আধুনিকতার মগজ ধোলাই-দুই বোনের আর্তি-
ডেস্ক রিপোর্টার : আধুনিকতার মগজ ধোলাইয়ের পর দুই বোনের আর্তি- একজনের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘আমরা যৌনকর্মী নই, আমরা মাদকাসক্ত নই।’ আরেক বোনের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘মাননীয় বোম্বে হাইকোর্ট, আমরা পরিস্থিতির শিকার, আমরা বিচার চাই।’ দুজনেরই প্ল্যাকার্ডের নিচে লেখা, ‘#বাবা-মায়ের হাত থেকে আমাদের বাঁচান।’
ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ফ্রি প্রেস জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাবা-মায়ের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে এভাবেই প্ল্যাকার্ড নিয়ে গত বুধবার হেঁটেছেন মুম্বাই মালাড ওয়েস্টের চিনচলি বুন্দার রোড এলাকার বাসিন্দা দুই বোন শিবাঙ্গী সুলে ও সামিরা সুলে। তাঁরা ন্যায়বিচার চেয়ে ওই প্ল্যাকার্ড নিয়ে বোম্বে হাইকোর্ট থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত হেঁটেছেন।
কিন্তু বাবা-মায়ের প্রতি কেন এমন অভিযোগ? ওই দুই বোনের দাবি, বাবা-মা তাঁদের মাদকাসক্ত ও যৌনতার সঙ্গে জড়িত বলে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এতে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বোম্বে হাইকোর্টে গেছেন বাবা-মা। আর পুলিশ এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশকে তিরস্কার করেছেন আদালত। এ কারণেই ন্যায়বিচার চেয়ে তাঁরা পথে নেমেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৩ বছর বয়সী শিবাঙ্গী সুলে আইন বিষয়ে স্নাতক। আর ছোট বোন ২১ বছর বয়সী সামিরা সুলে স্থাপত্যবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শিবাঙ্গী ও সামিরার অভিযোগ, বাবা-মা তাঁদের খুব নির্যাতন করেন। ঘরে আটকে রাখতেন। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তাঁদের কয়েকজন বন্ধু, শিফু সংকৃতি নামে একটি সংগঠনের পরিচালক সুনীল কুলকার্নি ও পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। এরপর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতন ও অবৈধভাবে আটকে রাখার অভিযোগে মামলা করতে চান তাঁরা। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা নেয়নি।
শিবাঙ্গী-সামিরার বাবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বাবা-মায়ের দাবি, শিবাঙ্গী ও সামিরা দুই বোনই সুনীল কুলকার্নির ফাঁদে পড়েছেন। সুনীল নিজেকে একজন চিকিৎসক ও মনোবিদ বলে দাবি করেন। তিনি শিফু সংকৃতি নামে একটি সংগঠন চালান। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনসহ বেশ কিছু মামলা রয়েছে। এই সুনীলের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে তাঁদের দুই মেয়ের আচরণে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
শিবাঙ্গী-সামিরার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে বাবা-মা বলেছেন, ‘সুনীল কুলকার্নি ও তাঁর সংগঠন যৌনতা এবং মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে সুনীল ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী মেয়েদের টার্গেট করে। এরপর ওই মেয়েদের সম্মোহনের মাধ্যমে বশ করে সংগঠনে ডেকে নেন। এরপর সুনীল ছাড়া ওই মেয়েরা আর কিছুই ভাবতে পারে না।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিবাঙ্গী-সামিরার বাবা-মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল মালাড পুলিশ বোম্বে হাইকোর্টকে জানায়, শিফু সংকৃতি ও সুনীল কুলকার্নি যৌনতা ও মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য পরে আদালত মালাড পুলিশকে তিরস্কার করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার মুম্বাই পুলিশের অপরাধ শাখা সুনীল কুলকার্নিকে গ্রেপ্তার করেছে।
ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (ডিএনএ) অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার শিবাঙ্গী ও সামিরা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে সামিরা বলেছেন, ‘আমরা শুধু স্বাধীনভাবে বাঁচতে চেয়েছি। কিন্তু আমাদের বাবা-মা আমাদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্ত ও যৌনতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন। বাবা-মায়ের ওই অভিযোগ মিথ্যা। শিফু সংকৃতি সম্পর্কে তাঁরা বোম্বে হাইকোর্টকে ভুল ধারণা দিচ্ছেন। কারণ কীভাবে শরীর ও মনকে নেতিবাচক ভাবনা থেকে মুক্ত করা যায়, শিফু সংকৃতি তারই শিক্ষা দেয়।’
সাক্ষাৎকারে শিবাঙ্গী সুলে বলেন, ‘গুন্ডারা আমাদের পেছনে ধাওয়া করছে। পুলিশ যখন-তখন থানায় ডেকে হয়রানি করছে। বোম্বে হাইকোর্টের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের প্রতি ন্যায় বিচার করুন, কারণ আমরা পরিস্থিতির শিকার। দয়া করে বাবা-মায়ের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমরা খারাপ কিছুই করিনি।’
সুনীল কুলকার্নি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। পুলিশের সহায়তায় ওই তরুণীদের উদ্ধার করেছিলাম বলেই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ওই তরুণীদের বাবা-মা অভিযোগ করছেন, আমি ওই দুই বোনকে বশ করে যৌন নির্যাতন করেছি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’মালাড থানার জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক সুধীর মাহাদিক বলেন, ওই দুই তরুণীর বিরুদ্ধে অনৈতিক কিছু করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সূত্র বলছে, তদন্তে দেখা গেছে সুনীল কুলকার্নি চিকিৎসক বা মনস্তত্ত্ববিদ নন। তাঁর মুঠোফোন ও পেনড্রাইভে তরুণ-তরুণীদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। তিনি তরুণ-তরুণীদের ওষুধ দিয়ে মগজ ধোলাই করতেন। ২০১৫ সাল থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করে সংগঠনে নিয়ে আসেন।