আজ আখেরী জুম্মা- খোদার প্রেম দিদার লাভের সময়
কারী বেলালী : আজ আখেরী জুম্মা- খোদার প্রেম দিদার লাভের সময়-‘আল্লাহ পরম প্রিয়তম মোর আল্লাহ তো দূরে নয়/নিত্য আমারে জড়াইয়া থাকে পরম সে প্রেমময়’- কবি নজরুল ইসলাম। মুমিন বান্দা এ মাসে কুড়িয়েছেন রাশি রাশি রহমত। অর্জন করেছেন অফুরন্ত মাগফেরাত। কানায় কানায় ভরে উঠেছে তার ক্ষমার ডালি। এখন তিনি প্রতি মুহূর্তেই টের পাচ্ছেন- আল্লাহ বান্দার শাহরগের চেয়ে নিকটতম। তিনি পরম প্রেমময়। বান্দাকে তিনি জড়িয়ে থাকেন সারাক্ষণ।
এসব মুমিন বান্দার আজ কোরআন জ্ঞানপ্রাপ্তির দিবস। আজকের দিনটি শুক্রবার হওয়াতে শেষ জুমার বরকতময় দোয়া কবুলের মুহূর্তটিও পেয়ে যাবেন তারা। বাংলার মুমিন মুসলমান আজ সুবহে সাদিক থেকেই তাদের দিনের রুটিন সাজিয়ে নেবে। কে কোথায় সালাত পড়তে যাবে। কিভাবে কোন মসজিদে খতমে তারাবিহর শেষে আজ কিয়ামুল লাইলে অংশ নেয়া যাবে। শহরে-নগরে-বন্দরে আজ মুমিন মুসল্লির ঢেউ আর ঢেউ শুরু হবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। ধনী-গরিব, ফকির-মিসকিন, জাকাতদাতা এবং জাকাত গ্রহীতা একই কাতারে দাঁড়িয়ে আখেরি জুমায় খোদার দরবারে দুই নয়নের অশ্র“ ঝরাবে। হায়! মানব অশ্র“র কোনো ভিন্ন রঙ নেই। ভিন্ন উদ্দেশ্যও নেই। একই উদ্দেশ্যে খোদার দরবারে ক্ষমার জন্য মসজিদে মসজিদে ঝরাবে অশ্রুধারা। আজ সেই দিন, যেদিন আঁখির জলের ব্যথিতধারায় বহু মুমিন হয়তো অশেষ পুণ্য অর্জন করবেন। দোয়া কবুলের সুবর্ণ ক্ষণ পেয়ে হয়তো সোনালি মানুষ বনে যাবেন।
আল্লাহ এই মানব গ্রহ সৃষ্টি করেছেন মানব সৃষ্টির বহু বহু বছর আগে। এই গ্রহ যখন ফুলে-ফলে, শস্য-বৃক্ষে, নদী-জলে প্রবহমান হয়েছে, তখন খোদা তার প্রেমময় বান্দাকে যেন বাদশার মর্যাদায় সিংহাসনে বসিয়ে পৃথিবী নামক রাজত্ব দান করেছেন। আর তাকে রুহুময়, জ্ঞানময়, শবেকদরময় কিতাব কোরআন দান করেছেন। পৃথিবীতে যত কিতাবধারী নবী এ পর্যন্ত এসেছেন, সবাই তারা খোদারই মনোনয়নপ্রাপ্ত ছিলেন। খোদার মনোনয়নে খোদারই কিতাবের গুণগান তারা জগতের আদি উম্মতকে শুনিয়ে গেছেন। যারা কল্যাণকামী উম্মত তারা নিজেরা সিয়াম, সালাত, ইতিকাফ করে কল্যাণের উপযুক্ত বনেছেন।
যারা উপযুক্ত হতে পারেননি তাদের জন্যই চির জাহান্নাম নিযুক্ত রয়েছে। ধর্মের এই যে চির অক্ষত অভিন্ন ধারা সমান গতিতে বয়ে চলেছে, এই গতিরই দ্রুততম প্রযুক্তিময় রকেট সময়টি হচ্ছে শবেকদর, যা মুহাম্মদ (সা.) গাড়ো হেরায় পনেরো বছর ইতিকাফ সাধনা করে সিয়ামের মাসে অর্জন করেছিলেন। এই অর্জনের মুহূর্তকে জীবনভর তিনি স্মরণে রেখেছেন। তিনি শবেকদর উদযাপন করেছেন পারিবারিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিবি, বাচ্চা, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সদলবলে