অসাংবাদিক সাংবাদিক হয়ে গেছে-এরা সবাই বিক্রি হবার জন্য ফর সেল-আবেদ খান
ডেস্ক রিপোর্টার .ঢাকা : আবেদ খান বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ভুবনে এক গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় নাম। শুধু সাংবাদিকতা নয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও রয়েছে তার সফল পদাচারণা। ১৯৮৪, ১৯৮৬ এবং ১৯৯১ সালে মোট তিনবার বিটিভির ঈদ আনন্দ মেলার উপস্থাপনা করেছেন আবেদ খান ও ড. সানজিদা আখতার। দীর্ঘ দুই যুগ পর এবারের আনন্দ মেলার উপস্থাপক হিসেবে বিটিভির পর্দায় হাজির হতে যাচ্ছেন আবেদ খান। আনন্দ মেলা, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা নানান প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।
দেখা হওয়ার শুরুতেই আবেদ খান হাসিমুখে বলে ওঠলেন, কি খবর তোমাদের?
প্রশ্ন : ভালো, আপনি ভালো আছেন তো?
আবেদ খান : হ্যাঁ, তবে আনন্দ মেলা নিয়ে বেশ ব্যস্ততার মধ্যে আছি।
প্রশ্ন : আপনি তো প্রায় দুই যুগ পর এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছেন। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে আনন্দ মেলার উপস্থাপক হিসেবে আপনাকে দেখা গিয়েছিলোৃ
আবেদ খান : [হাসি দিয়ে] এরই মাঝে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল! আমি এবং আমার স্ত্রী দু’জন মিলে আনন্দ মেলার তিনটি পর্ব উপস্থাপনা করেছিলাম। এবার আমি একাই উপস্থাপনা করছি। আমি যখন অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতাম তখন তো আর দেশে অন্য কোনো টিভি চ্যানেল ছিল না। একটাই পর্দা ছিলো। আনন্দ মেলা তখন ছিলো না। তখন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এটাকে একটা ঈদের অনুষ্ঠান হিসেবে করতেন। তো এটা জনপ্রিয় হবার পর তিনি ভাবলেন এটাকে ঈদের আনন্দ মেলা হিসেবে নিয়মিত করা যায়। এরপর থেকেই ঈদের আনন্দ মেলার প্রচলন শুরু হয়। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ যখন করেন তখন তো নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা ছিলো, এত আধুনিক টেকনোলজি ছিলো না, যন্ত্রপাতি ছিলো না। তারপরেও তিনি তার মত চেষ্টা করেছেন।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত তো অনেকেই আনন্দ মেলার উপস্থাপনা করেছেন, তাদের কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কি এবারের পর্বটা করতে গিয়েৃ
আবেদ খান : আমাদের একটা গ্রæপ আছে জুয়েল আইচ, আনিসুল হক, আব্দুন নূর তুষার, লুৎফর রহমান রিটন, হানিফ সংকেত সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আফজাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এরা বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছেন। এদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, আনিসুল হক, জুয়েল আইচ এবারের পর্বে পারফর্মও করেছেন। আমাদের আন্তরিকতার অভাব ছিলো না।
প্রশ্ন : এবারের আনন্দ মেলায় কি কোনো ধরনের পরিবর্তন আসছেৃ
আবেদ খান : এবার ফরম্যাটটাকে একটু অন্যরকম করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : দীর্ঘ বছর অনুষ্ঠানটি বন্ধ ছিলো। আবার কয়েক বছর অনুষ্ঠানটি খুবই নিম্ন মানের করে প্রচার করা হয়েছিলৃএর কারণে অনুষ্ঠানটি তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। আপনার মাধ্যমে কি সেই জনপ্রিয়তা ফিরে আসার সম্ভাবনা আছেৃ
আবেদ খান : এটা কি ফিরে আসা কিনা জানি না। তবে এটাকে নতুন করে আবার দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রশ্ন : সাংবাদিক হিসেবে আপনার একটি ইমেজ আছে। সেই ইমেজ থেকে বের হয়ে টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা এই বয়সে। নিশ্চয়ই আপনার বন্ধুরা এ নিয়ে কথা বলেছেনৃ
আবেদ খান : অনেকেই কিন্তু বলেছে তোমার এই বয়সে আনন্দ মেলা করার দরকার কি? এটা তো তোমার না। সবাই হয়তো বলবে যে কি দরকার ছিলো। কিন্তু আনন্দ মেলার প্রতি আমার যে আবেগ আর ভালোবাসা আছে তা তো অ¯^ীকার করতে পারি না।
প্রশ্ন : তার মানে আপনি আবেগের কারণেই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন?
