• মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত’ রাজউক- দুদক


প্রকাশিত: ১১:২০ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ‘আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত’ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন nnকমিশনের (দুদক) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন আহমেদ। আজ বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রাজউকের কার্যক্রম নিয়ে এক ফলোআপ গণশুনানি শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এ বছরের ২৭ জানুয়ারি রাজউকের সেবা নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করে দুদক। সেটিতে ওঠা অভিযোগগুলোর অবস্থা জানাতে আজ আয়োজন করা হয় ফলোআপ শুনানি। আগের শুনানিতে দেওয়া রাজউক কর্মকর্তাদের আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি অনুসারে সমস্যার সমাধান না পেয়ে পুনরায় অভিযোগ করেন অন্তত ৩৭ জন ভুক্তভোগী। অধিকাংশ সেবাগ্রহীতা অভিযোগ করেন, ১০ মাস পেরিয়ে বছর গড়াতে চললেও প্রতিকার পাননি তাঁরা। হয়রানি-ভোগান্তি তো কমেইনি, বরং বেড়েছে অনাস্থা ও ক্ষোভ।

২৭ জানুয়ারি গণশুনানির জন্য অভিযোগ জমা পড়েছিল ৭০টির বেশি। ওই দিন ৩০টির বেশি অভিযোগের শুনানিতে রাজউক কর্মকর্তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীদের সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ জন্য বেঁধে দেওয়া সময় কারও ক্ষেত্রে ছিল এক সপ্তাহ, কারও এক মাস, কারও কিছুটা বেশি। সেসব সমস্যা নিয়ে আজ ক্ষোভ ঝাড়েন নাগরিকেরা।

শুনানিতে মঞ্চের বাঁ দিকে পালা করে কয়েকজন অভিযোগকারী এসে পর্যায়ক্রমে তাঁদের হয়রানির কথা বলেন। এ সময় দর্শকসারি থেকে রাজউকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নানা মন্তব্য আসতে থাকে; যা থামাতে বেশ কয়েকবার মঞ্চের মাঝখানে বসা দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে হয়। একই সারিতে উপস্থিত ছিলেন রাজউক চেয়ারম্যান।

শুনানি সঞ্চালনা করেন দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ার। মঞ্চের ডানে রাজউকের উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও এস্টেট শাখার সদস্য, পরিচালক, উপপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগের মধ্যে ছিল টাকা জমা দিয়েও প্লটের দখল না পাওয়া, একজনের প্লট অন্যের নামে বরাদ্দ দেওয়া, লটারিতে বিজয়ী হয়েও প্লট না পাওয়া, অবৈধ স্থাপনা ভাঙার আবেদন করার পরও না ভাঙা, ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্লট পাওয়ার কথা থাকলেও না পাওয়া, নামজারি, প্ল্যান পাস করার ক্ষেত্রে হয়রানি-সংক্রান্ত।

আমানুল্লাহ নামের একজন অভিযোগকারী বলেন, ২৭ জানুয়ারির শুনানিতে বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পে তাঁর একটি প্লট এক মাসের মধ্যে অবমুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি।এ বিষয়ে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন আহমেদ রাজউকের বক্তব্য জানতে চাইলে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি খুব সহজ নয়।

আবেদনকারীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। একটু সময় লাগবে।’ জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘২৭ তারিখেও তো আপনারা একই কথা বলেছিলেন। এখন আবার একই কথা বলছেন। একটু সময় লাগবে মানে কী? তাহলে এই ১০ মাস আপনারা কী করলেন? আমরা কী শুধু আশ্বাস দিয়েই যাব? জনগণের প্রতি কি আপনাদের কোনো দায়বদ্ধতাই নেই?’

প্রবাসী চিকিৎসক রেজাউল ইসলাম ১৫ বছর আগে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ১৭ নম্বর সড়কের ৪১ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ পান। কিন্তু কয়েক বছর বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে দেখেন, তাঁর প্লটেই ৪৩ নম্বর প্লটের মালিক বাড়ি তুলে ফেলেছেন। এরপর শুরু হয় নিজের নামে বরাদ্দ পাওয়া প্লটটি ফিরে পেতে রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে দৌড়াদৌড়ি।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ জানুয়ারির শুনানিতে রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্লট বরাদ্দ দেওয়ার পর ওই সড়কের লে-আউট পরিকল্পনা সংশোধন করার ফলে একটি প্লট কমে গেছে। অন্য প্লটগুলোতেও বাড়ি উঠে যাওয়ায় নতুন একটি প্লট সৃজন করে তাঁকে দিতে হবে।
শুনানিতে যুক্তরাজ্য থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘সেই প্লট আমি এখনো বুঝে পাইনি। কোনো অগ্রগতিও দেখতে পাচ্ছি না।’

একইভাবে নাসির খান নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ, উত্তরায় এমন একটি প্লট বুঝে পেতে রাজউকের সাবেক এক চেয়ারম্যান তাঁর কাছে দুই কোটি টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম রাজউক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই যে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠল, এতে কি আপনাদের মাথা হেঁট হয়ে যায় না?’

শুনানি শেষে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন আহমেদ রাজউককে অভিহিত করেন ‘আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত’ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তিনি রাজউককে এলাকাভিত্তিক গণশুনানি আয়োজনের পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে ফলোআপ শুনানিতে অভিযোগকারীদের সমস্যা সমাধানে যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সেটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বিষয় নজরদারি করব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করতে পারলে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

রাজউক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘২৭ জানুয়ারির শুনানিতে যে অভিযোগগুলো উঠেছিল, তার কিছু বিষয় নিষ্পত্তি হয়েছে। অনেকগুলোই হয়নি। আজকের শুনানিতে সবাই খোলামেলাভাবে যে কথাগুলো বলেছেন, তা আমরা গ্রহণ করেছি। শুনানির নির্দেশনার আলোকে আমরা সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’