• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

আনসারুল্লাহ’র নয়া মিশন ফাঁস-


প্রকাশিত: ৭:১৪ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ১৯ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৭ বার

 

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্য দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনা করছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব।তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব বলছে, আনসারুল্লাহর শীর্ষ নেতা জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করতে প্রয়োজনে কারাগারে হামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে সংগঠনটি। র‌্যাব সদরদপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ওই চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন, মো. শাহরিয়ার নাফিস ওরফে আম্মার হোসেন (২০), রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪), মো. রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪) ও মো. আব্দুল মালেক (৩১)।তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এবং র‌্যাবের অনুসন্ধানে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য শুক্রবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় বিয়ে সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে মন্তব্যের জন্য ওই পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনা করে আনসারুল্লাহর ওই চার সদস্য।

ওই পত্রিকায় গত বছরের জুলাই মাসে একটি লেখা প্রকাশিত হয়। তারা (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) মনে করে, ওই লেখার দায় দায়িত্ব সম্পাদকের উপরই পড়ে।তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাদের আটক করা সম্ভব হয়েছে।২০১৫ সালে বইমেলার সময় লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা ও হত্যার পেছনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি। ওই বছর মে মাসে সরকার এ জঙ্গি দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতার খবর প্রথম আসে ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের পর। সংগঠনটির আমির মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী ওই মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাভোগ করছেন।আনসারুল্লাহ নিষিদ্ধ হওয়ার পর এ দলের সদস্যরা আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা শুরু করে বলে সে সময় খবর দেন গোয়েন্দারা। পরে ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকেও সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আনসারুল্লাহর কর্মীরা আবারও দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে বলে গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন।তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হল, তাদের সংগঠনের প্রধান জসীমউদ্দীন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও মুক্ত করবে বলে জানায়।

এই লক্ষ্যে তারা অর্থ সংগ্রহ করছিল এবং সেই টাকার একাংশ গ্রেপ্তার রাসেলের কাছে জমা ছিল বলে তথ্য দেন মুফতি মাহমুদ খান।র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উত্তরার অভিযানে গ্রেপ্তার চারজনের কাছ থেকে ‘উগ্রবাদী বই’, মোবাইল ফোন ও ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।গ্রেপ্তারদের মধ্যে নাফিস ও রবিউলের বাড়ি বগুড়ার চরমুখশিয়ায়। রাসেলের বাড়ি ভোলার ফুলকাছিয়া; মালেকের বাড়ি ভোলার হাছানগঞ্জে।

গত ২৮ জানুয়ারি আশুলিয়া এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই উত্তরা থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করার কথা র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।র‌্যাব বলছে, এক সময় মাদ্রাসায় পড়া নাফিস ২০১৭ ফেইসবুকের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে জড়িয়ে পড়েন। নতুন সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের উপর নজরদারি ছিল তার কাজ।মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নাফিস কিছুদিন আগে তার মতাদর্শ গোপন করে অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের একটি ফেইসবুক গ্রুপের সদস্য হয়ে যান। ওই গ্রুপের একজন সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে আনসারুল্লাহ। ওই দায়িত্ব দেওয়া হয় নাফিসসহ তিনজনকে।

মিশন শেষ করতে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে এবং বাকি দুজন বরগুনা থেকে বগুড়া যায়। তারা সেই অ্যাকটিভিস্টকে ফোন করে দেখা করতে বলে। কিন্তু সেই ব্যক্তি না যাওয়ায় হত্যার মিশন আর সম্পন্ন হয় নাই।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার রাসেল এক সময় গার্মেন্টে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেইসবুকের মাধ্যমে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং আনসারুল্লাহর একটি গ্রুপে যোগ দেন। পরে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ওই অংশের সমন্বয়কের দায়িত্ব পান।

এই চারজনের মধ্যে রবিউল ২০১০ সালে দাখিল পাস করে বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। গতবছর তিনি নাফিসের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।আর মালেক পেশায় একজন গাড়ি চালক। ২০১৮ সালে তিনি রাসেলের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেন বলে মুফতি মাহমুদ খান জানান।তিনি বলেন, আনসারুল্লাহর ওই ফেইসবুক গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করে আমান নামে একজন। তিনি এখন ছদ্মবেশে একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে নিয়েঅজিত বলে রাবের কাছে তথ্য আছে।