• বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আদানির বিদ্যুৎ হুমকি- একদিকে দাম বেশি অন্যদিকে অব্যবসায়িক সূলভ আচরণ


প্রকাশিত: ৮:৪৫ পিএম, ৩ নভেম্বর ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৩ বার

একদিকে দাম বেশি অন্যদিকে অব্যবসায়িক সূলভ আচরণ

বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে আদানি পাওয়ারের বাণিজ্যিক সফলতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে, কারণ ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একমাত্র ক্রেতা বাংলাদেশ এবং ৮০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের মধ্যে একটিকে অলস রাখা হচ্ছে। প্রতি মাসে ৯ থেকে ১০ কোটি ডলারের বিল হলে বছরে ১১০ কোটি ডলারের আয় করার সুযোগ রয়েছে।

 

 

শফিক রহমান : ব্যবসা করতে হলে বকেয়া পড়তেই পারে তার মানে এই নয় আলটিমেটাম দিয়ে পুরোপুরি টাকা না দিলে আর ব্যবসা করব না এটা বলা চলে? এটা ঠিক কেমন যেনো বিমাতা সুলভ বা অব্যবসায়ী সূলভ আচরণ বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। আর এই আচরণটা করছে ভারতের আদানি গ্রুপ। আন্তজার্তিক অঙ্গণে যারা ব্যবসা করেন তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে আদানি পাওয়ারের বাণিজ্যিক সফলতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে, কারণ ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একমাত্র ক্রেতা বাংলাদেশ এবং ৮০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের মধ্যে একটিকে অলস রাখা হচ্ছে। প্রতি মাসে ৯ থেকে ১০ কোটি ডলারের বিল হলে বছরে ১১০ কোটি ডলারের আয় করার সুযোগ রয়েছে।

তবে ড. ইউনূস সরকার যদি ওই বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তবে ভারতের আদানির লস হবে সবার আগে। কারণ এই মূহুর্তে আদানি অন্য কারো কাছে ওই বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ নেই। কথায় বলে না নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল! কাজেই আলটিমেটামের চেয়ে আদানির ব্যবসায়িক সূলভ আচরণ করাটাই উচিত হবে। বাংলাদেশ তো টাকা দেবেই; না তো করেন। অথচ আদানি বিমাতা সূলভ আচরণ করে বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি দিয়েছে‍!

আদানির এই আচরণের প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। ফলে এখন সেন্ট্রাল রিজার্ভে হাত না দিয়েই আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো করতে পারছি। ভারতের আদানি গ্রুপের বকেয়া পেমেন্ট দেওয়ার গতি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। সেই সক্ষমতা সরকারের আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ সেক্টরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আদানি গ্রুপের মতো ভারতের অন্যান্য ব্যবসার বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে। আদানি ছাড়াও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পিটিসি ইন্ডিয়া, এনভিভিএল লিমিটেড এবং সেমকর্প এনার্জি ইন্ডিয়া বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৮ দশমিক ৭৭ টাকা চার্জ করে থাকে। সেখানে আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিটে নেয় ১৪ দশমিক ০২ টাকা। যা অন্যান্যদের চেয়ে অস্বাভাবিক রকম বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের। এরই জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার বকেয়া পূরণে ৪ দিন (৭ নভেম্বর) সময় বেধে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, অন্যথায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।

সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করেনি বিপিডিবি।এর আগে, বকেয়া পরিশোধে বিলম্বের কারণে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড গত ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) ওয়েবসাইটে শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের গড্ডা প্ল্যান্ট ১,৪৯৬ মেগাওয়াট স্থাপন ক্ষমতার বিপরীতে ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে।

আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী, এর পরের স্থানে রয়েছে পায়রা (১,২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১,২৩৪ মেগাওয়াট) এবং এসএস পাওয়ার আই (১,২২৪ মেগাওয়াট) প্ল্যান্ট।খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ডলার সংকটের কারণে সময়মতো অর্থ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ।যদিও এ বিষয়ে এখনও কোন মন্তব্য করেননি আদানি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন যে দ্রুতই এ বিষয়ে একটি সমাধানে আশাবাদী তারা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের আদানি গ্রুপ টাকা পায় এটা সত্য। তাদের পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে গতি বাড়িয়েছি। পূর্বের যে বিল বাকি আছে সেটার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। তারা বিশাল ফাইল অব বেকলট রেখে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, আদানি গ্রুপকে গত মাসে আমরা ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করেছি। যেটা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। আমাদের তরফ থেকে পেমেন্ট আরও দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের রিজার্ভ বাড়া শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো রিজার্ভে হাত না দিয়েই করতে পারছি। পেমেন্ট ৭০০ মিলিয়ন ডলার বাকি আছে। সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দিতে পারব।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমরা কারো দ্বারা পাওয়ার হোস্টেজ (জ্বালানি নির্ভরতা) হব না। নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বছরে ১৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টাকা পাচারের এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। কত টাকা পাচার হয়েছে, তা বের করতে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।