আঞ্চলিক বানিজ্য জোরদারে চার দেশের অর্থনৈতিক করিডর
প্রিয়া রহমান.ঢাকা: আঞ্চলিক বানিজ্য জোরদারে চার দেশের অর্থনৈতিক করিডর গুরুত্ব দিচ্ছে চীন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সমন্বয়ে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আঞ্চলিক বানিজ্য বাড়াতে চার দেশ নিয়ে নতুন সিল্ক রুট হচ্ছে।বাংলাদেশ ভারত মিয়ানমার ও চীন নিয়ে গঠিত হবে এই সিল্ক রুট। এই রুটের ফলে চারটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।এতে বাংলাদেশের বানিজ্যিক সুবিধা বাড়বে সবচেয়ে বেশী। প্রস্তাবিত করিডর উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের পশ্চিমাঞ্চলের ১০ লাখ ৬৫ হাজার বর্গকিলোমিটারকে যুক্ত করবে।
এই পথ কলকাতা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের মান্ডালার ভেতর দিয়ে কুনমিং যাবে। এই চারটি দেশের সরকারি কর্মকর্তারা প্রস্তাবিত করিডরের বিষয়ে নিজ নিজ দেশের প্রতিবেদন পেশ করবে। আগামী ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠক হবে।
তবে এ বিষয়ে চার দেশের শীর্ষ পর্যায়ে একটি রাজনৈতিক সংলাপের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষভাবে আগ্রহী।
গতকাল মঙ্গলবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বেইজিং সফররত বাংলাদেশ মিডিয়া প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিসিআইএম নিয়ে আলোচনায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তারা এই ধারণা ও তথ্য প্রকাশ করেছেন।
বেইজিংয়ে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের (এনডিআরসি) আওতায় পরিচালিত একাডেমি অব মাইক্রোইকোনমিক রিসার্চের বিশেষজ্ঞরা গতকাল সকালে প্রস্তাবিত করিডরের অগ্রগতি ব্যাখ্যা করেন। এই আলোচনায় অংশ নিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস মিনিস্টার গুয়ো ইয়েঝু বলেন, প্রস্তাবিত করিডর এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চায়না ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের ইনস্টিটিউট অব সাউথ অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়ান অ্যান্ড ওসেনিয়া স্টাডিজের উপপরিচালক লি লি ওই আলোচনায় বলেন, চীন-ভারত সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক পরিপক্ব।
দুই দেশের সীমান্ত বিরোধের মতো বিষয় নিয়ন্ত্রণে রেখে শি জিনপিং-নরেন্দ্র মোদি সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একমত হয়েছেন। উভয় নেতা তাঁদের সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রাচীন সিল্ক রুট পুনরুজ্জীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীন-ভারত সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্পর্কে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাইর কুন বলেন, প্রস্তাবিত করিডর হলো বৈশ্বিক বৃহত্তর কানিকটিভিটির একটি অংশ।১৯৯৯ সালে চীনের ইয়ানান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় (কুনমিং উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত) ভারতের গৌহাটিভিত্তিক সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট সোশ্যাল অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ (সিইএসপিআর) এবং ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) প্রস্তাবিত করিডরের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করেছিল।
২১ নভেম্বর গৌহাটিতে সিআইএসপিআর প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিসিআইএম করিডরের পক্ষে।
গত বছর এই করিডর বাস্তবায়নের মহড়া হিসেবে প্রথমবারের মতো কলকাতা থেকে কুনমিং পর্যন্ত গাড়ি শোভাযাত্রা হয়েছিল।
চায়না সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড স্টাডিজের (সিসিসিডব্লিউএস) মহাপরিচালক সুন হাইয়ান বলেন, প্রস্তাবিত করিডর বাস্তবায়নে চীন খুবই আশাবাদী। তাঁর কথায়, চীন যে উপলব্ধির ভিত্তিতে এই করিডরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে, তা হলো প্রতিবেশীদের দরিদ্র রেখে উন্নতি করলে তা টেকসই হয় না।
চীনের এই দৃষ্টিভঙ্গি পাশ্চাত্যের উন্নয়ন ধারণা থেকে স্বতন্ত্র। তবে এটা ঠিক যে চীন প্রথমত তার স্বার্থেই এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাইছে। কারণ চীন দীর্ঘকাল তার দেশের পশ্চিমাঞ্চলকে অগ্রাহ্য করেছিল। আর এর উন্নতির জন্য বিসিআইএম করিডর অপরিহার্য।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে ছয়টি করিডরের মৌলিক অবকাঠামোতে উন্নতি আনার ধারণা নিয়ে চীন অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে এক নম্বর অগ্রাধিকার হলো বিসিআইএম করিডর।
সিপিসির আন্তর্জাতিক বিভাগের চায়না সেন্টার ফর কনটেম্পরারি ওয়ার্ল্ড স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ ওয়াং দং চীনের ‘ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড’ নীতি ব্যাখ্যা করে বলেন, সবকিছুকে আর আগের মতো স্নায়ুযুদ্ধের চোখে দেখা হয় না। দুই সপ্তাহ আগে শি-ওবামা বৈঠকে আবারও পরিষ্কার হয়েছে যে উন্নয়নকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় বরং পরিপূরক হিসেবে দেখা হবে।
বিসিআইএম করিডর বাস্তবায়নে চীন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউকে অংশীদার হিসেবেই পেতে চাইছে।সিপিসি নেতারা প্রস্তাবিত করিডরের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য একই সময়ে তবে আলাদাভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মিডিয়া দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।