• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘আন্দোলনের নামে মানুষ মারলে ওই দলের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করুন’


প্রকাশিত: ৪:২১ পিএম, ১৪ জানুয়ারী ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৬৩ বার

শফিক আজিজ.ঢাকা: cartoon-bnp
অবরোধের নয় দিন চলছে আজ বুধবার।এই নয় দিনে সারাদেশে নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন ১৫ জন। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ যানবাহন ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার গভীর রাতে পেট্টোল বোমায় পুড়ে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন শিশুহ চারজন। এভাবে নিরীহ মানুষ মারার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার পতন আন্দোলনের নামে মানুষ মারলে ওই দলের রাজনীতি বাতিল করে দেয়া হোক।এ দাবি উঠেছে বিভিন মহল থেকে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দাবি উঠেছে নতুন করে দল রেজিষ্ট্রেশনের।কারণ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলের রিফর্ম জরুরী।
বলা হচ্ছে, এখন  দরকার সব পুরনো দল ব্যান্ড করে দিয়ে নির্বাচন কমিসনের  মাধ্যমে নতুন রূপে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুনভাবে দল গঠন।সর্ত থাকবে কঠিন এবং সর্ত ভঙ্গ করলে নিবন্ধন বাতিল হবে। তাছাড়া বর্তমান রাজনীতিক দলের কাছ থেকে ভালো কিছু হবেনা এবং মানুস মরাও বন্ধ হবেনা।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে আরও দুই ব্যক্তি প্রাণ হারালেন। গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাকে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলায় এনাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। নোয়াখালী শহরে একই রাতে মারা গেছেন জমির হোসেন নামের এক অটোরিকশাচালক। অবরোধকারীরা গতিরোধ করার চেষ্টা করলে অটোরিকশাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গেলে জমির নিহত হন বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাই।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৫ জন নিহত হলেন। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে টানা অবরোধ চলছে ৬ জানুয়ারি থেকে। এদিকে অবরোধে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ১৩ জেলায় অন্তত ৩৭টি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
অবরোধের কারণে বাস না পেয়ে ট্রাকযোগে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজ উদ্দিন বাজারের একটি দোকানের কর্মচারী এনাম। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ করে দুর্বৃত্তরা ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে। এতে যাত্রী এনাম (৩৩), সুমন শীল (৩২) ও ট্রাকচালক হাফেজ আহমদ (৩৫) দগ্ধ হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে জোরারগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসক এনামকে মৃত ঘোষণা করেন।
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে এনামের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক নুরুল ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এনামের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নোয়াখালী শহরের পৌর কল্যাণ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে গত সোমবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে একটি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে চালক জমির (৩২) নিহত হন। নিহত জমিরের ভাই গিয়াস উদ্দিনের ভাষ্য, জমির সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে নোয়াখালী শহরে প্রবেশের সময় একদল অবরোধকারী তাঁর গতিরোধের করার চেষ্টা করে। জমির দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সুধারাম থানার পুলিশ জানায়, ঘটনার পরই অবরোধে টহলে থাকা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের এলাকায় কোনো পিকেটারকে পায়নি। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৫০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা হয়েছে। জমিরের লাশ গতকাল বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টেকারহাট এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক ও একটি অটোরিকশায় আগুন দেয় অবরোধ সমর্থকেরা।
গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের বায়েজীদ থানার আতুরার ডিমো এলাকায় একটি হিউম্যান হলারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এর আগে সকালে নগরের ষোলশহর স্টেশনের কাছে একদল যুবক একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এর আগের রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গত সোমবার রাত ১০টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত অন্তত সাতটি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ভোরের দিকে পলাশবাড়ীর মহেশপুর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের তিনটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। সকালের দিকে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পলাশবাড়ী থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, অবরোধকারীরা হঠাৎ করে মহাসড়কে এসে যানবাহনে ইট-পাটকেল ছুড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের ইটেরপোল এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার ছয়টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে অবরোধকারীরা। সকালে মিয়ার রাস্তার মাথায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। একই সময়ে দালাল বাজার, বাস টার্মিনাল, আলিয়া মাদ্রাসা এলাকায় পিকেটিং করে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবির। এ সময় তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া এলাকায় গত সোমবার রাতে অবরোধকারীদের হামলায় আর্মড পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম আহত হয়েছেন। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা চলছে।
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের খয়রাবাদ সেতুর অদূরে গত সোমবার রাতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে একজন আহত হন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর ডাকে গতকালের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সহিংসতা ঘটেনি। তবে হরতালের আগের রাতেই চালবাহী ট্রাকে পেট্রলবোমা মারা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে যাত্রীবাহী একটি বাস।
জয়পুরহাটে সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে জয়পুরহাট-মঙ্গলবাড়ী সড়কের কুঠিবাড়ী সেতুর কাছে ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগ গতকাল দুপুরে শহরের প্রধান সড়কে অবরোধ ও হরতালবিরোধী মিছিল করেছে।
অবরোধে গত সোমবার যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগে গতকাল কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
এ ছাড়া ফরিদপুরে একটি পিক-আপ ভ্যান ঝালকাঠিতে একটি ট্রাক, চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে দুটি ট্রাক, কুমিল্লার দেবীদ্বারে একটি কাভার্ডভ্যানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পেট্রলবোমার আগুনে বাসের ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছে শিশুসহ চারজন। গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছে ১০ জন।
দেশব্যাপী ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাতাসন এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ হামলা হয়। রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, হতাহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একটি শিশু, দুজন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছে। আগুনে লাশগুলো পুড়ে কয়লা হয়েছে। গুরুতর দগ্ধ হওয়া ১০ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলায় জড়িত সন্দেহে ঘটনার পর থেকে আজ বুধবার ভোর পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের আট কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, রাত সোয়া ১২টার দিকে রংপুর শহরের মডার্ন মোড় এলাকা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী ৩০টি বাস পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ ও বিজিবি। ওই বাস বহরের সামনে ছিল পুলিশের গাড়ি, পেছনে বিজিবির গাড়ি। বহরের ২৩ নম্বরে ছিল পেট্রলবোমা হামলার শিকার হওয়া খলিল এন্টারপ্রাইজ নামের যাত্রীবাহী বাসটি। পুলিশ-বিজিবির প্রহরায় বাসের বহর মিঠাপুকুর উপজেলার বাতাসন এলাকায় এলে মহাসড়কের পাশের বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে বাস লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। খলিল এন্টারপ্রাইজ নামের বাসটিতে পেট্রলবোমা এসে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বাসে আগুন ধরে যায়। বাসের ভেতরে পুড়ে মারা যায় চারজন। গুরুতর দগ্ধ হয় ১০ জন।
নিহত চারজনের কয়লা হওয়া লাশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর দগ্ধ হওয়া ১০ জনকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমার কোন দেশে বাস করছি? এ কেমন বীভৎসতা! কোনো মানুষ কী করে এমনভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে?মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল আলম জানান, খলিল এন্টারপ্রাইজ নামের যাত্রীবাহী বাসটি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে ঢাকা যাচ্ছিল।