চাই। আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা আমাদের জনগণের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে চাই।”

মঙ্গলবার বুদাপেস্টে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর এক যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।তিনি বলেন, “হাঙ্গেরির জনগণ ও সরকার ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। আমার এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে সম্ভাবনার পূর্ণমাত্রায় পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা যোগাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

bতিনি স্মরণ করেন, গত শতকের সত্তরের দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে হাঙ্গেরির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপের যে দেশগুলো প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, হাঙ্গেরি তাদের অন‌্যতম।

গত ২৫ বছরে হাঙ্গেরি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটিয়ে যেভাবে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও শিল্প উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, তার প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ‌্যে প্রথমবারের মত এই দ্বিপক্ষীয় সফরের আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীকে ধন‌্যবাদ জানান এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভিক্তর অরবেনের আগ্রহের প্রশংসা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বুদাপেস্টে সফলভাবে পানি সম্মেলনের আয়োজন করায় হাঙ্গেরির সরকার ও জনগণকে আমি অভিনন্দন জানাই। পানি সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সচেতনতা সৃষ্টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল‌্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এই সম্মেলন।জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) পানি নিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে তহবিল গঠনের যে প্রস্তাব শেখ হাসিনা বিশ্বের সামনে রেখেছেন, তাতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর ‘সক্রিয় সমর্থন’ চান তিনি।

পানি সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্বব্যাপী ঐকমত‌্য গড়ে তুলতে ‘সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ায়’ ভিক্তর অরবেনকে তিনি ধন্যবাদ জানান। যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার মতো সাম্প্রতিক সমস্যা নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় রেখেছে। আমরা এই বৈশ্বিক সমস‌্যা রুখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এছাড়া শরণার্থী ও অভিবাসী সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তন, পানির মত বৈশ্বিক সমস্যা ও ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার মত বিষয়ও আলোচনায় এসেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বর্তমান সভাপতি হিসাবে বাংলাদেশ আগামী মাসে নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর আয়োজন করতে যাচ্ছে। আমি আশা করি, ঢাকায় এই উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক বিতর্কে হাঙ্গেরি অংশ নেবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ‌্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অনেক সুযোগ রয়েছে বলে দুই পক্ষই বৈঠকে একমত হয়েছে। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলও এই সফরে নিজেদের মধ‌্যে মত বিনিময়ের সুযোগ পেয়েছে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগগুলো খতিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছে বলে মন্তব‌্য করেন তিনি।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি পাঠকালে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে জাতির পিতার পরিবার যা করেছে, তার ফল এখন বাংলাদেশের জনগণ ভোগ করছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ এর উপর থাকার কথাও উল্লেখ করেন অরবেন। বাংলাদেশ-হাঙ্গেরির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ভৌগলিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ হাঙ্গেরির থেকে অনেক দূরে। তারপরও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় এবং বন্যা প্রতিরোধে এই দুই দেশ একসাথে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে প্রতিনিয়ত সুপেয় পানি সরবরাহ এবং পয়োঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর অন্যতম হিসাবে হাঙ্গেরি বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।

হাঙ্গেরির কিছু প্রতিষ্ঠান পানি ব্যবস্থাপনায় শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।সন্তাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ভিক্তর অরবেন বলেন, তার দেশও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে।সস্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম বা দেশ নেই। সন্ত্রাসের পরিচয় সন্ত্রাস। এটা বড় কথা নয়- তারা কোন ধরনের বিশ্বাসে বিশ্বাসী।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির অভিন্ন অবস্থান বলে মন্তব্য করেন তিনি। হাঙ্গেরি ও বাংলাদেশের মধ্যে দূরত্বের বিষয়ে ভিক্তর অরবেনের বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিবৃতিতে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মানুষ অনেক দূরত্বই অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরি সময়ের পরীক্ষায় পরীক্ষিত বন্ধু। কারণ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তারা সর্বাত্মক সহায়তা করেছিল।

দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের কাছে দূরত্ব কোনো বাধা হতে পারে না। হৃদয়ের দিক দিয়ে আমরা অনেক কাছে। দুই দেশের মানুষ, একে অপরকে খুব ভালোভাবে চেনে।পানি সম্মেলনে যোগ দিতে গত রোববার বুদাপেস্টে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিন দিনের সফর শেষে বুধবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।