আদালতে জবানবন্দী-সংখ্যালঘু মা-মেয়েকে গনধর্ষণ করলো যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগাররা
পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক মা ও তার মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে ‘প্রমোদতরী’ ভাসিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করার ঘটনার সঙ্গে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে জানা গেছে।এ ঘটনায় আজ সোমবার ধর্ষিত মা মেয়ে আদালতে জবানবন্দী দিচ্ছেন।
উপজেলার নাজিরপুর এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীতে ট্রলারে (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) তুলে গত শনিবার রাতে ওই বর্বর ঘটনা ঘটানো হয়। একপর্যায়ে মা ও মেয়ের চিৎকার শুনে স্থানীয় জেলেরা তাদের উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে নুর আলম নামের একজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। নুর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পালিয়ে যায়।
আটক নুর আলম নাজিরপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি বলে নিজের পরিচয় দেয়। নুর আলম অবশ্য বলে, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই। অন্যরা এর সঙ্গে জড়িত। আমাকে ট্রলারের মেশিন সারানোর জন্য নেওয়া হয়েছিল। সোহেল (৩২), রহিম মীর (৩৫), হারুন মৃধা এরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে নুর আলম বলে, সবাই যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহেল নাজিরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী। রহিম মীর ওই ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং হারুন মৃধা ওই ওয়ার্ডের যুবলীগ কর্মী। এরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুকের কাছের লোক বলে এলাকায় পরিচিত।
তবে, এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক বলেন, ‘যারা ঘটনা ঘটিয়েছে এদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই। এরা আমার কাছের লোকও না। সবাই মোটরসাইকেলচালক। এরা সবাই অপরাধী। মা-মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
নির্যাতিত ওই মা রোববার বাউফল থানার ওসির উপস্থিতিতে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, শনিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তিনি তার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে একই উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা নুরজাহান গার্ডেনে ঘুরতে যান। সেখানে তারা বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করেন। সন্ধ্যার আগে শৌলা থেকে একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।
কিন্তু মোটরসাইকেলচালক তাদের বাড়ির পথে না নিয়ে পার্শ্ববর্তী নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদি তেঁতুলিয়া নদীর পারে নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ছয়জন লোক এসে জোর করে মা ও মেয়েকে নিয়ে একটি ট্রলারে তোলে। ট্রলারটি মাঝনদীতে যাওয়ার পর মাকে ট্রলারের ভেতরে এবং মেয়েকে ট্রলারের ওপরে উঠিয়ে ধর্ষণ করা হয় পালাক্রমে। উত্তর তেঁতুলিয়া নদীতে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত ট্রলার চালানো হয় এবং দফায় দফায় মা-মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মমিনপুর এলাকার জেলে সুমন মোল্লা জানান, কেশবপুর ইউনিয়নে নদীর চর ঈশান এলাকায় মাছ ধরছিলেন তিনি। রাত ১১টার দিকে একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পান। তখন ২০-২৫ জন জেলে একত্র হয়ে ওই ট্রলারটি ঘেরাও করলে কয়েক ব্যক্তি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর তাঁরা ওই ট্রলার থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করেন। সেই সঙ্গে তারা নুর আলম নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেন।
বাউফল থানার ওসি আজম খান ফারুকী বলেন, ‘শনিবার রাতে খবর পেয়ে মা-মেয়েকে তেঁতুলিয়া নদীর ভরিপাশা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় আটক করা হয়েছে নুর আলম নামের একজনকে। পাশবিক নির্যাতনের কারণে মা ও মেয়েকে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। নির্যাতিত মা ও মেয়েকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।