• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘আইন নীতিমালা’য় গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে’


প্রকাশিত: ৯:১৪ পিএম, ২ মে ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪০ বার

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের হয়রানির ধরনে নতুনত্ব আনা হয়েছে। সাংবাদিকদের হত্যা, নির্যাতনের পাশাপাশি বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন বন্ধের মাধ্যমে চাপে ফেলা হচ্ছে গণমাধ্যমকে।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আজ বৃহস্পতিবার টিআইবি কার্যালয়ে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় এসব মতামত উঠে এসেছে। ‘মিডিয়া ডিফেন্স ফর ক্রাইসিস রিপোর্টিং’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজক ছিল জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। আগামীকাল শুক্রবার সারা বিশ্বে পালিত হবে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ বা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস।

আলোচনায় বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকার কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টসের (আইএফজে) ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবিনা ইন্দেরজিৎ তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে রূপ নিচ্ছে। এই অঞ্চলে এখন যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে, তা ২০ বছরে আগের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। এসব দেশে অনেক মূলধারার গণমাধ্যম আয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করত। যেসব গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে, তাদের বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

শ্রীলঙ্কার মিডিয়া ল ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ভিরাঙ্গানা হেরাথ শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতিতে গণমাধ্যমের অধিকার হরণ হচ্ছে। ২০১৫ সালের পর থেকে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা কমেছে, তবে আইন ব্যবহার করে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের চাপে রাখা হচ্ছে।

মালদ্বীপ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সদস্য মোহামেদ জুনায়েদ সালিম বলেন, জনগণ দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণের জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করে। গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞাপনের জন্য টাকা দেয় সীমিত কিছু প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সরকার সেসব গণমাধ্যমের জন্য বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে যারা আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে ‘ইনসিকিউরিটি (অনিরাপত্তা)’ তৈরি করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামের বদল হলেও ধারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই রয়েছে। এটি গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্যই করা হয়েছে।

ভারতের ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের লিটিগেশন কাউন্সেল রাধিকা রয় বলেন, সরকার তার জন্য নেতিবাচক সংবাদ গ্রহণ করতে চায় না। সরকারের পক্ষে সংবাদ না হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।

এএফপির বাংলাদেশ ব্যুরোপ্রধান শফিকুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউনেসকোর নয়াদিল্লি অফিসের দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা হেজেকিল ডলামিনি, ইস্ট মোজোর ভারতের মেঘালয়ের রাজ্য প্রতিনিধি প্রিন্সেস গিরি রাশির ও জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ভুটানের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য সাঙ্গে রাবতেন। অনুষ্ঠানে ইউনেসকো ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট প্রণীত ‘সেফটি অব জার্নালিস্ট ইন সাউথ এশিয়া রিজিয়ন’ শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

১৯৯১ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩ মে তারিখকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।