আগে জেলে পরে খালেদা জিয়ার বিদেশ-
শফিক রহমান : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় নিতে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটামের প্রেক্ষাপটে নতুন করে আইন ঘাটাঘাটি চলছে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয় গুলোতে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এজন্য ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছেন। সংশ্লিষ্টরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে হলে নতুন করে আবেদন করতে হবে এবং তাকে আগে জেলে যেতে হবে। এ পরিবর্তনের পর খালেদা জিয়াকে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়েই বিদেশ যাওয়ার আবেদন করতে হবে।
খালেদা জিয়াকে এমন পদ্ধতি দেখিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আগে পূর্বের আদেশ বাতিল হতে হবে। আর ওই আদেশ বাতিল হয়ে গেলে তিনি (খালেদা জিয়া) বাইরে থাকতে পারবেন না। তাকে জেলে গিয়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দী হন। ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর দফায় দফার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে গত ২২ সেপ্টেম্বর সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। সবশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে খালেদার চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড শর্ত যুক্তভাবে স্থগিত করা হয়। পরিবর্তন করতে হলে খালেদা জিয়ার শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করে সহাবস্থান আনতে হবে। এরপর অন্য বিবেচনা করা যাবে তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে।
তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন রয়েছে। আদালত খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়েছেন। এখন আইনের পরিবর্তন না করে তাকে মুক্তি দেওয়া যাবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে হলে, তার শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করতে হবে।
এর আগে, গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। পরে আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টি কাগজপত্রের আলোকে ভেবে দেখবে।
পরদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনো আবেদন তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। আর বিদেশের চিকিৎসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই, এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
এ ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক ধরনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ঠেলাঠেলি নেই। আমি পরিষ্কার করেছি, যদি কোনো আবেদন আসে সে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। এটিই আইন। আইন মোতাবেক সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এর মধ্যে ঠেলাঠেলির কী দেখলেন আপনারা?
তবে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ৫ সেপ্টেম্বরেই বেগম জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার আবেদন করা আছে। সেই আবেদনটি পরে তিনি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।