তিনি শবেকদর পালন করতেন। অর্থাৎ শবেকদর প্রাপ্তির মুহূর্ত থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। এ ছিল তার রেওয়াজ পালনের উদ্দেশ্য। তিনি চাইতেন সব মানুষ এই কদর প্রাপ্তির বিশেষ মুহূর্তটি অর্জন করে কামেল ইনসানে পরিণত হোক। কেননা তিনি তো ছিলেন মানবজাতির জন্য রহমতের নবী, দয়ার নবী। মানুষের নাজাতের জন্য আখেরাতে তিনিই মহান আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন।
আখেরি জুমার আজকের দিবসটিকে পৃথিবীর লাখো লাখো মুসলমান আল কুদস দিবস হিসেবেও পালন করবে। কেননা মহান আল্লাহর ঘর বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে মুসলমানদের বঞ্চিত করা হচ্ছে দীর্ঘ বছর থেকে। বহু আদি নবী-রাসূল যাদের সব মুসলমান মান্য করে এবং স্মরণ করে, তাদের ইবাদতের পদচিহ্ন এবং সিজদার দাগ এখনও মুছে যায়নি এই বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ থেকে। যেহেতু মুসলমান বিশ্বাস করে সব আসমানি কিতাবে, সব নবী-রাসূলে, তাই তারা এই বরকতময়ী মসজিদে সিজদা দিতে ব্যাকুল। অবিশ্বাসীরা এই বরকতময় নবী (সা.)-এর মিরাজ-স্মরণ মসজিদটি দখল করে রেখেছে অন্যায়ভাবে।
হ্যাঁ, সিজদাই সায়েমের সিয়ামের ভরসা। যে যত সিজদা দিয়েছেন বা কদর রাতে দিতে পারবেন তিনিই খোদার কবুলিয়ত অর্জন করবেন। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে সিজদা যেন হয় বিনয়, বিগলিতভাবে। বিনয়ীজন মানুষের মন যেমন কেড়ে নেন দ্রুত, তেমনি বিনয়ী আবেদ অর্থাৎ ইবাদতকারীও আল্লাহর ক্ষমার যোগ্যতা অর্জন করবেন দ্রুত। হে প্রিয় সায়েম বন্ধুগণ, জানি না কিভাবে কোন ভাষায় খোদার প্রেম-ক্ষমার তরিকা বাতলাবো আপনাদের কাছে। আজ মন বিগলিত হওয়ার যে যা কিছু জানেন তাই খোদার দিকে মনোনিবেশ করে একান্ত মনে জপতে থাকুন। কেননা তিনি তো জানেন তাঁর প্রেমিক তাঁর কাছে কী প্রার্থনা করছে।
প্রেমিক বান্দার আজ শুধু বিনয়ী প্রেম বাক্য জপ করা জরুরি। কদর রাতের দেখা পেতে লাগতে পারে এক সিয়াম, দুই সিয়াম বা অনেক সিয়াম সময়। হেরার জ্ঞানময় মিলন সময় ঘনিয়ে এলে খোদার পক্ষ থেকেই ‘সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজরি’ অর্জন হবে। সূরা কদরের শেষ আয়াত। ভাবার্থ- এ এক অনাবিল শান্তি। যা চির ভোর পর্যন্ত বিরাজ করতে থাকে। হে সায়েম সূরা কদরটি আজ বারবার পড়ুন। অর্থগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মন নিয়ে আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন। যদি সিজদায় পড়ে আত্মা উন্মুক্ত হয়ে প্রসারিত হয়, তবেই শবেকদর চির রুহুময় হয়ে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম পুণ্যের জোগান দেবে আপনার আত্মায়।