আবেদ খান : আবেগের জায়গা থেকে করেছি। আমার স্মৃতিচারণার জায়গা থেকে করেছি। একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার সংযুক্তির কারণে করেছি। আমি এক সময় বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সহসভাপতি ছিলাম আবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও ছিলাম। কাজেই শিল্পীদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক রয়েছে। আবেগের চেয়েও একটা তাগিদ কাজ করেছে আমার মাঝে। তাগিদটা হচ্ছে এখন বিটিভির যে মহাপরিচালক কবি আসাদ মান্নান সে আমার খুব স্নেহভাজন। সে আমাকে বলল আপনি ঈদের অনুষ্ঠানটি একটু করে দেন। আমি বললাম যে, আমি সাহায্য করবো। কিন্তু সবাই বলল যে, আপনি যদি দাঁড়ান তাহলে খুব ভালো হয়। তাহলে আনন্দ মেলার আমেজটা পাওয়া যায়। আমি এ আনন্দ মেলাটা করতাম না যদি না আসাদ মান্না আমাকে অনুরোধ না করতো। সে আমাকে এ অনুষ্ঠানটি করতে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। তার পরিপূর্ণ দৃষ্টিপাত ছিলো এ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের প্রযোজক মাহফুজা আক্তার অক্লান্ত শ্রম দিয়েছে। আমি এর পর আফজাল, তুষার, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, জুয়েল আইচ, হানিফ সংকেত সবার সঙ্গে কথা বললাম তখন সবাই বলল যে করেন। আমরা আপনাকে সহযোগিতা করবো।
প্রশ্ন : তার মানে সবাই আপনাকে সাহস জুগিয়েছেৃ
আবেদ খান : আমাদের এখানে আমরা যারা উপস্থাপনা করি সব সময় আমাদের মধ্যে একটা সহজ এবং আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। এখনো আছে। আমরা সব কাজ একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করে করি। তাদের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ হয়তো থাকেনি। কিন্তু তারা আমাকে নানা ভাবে সাপোর্ট করেছে। এবং সাহস বাড়িয়েছে। আর এবারের আনন্দ মেলাটা আমরা করেছি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে। ফলে অনেকে সময় ¯^ল্পতার কারণে হাজির হতে পারেনি। যেমন একটা উদাহারণ দেই। আমার স্নেহভাজন নচিকেতা। তাকে আমি বললাম আনন্দ মেলার জন্য একটা গান করতে হবে সে এক ফোনেই চলে এসেছে। এবং বিনা পারিশ্রমিকে আমার জন্য কাজটা করে দিয়েছে।
প্রশ্ন : নচিকেতা ছাড়াও তো বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনেক তারকাই এবারের আনন্দ মেলায় থাকছে বলে আমরা জানিৃ
আবেদ খান : হ্যাঁ, যেমন আমি বাপ্পাকে বললাম আমাকে একটা গান করে দিতে হবে ও বলল, ‘হ্যাঁ কাকু আমি করে দেবো।’ জয়া, ফেরদৌস, আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিৎ, শিবলী নিপা এরা সবাই আনন্দ মেলার জন্য কাজ করেছে। আমার প্রতি সম্মান রেখে অনুষ্ঠানটিকে পরিপূর্ণ করতে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সদস্যদেরও আমরা আনন্দ মেলায় নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : তার মানে এবারের আনন্দ মেলাটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ হতে যাচ্ছেৃ
