আবারও যেন সংঘাত না আসে…
শফিক আজিজ.ঢাকা: আবারও কি সংঘাত হবে!নাকি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে? এ আশংকা এখন সারা দেশবাসীর এবং ব্যবসায়ীদের।বুধবার ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আবারও যেন সংঘাত ফিরে না আসে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া বুধবার আদালতে গিয়েছিলেন।এসময় তার আগমন কে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে পুরান ঢাকার বকসীবাজারে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হামলাকারীদের টার্গেট ছিল খালেদা জিয়া।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ আগামী ৭ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সোয়া একটার দিকে বিচারক আবু মোহাম্মদ জমাদ্দার এই তারিখ ধার্য করেন। খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফজলে রাব্বী হলের সামনে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
পরবর্তী সাক্ষ্য ৭ জানুয়ারি
পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিচারক প্রথম এজলাসে ওঠেন। এ সময় খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মামলার কার্যক্রম পরে শুরু করার আবেদন করেন। আদালত সাময়িকভাবে মুলতবি ঘোষণা করে বিচারক এজলাস ছাড়েন। বেলা পৌনে একটার দিকে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হয়। এ সময় তাঁকে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়। আজ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ৭ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।
গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী বিচারক নিয়োগ ও মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন। উচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেন। গত সপ্তাহে বিচারক বাসুদেব রায়কে বদলি করে তাঁর স্থলে আবু আহমেদ জমাদ্দারকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বকশীবাজারে সংঘর্ষ
খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফজলে রাব্বী হলের মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কয়জন আহত হয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। সংঘর্ষে আহত ১৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খালেদা জিয়ার বিচারকে কেন্দ্র করে ফজলে রাব্বী হলের মোড়ে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশও অবস্থান নেয়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, একপর্যায়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এলাকা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেন। এ সময় পুলিশ নীরব ছিল। দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় একজনের মাথা জখম হতে দেখা যায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের বেশ কয়েকটি শেল ছোড়ে।
একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একাংশ বুয়েট থেকে চানখাঁরপুলের রাস্তায় অবস্থান নেয়। তাঁরা ওই রাস্তায় টায়ার ফেলে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন। আরেকটি অংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনের গেটে অবস্থান নেয়। সেখানেও রাস্তার ওপরে আগুন জ্বালানো হয়। তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। বেলা পৌনে একটার দিকে পুলিশ চানখাঁরপুল থেকে নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায়।
সকাল থেকে রাজধানীর কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের একটি গাড়ি দেখা গেছে। কার্যালয়ে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী যাননি। মতিঝিলের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাফিউল ইসলাম বলেন, আগে নিরাপত্তাব্যবস্থা যা ছিল, এখনো তাই রয়েছে। খালেদা জিয়া বেলা দুইটার দিকে তাঁর গুলশানের বাসায় পৌঁছান বলে তাঁর প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দীন দিদার জানিয়েছেন।
২০১৩ সালজুড়ে সহিংসতার পর এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও আগামী বছরে ফের রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা দেখে বুধবার ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়।ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের চাহিদা হল দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকা। এজন্য আমরা আসন্ন দিনগুলোতে নতুন কোনো রাজনৈতিক সংঘাত, হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দেখতে চাই না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে আগামী বছরের শুরুতেই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে বিএনপির। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, পাঁচ বছর আগে কোনো নির্বাচন হবে না। মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, সহ-সভাপতি শোয়েব চৌধুরীসহ পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।সামগ্রিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবেলায় সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিসিসিআই।হোসেন খালেদ বলেন, আমলাতন্ত্র, নানা প্রতিবন্ধকতা ও ব্যবসাবান্ধব নীতির অভাবে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ কম হচ্ছে।বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত না হলে বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। এতে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।শিল্প খাতে গতিশীলতা সৃষ্টির জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমানোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।হোসেন খালেদ বলেন, অনেক নতুন শিল্প বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না। আবার ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে অনেকের ব্যবসা দাঁড়াতে পারছে না।