আধুনিক শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হবে : প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সশস্ত্র বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে তাদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে চাই-এটা যে শুধু যুদ্ধের জন্যই দরকার তা নয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের জন্যও এর প্রয়োজন রয়েছে।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে চিনের সফররত প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল চ্যাং ওয়াংজুয়ান-এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে একথা বলেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতসহ নানা বিষয়ে পারষ্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ‘ওয়ান চায়না পলিসি’ বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই যে কোন দেশের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব।
চিনকে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন কাজে বেইজিং বরাবরই সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ এবং চিনের কৃষিখাতের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে করে কৃষিনির্ভর দুই দেশেরই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী লাভবান হবে।
বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দুটি দেশের কৃষিখাতই পারষ্পরিক সহযোগিতার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।বাংলাদেশ এবং চিনের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই ঘনিষ্টতা উত্তোরত্তোর আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মায়নমার (বিসিআইএন) অর্থনৈতিক করিডোর চালুর প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে সহযোগিতার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে এবং এতে করে এই চার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও বিস্তৃতি লাভ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মাধ্যমে চিনের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানান।বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়শী প্রসংশা করে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ সময় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান রয়েছে এবং দেশের অর্থনীতিও ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে উল্লেখ করে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং চিনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান পারষ্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরো সুদৃঢ় হবে।’
জেনারেল চ্যাং ওয়াংজুয়ান এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালে চিন সফরের প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, সেই সফরেই দুই দেশ ‘স্টেট টু স্টেট’ এবং ‘মিলিটারি টু মিলিটারি’ সম্পর্ক উন্নয়নে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের তিনবাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসংগ উল্লেখ করে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে খুবই ফলপ্রসু আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও মতবিনিময় হয়।’
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ সময় বলেন, দু-পক্ষই মনে করে এক্ষেত্রে ‘হাই লেভেল’ এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির এবং জুনিয়র অফিসারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ এবং চিনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবার পর থেকেই উভয়ের মধ্যে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং সেনা সহযোগিতা চলমান রয়েছে এবং দুটি দেশই আঞ্চলিক শান্তি স্থাপন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে।
বাংলাদেশের ওয়ান চায়না পলিসিতেও এ সময় চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, সশ্রস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত মা মিংজিয়াং উপস্থিত ছিলেন।