আবেদ খান : সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্ঠা করেছি। আরেকটা জিনিস আমি করার চেষ্টা করেছি যে আনন্দ মেলাটাকে শুধু মাত্র বিনোদনের মধ্যে না রেখে, এর মধ্যে দিয়ে কিছু উপাদান, যেটা সাংস্কৃতিক উপাদান, কিছু সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা ছিলো। আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপে¶িতে সেটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মধ্যবিত্তের যে ¯^প্ন, আকাক্সখা সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের যে ফেসবুক ক্রাইসিস সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমরা যদি এখানে শুধু বাণী দিতে থাকি তাহলে আনন্দ মেলা হবে না।
প্রশ্ন : আনন্দ মেলায় আনন্দ আছে তোৃ
আবেদ খান : আনন্দ মেলার আনন্দ আছে, প্রত্যাশা আছে ¯^প্ন আছে, একই সঙ্গে এর মাঝে কিছু কিছু কথা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু মানুষের ¯^প্ন, কষ্টের জায়গা, তার কথা ঢুকিয়ে দেওয়া আছে। একটা বিষয় হচ্ছে আমার জীবনের শেষ আনন্দ মেলা এটা। তাই এবারের আনন্দ মেলাকে আমি একটু আলাদা করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : শুধুমাত্র উপস্থাপনা করেই জনপ্রিয় হওয়া যায় আপনি কি এর সঙ্গে এক মতৃ
আবেদ খান : আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, ফজলে লোহানী তার সফল উদাহারণ। উপস্থাপনার পরিচিতিটাই তো বড় পরিচিতি হতো একটা সময়। এখন তো উপস্থাপক হচ্ছে প্রেজেন্টার। আমাদের সময়ে যে উপস্থাপনা ছিলো সেটা হচ্ছে পুরো অনুষ্ঠানটাকে মস্তিষ্কের ভেতর ধারণ করে সেটা নিপুন মালাকারের মত মালা গাঁথা। কোনটার পর কোনটা আসবে কিভাবে আসবে। কিভাবে কথাগুলো বলতে হবে। এলোমেলো ফুল সাজানো যায় কিন্তু তাতে সেই সুদৃশ্য মালাটি হয় না। একজন উপস্থাপক হচ্ছেন দ¶ মালাকার।
প্রশ্ন : এই বয়সে এ ধরনের অনুষ্ঠান করতে ক্লান্তিবোধ করেননিৃ
আবেদ খান : আমার বয়স এখন ৭০। এ বয়সে এ ধরনের একটা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়া আমার জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। আমি রাজনীতি সচেতন একজন ব্যক্তি, আমি যেখানে কলাম লিখি, আমি যেখানে সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত, এবং সেই সাংবাদিকার পরিধি আলাদা তার জগৎ আলাদা তারপর বিনোদনের জগৎ আলাদা। এই দুটোকে মেলানো বড়ই কঠিন।
প্রশ্ন : তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন যে আপনার যে রেগুলার ইমেজ সেটাকে আপনি ভেঙেছেনৃ
আবেদ খান : এই ইমেজ ভাঙা যেমন কষ্টের। তেমনি একটি ইমেজে থেকে বের হয়ে আরেকটি ইমেজ তৈরি করাও কঠিন। আমি দুটোকে সমš^য় করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : এ অনুষ্ঠান দেখে লোকে যদি আপনাকে গাল মন্দ করেৃ
আবেদ খান : লোকে আমাকে গাল মন্দ করবে, করুক। তারপরও সে দেখুক। তারপর সে কথা বলুক। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, কেশে আমার পাক ধরেছে বটে, উহার উপর নজর এতো কেনো, পাড়ার যত ছেলে এবং বুড়ো, সবার আমি এক বয়সী যেনো। আমি বলতে চাই যে শিল্পী থাকে, লেখক থাকে, যে সাংবাদিক থাকে, যে নতুন কিছু সৃজনশীলতার মাঝে থাকে, তার কিন্তু কোনো বয়স থাকে না। সে যে কোন বয়সে সৃজনশীলতার কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। আর ইমেজটা কিন্তু অচলায়তন না। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু ৭০ বছর বয়সেও মঞ্চে নেচেছেন।
