• বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪

আন্ডার বাজার গরম-আমদানির পরও দাম কমছে না


প্রকাশিত: ১০:৩০ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৩ বার

 

 

লাবণ্য চৌধুরী : ভারত থেকে আমদানির পরও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। বাজারভেদে ডজনে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, আজব দেশে সব সম্ভব। ডিম আমদানি হলো। তার পরও বাড়ছে দাম। বাজারে হচ্ছে কী? সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে ২৭০ টাকায় নেমেছে। তবে ব্রয়লারের দাম বেড়ে ১৯০ টাকা ছুঁয়েছে।

অন্যান্য সবজির দাম না কমলেও কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমে ২০০ টাকায় নেমেছে। পেঁয়াজ, আলু, মাছ, চালের বাজার আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, টাউন হল, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শুল্কায়নসহ সাড়ে ৭ টাকা দরে গত সোমবার ২ লাখ ৩১ হাজার মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসে এ বন্দর দিয়ে আরও ৪৭ লাখ ডিম আমদানি হবে। ভারত থেকে প্রতিটি ডিম কেনা হয়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা দরে। প্রতিটি ডিমের আমদানি শুল্ক ১ টাকা ৮৩ পয়সা।

এই বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরও দেশের ডিমের বাজারে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘আমরাও চাই ডিমের দাম কমুক। তাহলে বেশি বিক্রি হবে। কিন্তু মোকামে তো কমে না। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’

দামের ব্যাপারে হাতিরপুল বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা বলেন, ‘দাম বেড়ে গেছে। ১৬০ টাকা ডজন।’ আমদানির প্রভাব পড়েনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা চুনোপুঁটি। গোড়ার খরব কী জানি। যেভাবে কিনি। সেভাবে কিছু লাভ করে বিক্রি করি।’ টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে ডিমের ডজন ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া-মহাল্লাতেও একই অবস্থা। বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ সময় শফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজব এ দেশ। সব সম্ভবের বাংলাদেশ। ভারত থেকে কম দামে সাড়ে ৭ টাকা পিস ডিম আসছে সব পত্রিকা, টিভিতে দেখা গেল। কিন্তু বাজারে এসে দেখি উল্টো চিত্র। বাচ্চারা খায় বেশি। তাই ১৬০ টাকাতেই এক ডজন ডিম কিনলাম। কী আর করার আছে। টাকা না থাকলে বাজারে আসতে হবে না। খেতে হবে না। সরকার করছে কী?

কমেনি চালের দাম

আগের মতোই বেশি দামে চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে বিভিন্ন বাজারে। মিনিকেট ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের অহিদুল ট্রেডিংয়ের অহিদ হোসেনসহ অন্য বিক্রেতারা বলেন, ‘যে যা-ই বলুক, কোনো কিছুতেই চালের দাম কমছে না। কমবে না। কারণ মিলেই বেশি দাম।’

এই বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার বলেন, আগের মতোই ছোলার দাম ১১০-১২০ টাকা কেজি, দুই কেজির প্যাকেট আটার দাম ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫ টাকা, পাঁচ লিটারের দাম ৭৯০-৮০০ টাকা। চিনির কেজি ১৩০-১৩৫ ও দেশি লাল চিনি ১৬০-১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু ওই বাজারেই নয়, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। আগের মতোই দাম বেশি।

এবার ভরা মৌসুমেও ভোগাচ্ছে আলু-পেঁয়াজ। বাধ্য হয়ে সরকার শুল্ক কমিয়েছে। শুল্ক হ্রাস করলেও বাজারে তার প্রভাব দেখা যায়নি। বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই পেঁয়াজের কেজি ১১০-১২০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ ও রসুন ২০০-২৩০ টাকা, আদা ২৩০-২৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

সোনালি ২৬০ টাকা, ব্রয়লার বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি

আগের সপ্তাহে বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ১০-২০ টাকা বেড়ে ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে ২৬০-২৭০ টাকায় নেমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা কম। এ জন্য কমছে দাম। তবে দেশি মুরগির কেজি আগের মতোই ৫০০-৫৫০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান।

হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসের দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ওপর দাম কমবেশি হচ্ছে। আমাদের করার কিছু নেই। কিছু থাকলে মোকামে করতে পারে। মুরগির দাম বাড়লে-কমলেও আগের মতোই বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০-৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

কমেছে কাঁচা মরিচের দাম

খুচরা বিক্রেতারা জানান, এ সপ্তাহে তেমন ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ জন্য সবজির দাম বাড়েনি। আগের সপ্তাহের মতোই প্রায় সবজির দাম। তবে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা কমেছে। হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা জিহাদ ও টাউন হল বাজারের জাহিদ বলেন, ‘সবজির দাম কমেনি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কমে কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

বেগুনের কেজি ৮০-১০০ টাকা, করলা ও ঝিঙ্গা ৭০-৮০, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও ধুন্দুল, ৫০-৬০, মুলা ও পেঁপে ৪০-৫০, শসা ৬০-৮০, বরবটি ও কচুরলতি ৮০-৯০, টমেটো ও গাজর ১৩০-১৮০, শিম ২৫০, লাউ, চালকুমড়া, কপির পিস ৬০-৭০ টাকা। এ ছাড়া লাউ ও পুঁইশাকের আঁটি ৩০-৪০ টাকা, কলমি শাক, লাল শাক, পালং এবং পাটশাকের আঁটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

কমেনি মাছের দাম

অন্য জিনিসের মতো মাছের দামও কমেনি। বিক্রেতারা বলেছেন, আগের মতোই রুই-কাতলার কেজি আকারভেদে ৩০০-৬৫০ টাকা, চিংড়ির কেজি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ও মলা মাছ ৫০০-৭০০, পাঙাশ ও তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, শিং মাছ ৫০০-৭০০, মাগুর ৬০০ ও কই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা ও পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। ইলিশও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার ইলিশের সরবরাহ কম। এ জন্য দাম কমছে না। গত সপ্তাহের মতোই ইলিশের কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ছোটগুলোর কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা।