আজ ইতিহাসের ভয়াল নাইন ইলেভেন
নিইইয়র্ক থেকে বাবলা আহমেদ : ইতিহাসের বিভীষিকাময় দুনিয়া কাঁপানো নাইন ইলেভেন আজ। ১৬ বছর আগে ২০০১ সালের এ দিনে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে একযোগে ৪টি আত্মঘাতী বিমান হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা।ওই হামলায় নিহত হন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু হয়।সেই দিনের নিহতদের স্মরণে সোমবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। বিশেষভাবে স্মরণ করা হচ্ছে দমকল বাহিনীর নিহত ৩ শতাধিক উদ্ধারকর্মী এবং প্রায় ৬শ’ পুলিশ সদস্যকে।
নিউইয়র্কে গ্রীষ্মের দুপুর। আর দশটা সাপ্তাহিক ছুটির মতোই একটি ছুটির দিন। টাইমস স্কয়ারে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের আনাগোনা। ছবি তুলছেন। চারপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি। সতর্ক নজরদারি। পথচারীদের চলাচলের স্থানগুলো চারদিক দিয়ে আটকানো, যাতে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে হামলা করা না যায়। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধরনের বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ইতিহাসের অন্যতম প্রাণহানির নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার ১৬ বছর পূর্তি আজ। এত দিনেও সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক কাটেনি নিউইয়র্কবাসীর। অনেকে আবারও হামলার আশঙ্কা করছেন। আতঙ্কে আছেন আরেকটি নাইন-ইলেভেনের।২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বিখ্যাত টুইন টাওয়ারে আছড়ে পড়েছিল দুটি বিমান। মুহূর্তেই ধসে পড়ে সুউচ্চ টাওয়ার দুটি। এতে তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হন আরও কয়েক হাজার।
ব্রুকলিনের বাসিন্দা থেরাপিস্ট সু গার্সিয়া কাছ থেকেই দেখেছিলেন বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার এই ঘটনা। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর। হামলার পরপর প্রাণভয়ে দৌড়ে বাসায় পালিয়ে এসেছিলেন তিনি। মেট্রোরেল তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৬ বছর আগের সেই স্মৃতি মনে করতে চান না গার্সিয়া। কিন্তু টিভিতে ওই হামলার প্রসঙ্গ এলেই তাঁর স্মৃতিতে ভেসে ওঠে রোমহর্ষ সেই দৃশ্য। যখন কোনো বিমান ওড়ার শব্দ শোনেন, তখনই তাঁর চোখে ভেসে ওঠে টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার দৃশ্য।
২০০১ সালের হামলার পর থেকে নিউইয়র্কের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তখন থেকে শহরের নিজস্ব সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট আছে। এর সদস্য বর্তমানে দুই হাজার। এ ছাড়া ৩৮ হাজার পুলিশ সদস্য এবং পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা নেটওয়ার্ক দিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থার দেখভাল করা হয়।
এত নিরাপত্তা উদ্যোগের পরও আতঙ্ক কমছে না। ২০১০ সালে বিস্ফোরকবোঝাই একটি গাড়ি পাওয়া যায় সড়কে। হামলার উদ্দেশ্যে সেটি রাখা হয়েছিল বলে সন্দেহ। গত মে মাসে মানসিকভাবে অসুস্থ সাবেক এক সেনাসদস্য পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেন। এতে আহত হয় ২৩ জন এবং ১ পর্যটক নিহত হন।
নিউইয়র্কের বাসিন্দা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টিম ল্যামবার্ট জানান, শহরে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি এখন স্বাভাবিক জীবনের অংশ হয়ে গেছে। বাসিন্দারাও তা মেনে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি এতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না। কিন্তু এটি এখন বাস্তবতা। বিশ্ব পাল্টে যাচ্ছে আর সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি এই পরিবর্তনেরই অংশ।’
টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপের ওপর নির্মিত মেমোরিয়াল এখন কেবল নিউইয়র্কবাসীর নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য শোক প্রকাশ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আর নাইন-ইলেভেনের বার্ষিকীর দিনটি আক্রান্ত ব্যক্তি, তাঁদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য সবচেয়ে শোক ও আতঙ্কের একটি দিন।