প্রশ্ন : আমরা এবার একটু আনন্দ মেলা থেকে বের হতে চাই। জানতে চাই আপনার সাংবাদিকতার জীবন নিয়ে। বাজারে একটা কথা দীর্ঘ দিন ধরেই প্রচলিত আছে যে আপনার সম্পাদনায় দৈনিক জাগরণ নামে নতুন একটি পত্রিকা প্রকাশ হতে যাচ্ছে। কবে নাগাদ পত্রিকাটির কাজ শুরু করবেনৃ
আবেদ খান : আমার তো জাগরণ নামে একটা পত্রিকা বের করার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু আমার এখন সবচে বড় যে ¯^প্ন সেটা হচ্ছে মিডিয়া কেন্দ্রিক একটা ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা।
প্রশ্ন : এটাও তো আপনার দীর্ঘদিনের একটা ¯^প্নৃ
আবেদ খান : হ্যাঁ, আমি দীর্ঘ দিন ধরেই চেষ্টা ও পরিকল্পনা করে যাচ্ছি প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করতে। এই মিডিয়া ইন্সটিটিউটটা হলে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকতা, মিডিয়ারর সঙ্গে সম্পর্ক, এবং মিডিয়ার সঙ্গে নিজেকে যে পরিপূর্ণভাবে যুক্ত করা সেটা তারা শিখতে পারবে। এটা খুবই দরকার। আমরা যারা ষাটের দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম, তারা সত্তর দশক আশির দশকের সাংবাদিকতা দেখেছি। সেই সাংবাদিকতা এখন আর নেই। এখন সবাই আত্মকেন্দ্রিক। এরা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এদের ব্যপটারটা হচ্ছে তারা তাদের ব্যক্তিত্ব্য, মেধা, মস্তিষ্ককে কারো কাছে বিক্রি করে দেয়। আমাদের এখানকার মিডিয়া এখন বিত্তশালী পেশীবহুল লোক জনের হাতের মুঠোয় চলে যাচ্ছে। এ জায়গা থেকে বের হতে না পারলে একটার পর একটা নতুন প্রজন্ম কিন্তু নষ্ট হতে থাকবে। আমি এ কারণেই ইন্সটিটিউটটা করতে চাই যেন নতুন প্রজন্ম সুস্থ সুন্দর সাংবাদিকতা শিখতে পারে। এবং তারা চোখটা মেলে দেখবে যে কোনটা ভালো কোনটা কালো।
প্রশ্ন : কিন্তু কবে নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবে
আবেদ খান : মারা যাবার আগে করবোৃ[বলেই হাসলেন]
প্রশ্ন : আমরা চাই আপনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। এবং আপনার স্বপ্ন পুরণ হক। আর পত্রিকাটি কি খুব শিগগিরই প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা আছে
আবেদ খান : এটা আসলে নির্ভর করে অর্থলগ্নি কারির উপর।
প্রশ্ন : এমন একটা কথা শোনা যাচ্ছে যে আপনার নতুন পত্রিকায় নাকি মুসা বিন শমসের ইনভেস্ট করছেন
আবেদ খান : তার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নাই। সে যদি আমাকে ফিফটি মিলিয়ন ডলার দেয় পার মান্থ তাও আমি যাবো না। আমি কোনো খারাপ মানুষের সঙ্গে থাকবো না। যে কারণে আমার হয় না। আমি নষ্ট মানুষের স্পর্শে থাকতে রাজি না। তাহলে তো আমি কালের কণ্ঠেই থাকতে পারতাম। আমাকে যখন বেতনের প্রস্তাব দিলো দশ লাখ টাকা। আমাকে সমস্ত সব কিছু দিলো। জায়গা জমি, বাড়ি ঘর কি নেই। এখন অনেকেই আছে, লেখক হওয়ার পরও লোভের কাছে নিজেকে সপে দিয়েছে। অসাংবাদিক সাংবাদিক হয়ে গেছে। এগুলোই তো করে তারা। এরা সবাই বিক্রি হবার জন্য ফর সেল একটা বিজ্ঞাপন পিঠের মাঝে ঝুলিয়ে রেখেছে।
প্রশ্ন : নতুন প্রজন্মের উপস্থাপকদের সম্পর্কে জানতে চাইৃএখন যারা টকশো সেলিব্রেটি আছেন
