• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

আড়াই হাজার কোটি লুটপাট করেও লাকি ঘুরছে!


প্রকাশিত: ১০:৩৭ পিএম, ৩ অক্টোবর ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭ বার

 

 

গ্রেফতার হচ্ছেনা শিল্পকলা ডাকাত লাকি-!

” টানা ৭ বার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থেকে লোপাট করেছেন আড়াই হাজার কোটি টাকা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ২টি তদন্ত কমিটি করলেও লাকির লাগাম টানতে পারেনি। বরং তদন্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগে আবারও তাকেই পুন:নিয়োগ দেয় ডিজি হিসেবে। এরপর শুরু করে প্রকল্প ও নিয়োগ বানিজ্য। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বহু অডিট আপত্তি।” 

 

লাবণ্য চৌধুরী : ঘুরে বেড়াচ্ছে শিল্পকলা শিল্পিত ক্রিমিনাল লিয়াকত আলী লাকি। বহু অপকর্মের নায়ক শিল্পকলার ডাকাত লাকি টানা ৭ বার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থেকে লোপাট করেছেন আড়াই হাজার কোটি টাকা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ২টি তদন্ত কমিটি করলেও লাকির লাগাম টানতে পারেনি। বরং তদন্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগে আবারও তাকেই পুন:নিয়োগ দেয় ডিজি হিসেবে। এরপর শুরু করে প্রকল্প ও নিয়োগ বানিজ্য। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বহু অডিট আপত্তি।

মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ২২৭ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ টাকার অনিয়মের সন্ধান পেলেও লাকির টিকিটিও ছুতে পারেনি। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অনুসন্ধান করে এই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার বলেছেন, লাকি ৭২টি ভয়াবহ অনিয়ম করে ২২৭ কোটি টাকােখেয়ে ফেলেছে।

শিল্পকলা একাডেমি যেন টাকার খনি! একের পর এক কর্মকর্তার রুম থেকে মিলছে টাকার সব বান্ডিল। এর আগে দুর্নীতিগ্রস্ত সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর রুম থেকেও মিলেছিল টাকার বান্ডিল। এবার তল্লাশি চালিয়ে শিল্পকলা একাডেমির নারী কালচারাল কর্মকর্তার রুম থেকে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

প্রায় এক যুগ ধরে মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা তুলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চুক্তিভিত্তিক এক কর্মকর্তাকে সচিবের দায়িত্ব দিয়ে এ অর্থ উত্তোলন করে নেয় লিয়াকত আলী লাকীসহ একটি সিন্ডিকেট।দুদকে দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ জুন শিল্পকলা একাডেমির আগের সচিব নওশাদ হোসেন বদলি হলে সেদিনই নতুন আদেশ জারি করে একাডেমির চুক্তিভিত্তিক পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিমকে সচিবের দায়িত্ব দেন লাকী। ৩০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে উত্তোলন করা হয়। সরকারি বরাদ্দের অর্থ খরচ দেখাতেই এমন অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে।

এছাড়া লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সংগীত বিভাগের কক্ষে ব্যবহারের জন্য পর্দা, ক্রোকারিজ ও ফার্নিচার না কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ, ডান্স অ্যাগেইনস্ট করোনা কর্মসূচির আওতায় নৃত্যদলের সম্মানী, হার্ডডিস্ক কেনা, ডকুমেন্টেশন, প্রপস-কস্টিউম, প্রচার ও বিবিধ ব্যয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের তোলার অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিজি লিয়াকত আলী লাকীর মোবাইলে ফোনে একাধিকবার কল দিলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

যাহোক, মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিম এ টাকা উদ্ধার করে।অভিযানে গিয়ে শিল্পকলার দায়িত্বে নিয়োজিত কালচারাল অফিসার আবু সালেহ মো. আবদুল্লাহ ও ওই বিভাগের কালচারাল অফিসার সাদিয়া বিনতে আফজরের তালাবদ্ধ কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে শিল্পকলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।

এর আগেও সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর কক্ষ তল্লাশি করে পাওয়া যায় ২ লাখ টাকা। আরেক কালচারাল অফিসার এম মোস্তাক হোসেনের কক্ষ থেকে তল্লাশি চালিয়ে আরও ২ লাখ টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথিপত্র উদ্ধার করে তল্লাশি টিম।কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর অনিয়ম দুর্নীতির দোসর কর্মকর্তাদের তালাবদ্ধ রুমগুলো যেন টাকার খনিতে পরিণত হয়েছে।টাকা উদ্ধার বিষয়ে কালচারাল অফিসার কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আফজাল হোসেনের মেয়ে সাদিয়া বিনতে আফজালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি।

দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিয়াকত আলী লাকী প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ছিলেন। এই পদে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে শত শত অভিযোগ উপেক্ষা করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তাকেই মহাপরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।

এর আগে লাকির বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। তদন্তে নেমে দুদক শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালককে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্পকলার ঢাকা কার্যালয়ে বরাদ্দকৃত বাজেট ও ব্যয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে অব্যয়িত ৩৫ কোটি টাকা ২০২১ সালের ৩০ জুনে ব্যয়করণ-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তলব করে।

এছাড়াও রয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান আয়োজন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি, ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ব্যয়সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাউচার-ক্যাশ বই এবং শিল্পকলা একাডেমি নামীয় সোনালী ব্যাংক (সেগুনবাগিচা শাখা) অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টের কপি। ২ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়।