আবেদ খান : বাংলাদেশে কিন্তু এই টকশোটা আমার হাত দিয়েই তৈরি। একুশে টেলিভিশনে প্রথম আমি টকশো শুরু করেছিলাম। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরাও কিন্তু আমার তৈরি। এদের কিন্তু আমরা উপস্থাপক বলবো না। টকশোটাকে চালানো এক জিনিস। বিনোদনের অনুষ্ঠান যখন করবো তখন কিন্তু এক ধরনের উপস্থাপনা আবার টকশো কিন্তু আলাদা। তার মেজাজই ভিন্ন। একজনকে খোঁচা মেরে কিন্তু টকশো হয় না।
প্রশ্ন : টকশোর নামে খোঁচা মারার চর্চাটাই এখন আমরা বেশি দেখি
আবেদ খান : এটা করে টকশোটাকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। তার ফলে মানুষ ভয় পায়। আমি বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের একটা কথা বলি যে দেখ, তোমার হাতে যখন একটা ছুড়ি আছে, সেই ছুড়ি দয়ে মানুষের প্রাণ নিতে পারো আবার প্রাণ বাঁচাতেও পারো। আসলে ছুড়িটা কিভাবে ব্যবহার হবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। মাইক্রোফোনটাও তাই। কলমও তাই।
প্রশ্ন : আপনি মূল্যবোধের জায়গার কথা বলছেনৃ
আবেদ খান : হ্যাঁ, মূল্যবোধটা, যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আমার কমিটমেন্ট আছে, যেহেতু আমি বাঙালি জাতীয়তা বোধে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার কমিটমেন্ট আছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, নারী অধিকার বিষয়ে আমার কমিটমেন্ট আছে। এই কমিটমেন্টগুলো আমার আজন্ম। আমি কখনো লোভের কাছে পরাস্থ হয়নি। অনেক বিপর্যয়ের মাঝে থেকেও আমার দিন কেটেছে।
প্রশ্ন : কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় কমিটমেন্ট ঠিক রাখা তো কঠিন এর জন্য মূল্য দিতে হয়?
আবেদ খান : এই জায়গায় আমার একটা অহংকার আছে। আমার উপার্জনটা অনেক কষ্টসাধ্য। আমার যদি পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকতো তাহলে হয়তো আমি বাঁচতেই পারতাম না। আমার যে উত্তরার বাড়িটা এটা তো করার কথা ছিলো না। এটা আমার পারিবারিক জমি ছিলো। ছোট্ট একটা কটেজ করে রেখেছিলাম। কিন্তু অভাবের কারণে জমিটা ডেভোলাপারদের দিয়ে দিতে হলো। আমার স্ত্রী আমাকে কোনো দিন বলেননি তুমি চাকরি এভাবে ছেড়ো না কথায় কথায়। আমাদের তুমি অভুক্ত রেখো না। বহুদিন গেছে না খেয়ে থেকেছি । বাস ভাড়া ছিলো না আমার কাছে। আমি তখন হেঁটে চলা ফেরা করেছি। গৌড়ানন্দ কবি লিখতাম যখন, তখন ঐটুকু লিখে যে টাকাটা পাওয়া যেত সেটা দিয়েই আমাদের চলতো। আমার স্ত্রী কোনো দিন বলেনি যে আমাদের আর কত কষ্ট দিবে। এগুলো হচ্ছে আমার সঞ্চয়। পেশাগত জীবনে আমি এত সুখি এ কারণে। কোনো দিন নিজের নৈতিকতার ¶েত্রে ছাড় দেইনি। আমার হয়তো মৃত্যু হবে কিছু দিন পরে। কিন্তু তোমরা তো থাকবে। তোমরা বলতে পারবে যে, না আমি তাকে অন্যায়
করতে দেখিনি।
প্রশ্ন : আপনার স্ট্রাগলের গল্প শুনে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে পারবে একটু বিটিভি প্রসঙ্গে জানতে চাই। বিটিভির অনুষ্ঠানের মানহীনতার ইতিহাস কি মুছে ফেলার মত নয়। আপনি তো দীর্ঘদিন যাবৎ এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত আছেন
আবেদ খান : এটা চাইলেই কেউ হুট করে পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ এতে দীর্ঘদিনের একটা ক্লেদ জমে আছে বিভিন্ন আমলের।